ন্যায় মতে ব্যপ্তি কী? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন স্তর বা উপায় বা গ্রহ গুলো কি কি?

ন্যায় দর্শন

 

ন্যায় মতে ব্যপ্তি কী? ব্যাপ্তি কয় প্রকার
ও কি কি? ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন স্তর বা উপায় বা গ্রহ গুলো কি কি?

 

ব্যাপ্তি :
“ব্যাপ্তি” কথার অর্থ হল ব্যাপকতা বা বিস্তৃতি। ন্যায় মতে “ব্যাপ্তি”
জ্ঞান হলো অনুমিতির পরিহার্য শর্ত‌।

 


            তাই প্রখ্যাত নৈয়ায়িক
অন্নংভট্ট তাঁর “তর্কসংগ্রহ” গ্রন্থে ব্যাপ্তির লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন-

” যত্র ধূমঃ তত্র অগ্নি ইতি সাহচার্য
নিয়মঃ ব্যাপ্তিঃ”- অর্থাৎ যেখানে ধুম সেখানেই বহ্ণি। এই সাহচার্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।
সুতরাং এই লক্ষণের ভিত্তিতে সাধারণভাবে বলা যায় হেতু ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ত অনৌপধিক
অব্যভিচারী সহচার সম্পর্ককেই ব্যপ্তি বলে।

যেমন- পর্বতে ধুম দেখে অনুমান করি পর্বতটিতে
বহ্নি আছে। এখানে পর্বত হল “পক্ষ পদ”, ধুম হল “হেতু পদ”,
“বহ্নি” হল “সাধ্যপদ”। এর দ্বারা বোঝায় অনুমানের মূল ভিত্তি হল
ব্যাপ্তি জ্ঞান।

 

শ্রেণীবিভাগ: ন্যায়
মতে ব্যাপ্তি দুই প্রকার- সমব্যাপ্তি ও বিষম ব্যাপ্তি।

 

সমব্যাপ্তি:  যে ব্যপ্তিতে ব্যাপ্য ও ব্যাপকের সম্বন্ধ
সমান তাকে সমব্যপ্তি বলে।

যেমন- “সকল বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব
হয় মানুষ”- এখানে বুদ্ধি বৃত্তি সম্পন্ন জীব বলতে যাদের বোঝায়,মানুষ বলতেও সেই
জীবকেই বোঝায় সেজন্য এদের মধ্যে সমব্যাপ্তির সম্বন্ধ লক্ষ্য করা যায়।

 

বিষম ব্যাপ্তি: যে
ব্যপ্তিতে ব্যাপ্য ও ব্যাপকের
  সম্বন্ধ অসমান তাকে
বিষম ব্যাপ্তি বলে।

যেমন- “সকল মানুষ হয় মরণশীল প্রাণী”-
এখানে মানুষ বলতে মরণশীল প্রাণীকেই বোঝায় কিন্তু “মরণশীল প্রাণী” বলতে মানুষ
ছাড়াও অন্য প্রাণীদেরও বোঝায় কাজেই এখানে মরণশীল পদটির ব্যাপকতা যেহেতু বেশি তাই
এদের মধ্যে বিষম ব্যাপ্তির সম্বন্ধ আছে বলা যায়।

 

ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার
উপায় বা গ্রহ:

নৈয়ায়িক অন্নংভট্ট এই ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার
দুটি স্তর উল্লেখ করেছেন।যেগুলি হল- অন্বয়, ব্যতিরেক, ব্যভিচারাগ্রহ, উপাধিনিরাস,
তর্ক ও সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ।যেগুলি দৃষ্টান্তসহ নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো-

 

অন্বয়: “অন্বয়”
কথার অর্থ হল মিল বা সাদৃশ্য। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে একত্র উপস্থিতির মিল বা সাদৃশ্য
দেখে তাদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যায়।

যেমন- “যেখানে যেখানে ধোঁয়া থাকে

সেখানে সেখানে আগুন থাকে”

-এখানে ধোঁয়া ও আগুনের একত্র উপস্থিতির মিল
দেখে এদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যায়।

 

ব্যতিরেক:
“ব্যতিরেক” কথার অর্থ হল ব্যতীত বা ছাড়া। তাই দুটি বিষয়ের মধ্যে একত্র
অনুপস্থিতির মিল লক্ষ্য করে তাদের ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যায়।

যেমন- “যেখানে যেখানে আগুন থাকে না সেখানে
সেখানে ধোঁয়া থাকে না”

– এখানে ধোঁয়া ও আগুন এই দুটি বিষয়ের মধ্যে
অনুপস্থিতির মিল থাকায় এদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যায়।

 

ব্যভিচারাগ্রহ:
“ব্যাভিচার” কথার অর্থ হল- বিপরীত দৃষ্টান্ত এবং “আগ্রহ” কথার
অর্থ হল অদর্শন বা না দেখা।একথায় বিপরীত দৃষ্টান্ত না দেখা। তাই দুটি বিষয়ের মধ্যে
একটির উপস্থিতি কিন্তু অন্যটির অনুপস্থিতি থাকা এমন বিপরীত দৃষ্টান্ত যদি না দেখা যায়,
তাহলে তাদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে বলা যায়। যেমন- “ধোঁয়া আছে অথচ আগুন
নেই”

– এমন বিপরীত দৃষ্টান্ত যেহেতু আমরা দেখি
না সেহেতু এর ভিত্তিতে আমরা ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে সম্বন্ধ আছে এটি অনুমান করা যায়।

 

উপাধিনিরাস:
“উপাধি” কথার অর্থ হল শর্ত এবং “নিরাস” কথার অর্থ হল নিরসন। এককথায়
কোনো শর্ত না থাকা। তাই দুটি বিষয়ের সহচার সম্বন্ধের মধ্যে কোনো শর্ত না থাকলে নিশ্চিতভাবে
বলা যায় যে তাদের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে।

যেমন- ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে শর্তহীন সম্বন্ধ
আছে। তাই আগুন ছাড়া ধোঁয়া থাকতে পারে না। তবে সেক্ষেত্রে ধোঁয়া সৃষ্টির একমাত্র
শর্ত হলভিজে জ্বালানি। কিন্তু জ্বলন্ত লৌহ পিন্ডে
  আগুন দেখা যায়।
সেক্ষেত্রে আগুন ও ধোঁয়ার মধ্যে কোনো শর্ত থাকে না। সেজন্য এই সম্বন্ধ হল ব্যাপ্তি
সম্বন্ধ।

 

তর্ক : তর্ক হলো
মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের বিরুদ্ধ বচনকে অসত্য প্রমাণ করে মূল বাক্যের সত্যতা প্রতিষ্ঠার
পদ্ধতি।

যেমন- যখন বলি “সকল বুদ্ধিমান বস্তু
হয় বহ্নিমান”- তখন এই বচনটি সত্য না হলে এর বিরুদ্ধ বচন “কোনো কোনো ধূমপান
বস্তু নয় বহ্নিমান”-
 এটি সত্য হবে। তাহলে
আগুন ছাড়া ধুম সৃষ্টি হয় এটি মানতে হবে। তাহলে এটি কার্যকারণ নিয়ম বিরোধী হবে। সেইজন্য
“সকল ধূমমান বস্তু হয় বহ্নিমান”-এই বচনটি সত্য হবে। এর ফলে ধুম ও বহ্ণির
মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

 

সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ:
ন্যায় মতে “সামান্য” কথার অর্থ হল “জাতি”। তাই নৈয়ায়িকগণ বলেছেন
বিশেষ এর মধ্যে সামান্য বা জাতির যে অলৌকিক প্রত্যক্ষ হয় তাকে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ
বলে।

যেমন – ধুমের মধ্যে সামান্য বা জাতিরূপে
“ধুমত্ব”এবং অগ্নির
  “অগ্নিত্ব”
প্রত্যক্ষ করে ধুম ও অগ্নির যে সর্বকালীন সম্বন্ধ করা হয় তা হল সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ।

 

        এইভাবে ন্যায় দার্শনিকগণ
উক্ত দু’টি স্তরের মাধ্যমে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top