সুশিক্ষকের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Competent Teacher) |

সুশিক্ষকের বৈশিষ্ট্য (Characteristics
of Competent Teacher)

 

শিক্ষক হলেন শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুপ্তপূর্ণ
উপাদান। শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার কাজ সফল হয়না। কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে সুশিক্ষক হওয়া যায়,
এ নিয়ে মনোবিদ, শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদরা বিভিন্ন আলোচনা করে বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের
উল্লেখ করেছেন। একজন সুশিক্ষকের বৈশিষ্ট্যগুলিকে মূলত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—(১)
ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও (২) পেশাগত বৈশিষ্ট্য

 


(১) শিক্ষকের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য
(Individual characteristics of teachers)

(ক)
ব্যক্তিসত্ত্বার সংলক্ষণ :
সুশিক্ষককে আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। আধুনিক
শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর বন্ধু ও সমাজেরও বন্ধু। তার ব্যক্তিত্ব এমনভাবে
সংঘটিত হবে যাতে করে তিনি স্বাভাবিকভাবে ছাত্রদের আকর্ষণ করতে পারেন, শিক্ষার্থীদের
সঙ্গে তিনি স্বার্থকভাবে অভিযোজন করতে পারেন।

(খ)
তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও বিচারশক্তি
: সুশিক্ষকের বুদ্ধি (Intelligence) এবং বিচারশক্তি
(Power of Judgement) সাধারণ যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে বেশি হওয়া দরকার। আধুনিক ধারণা
অনুযায়ী শিশুর আচরণকে মনোবিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিচালনা করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান
কালে নানারকম সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। সেই সমস্যাকে সার্থকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য
শিক্ষকের মানসিক যোগ্যতা থাকা দরকার, যাতে বিদ্যালয়ে উদ্ভুত সমস্ত সমস্যা সমাধানের
জন্য নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে পারেন। মনোবিদদের মতে, সুশিক্ষকের বুদ্ধ্যাঙ্ক
(IQ.) ১২০-র বেশি হওয়া দরকার।

(গ)
দায়িত্ববোধ
: সুশিক্ষকের যথেষ্ট দায়িত্ববোধ থাকা উচিত। সমাজ তার ওপর
গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে ভবিষ্যত নাগরিক গড়ে তোলার। আদর্শ শিক্ষক শিশুর মনে এমন এক
ছাপ রেখে যান যা তার পরবর্তী জীবনে সবরকম আচরণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষক যদি
তার গুরুদায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন না থাকেন তাহলে শিক্ষার্থী কোনোদিনই সুশিক্ষিত হতে
পারবে না।

(ঘ)
প্রগতিশীল চিন্তার স্রষ্টা ও রক্ষক :
সুশিক্ষক যদি আধুনিক ধারার সঙ্গে পরিচিত
না হন, তিনি যদি আধুনিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী না হন, তাহলে তিনি আধুনিক জীবনকেন্দ্রিক
শিক্ষাপরিকল্পনা রচনার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনিই
প্রথম সারিতে পা বাড়াবেন। তবেই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন। তিনি যেমন একদিকে
হবেন আধুনিকতার সৃষ্টিকর্তা, অন্যদিকে তিনিই হবেন আধুনিকতার রক্ষকও। তাই এডওয়ার্ড
খ্রিং বলেছেন—The Work of the teacher is two fold, producing and training it.

(ঙ)
প্রক্ষোভমূলক পরিণমন
: একজন সুশিক্ষকের একটি বড়ো গুণ হল প্রক্ষোভমূলক গুণগুলির
পরিণমন। বিদ্যালয়ে পাঠদান কালে বা কোনো সামাজিক অবস্থাতেই তিনি অল্পে রেগে যাবেন না,
বা অল্পে হতাশও হবেন না। তিনি হবেন আত্মসংযমী, থাকবে চারিত্রিক দৃঢ়তা আর থাকবে বিভিন্ন
প্রতিকূল অবস্থাকে মানিয়ে নেওয়ার মতো মানসিক দৃঢ়তা। এর দ্বারাই তিনি যেমন কোনো ব্যর্থতাকে
সহজে মেনে নিতেও পারবেন, তেমনি আবার কোনো সাফল্যকেও সংযমের সঙ্গে গ্রহণ করবেন।

(চ)
জীবনাদর্শ :
সুশিক্ষকের আরও একটি বড়ো গুণ হল, তিনি উন্নত জীবনাদর্শের
(Ideal of life) অধিকারী হবেন। কৈশোরকালে বা বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীদের একটি চাহিদা
থাকে, যা হল অনুকরণ প্রবণতা। আর শিক্ষক যদি আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হন, কৈশোরের শিক্ষার্থীরাও
সেই শিক্ষককেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হতে হলে শিক্ষকের মধ্যে
দয়া, সততা, সত্যবাদিতা ইত্যাদি গুণ থাকা আবশ্যক। কেবলমাত্র পুঁথিগত শিক্ষার মধ্য দিয়ে
শিক্ষার্থীদের বিমূর্ত নৈতিক ধারণা কখনই গড়ে ওঠা সম্ভব নয়, একমাত্র জীবনের সঙ্গে
প্রত্যক্ষ সংযোগের মাধ্যমেই তা সম্ভব। তাই শিক্ষকের মনের সঙ্গে, জীবনের আদর্শের সঙ্গে
শিশুদের প্রত্যক্ষ সংযোগ হলেই তাদের মধ্যে জীবনাদর্শ গড়ে তোলা সম্ভব।

(ছ) জ্ঞান পিপাসু : আদর্শ শিক্ষকের একটি বৈশিষ্ট্য
হবে তার নতুন নতুন জ্ঞানের পিপাসা (urge for knowledge)। শিক্ষক যদি ভেবে নেন যে তার
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে, অতএব নতুন জ্ঞানলাভের আর কোনো প্রয়োজন নেই, তবে
সেই শিক্ষক কখনই আদর্শ শিক্ষক হতে পারেন না। আদর্শ শিক্ষক আজীবন নতুন জ্ঞান লাভে ব্যাপ্ত
থাকবেন, তবেই তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান আহরণের তৃয়াকে জাগিয়ে তুলতে পারবেন।
আর শিক্ষকের মধ্যেই যদি নতুন জ্ঞান আহরণের আকাঙ্ক্ষা না থাকে, তবে তিনি কখনই শিক্ষার্থীদের
মধ্যেও নতুন জ্ঞান আহরণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রজ্বলিত করতে পারবেন না। তাই শেষে বলা যায়,
যেহেতু জানার কোনো শেষ নেই, তাই আদর্শ শিক্ষক নতুন জ্ঞান লাভের জন্য তপস্যা করবেন।

(জ)
রসজ্ঞান
: শ্রেণিশিখনের কাজকে শিক্ষার্থীদের কাছে আরও মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য
শিক্ষকের রসজ্ঞান (Sense of humour) সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী। রসজ্ঞান বা রসসৃষ্টি
(humour) বলতে একজন আধুনিক মনোবিদ বলেছেন—যে জিনিসকে আমরা ভালোবাসি, তার প্রতি কোনো
রকম মানসিক বিকার এলে, তাকে উপহাস করার ক্ষমতা (‘To laugh at a thing one loves
and still to love’)। একজন আদর্শ শিক্ষকের যদি রসজ্ঞান না থাকে, তাহলে শ্রেণিকক্ষে
শিক্ষাদানকালে কোনো ভাবগম্ভীর বিষয়বস্তুকে কখনই সহজ-সরল ও সরস করে শিক্ষার্থীদের সামনে
তুলে ধরতে পারবেন না। আর এর ফলে শ্রেণি শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের কাছে নিরস হয়ে ওঠে ও
শিক্ষণীয় বস্তুটির প্রতি মনোযোগ আসে না। ফলে ভাবগম্ভীরতা বিষয়বস্তুটির জ্ঞান লাভেও
বাধা সৃষ্টি করে।

(ঝ)
ছাত্রপ্রীতি
: সুশিক্ষকের আর একটি বড়ো গুণ হল ছাত্রপ্রীতি (Love for
student)। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা কেবল জ্ঞান দান করা নয়, তিনি হবেন শিক্ষার্থীর
বন্ধু, দার্শনিক ও পথপ্রদর্শক (Friend, Philosopher and Guide)। তাই শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদেরকে
এড়িয়ে চলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে মেলামেশা না করেন, শিক্ষার্থীদেরকে সহ্য
করতে না পারেন, তবে সেই শিক্ষক শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে চালানা করতে পারবেন না। আধুনিক
মনোবিদরা মনে করেন, যে সব ব্যক্তি খুব সহজভাবে ছাত্রদের বা শিশুদের সঙ্গে মিশতে পারে
না, সেই সব শিক্ষক শিক্ষকতা কাজেরই অযোগ্য। সুতরাং, শ্রেণিশিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীর সাহচর্য একান্ত প্রয়োজন। কারণ, শিক্ষা সংগঠিত হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর
মধ্যে পারস্পরিক ভাব আদান-প্রদান বা ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে।

(ঞ)
সেবাধর্ম মনোভাব
: শিক্ষকতা হল একটি মহান বৃত্তি (Teaching is a noble Profession)।
এই পেশায় নিযুক্ত মানুষজন অর্থাৎ শিক্ষকরা সবসময় তাদের যোগ্যতা ও সেবার গুরুত্বের
উপযোগী ফল পান না। একজন শিক্ষকের যদি সেবাধর্মী মনোভাব না থাকে তাহলে
প্রথমে তিনি শিক্ষকতা (Teaching) কাজেই তৃপ্তি পাবেন না, সঙ্গে সঙ্গে সেই শিক্ষককে
দিয়ে শিক্ষার আদর্শেরও বাস্তব রূপদান সম্ভব হবে না। অবশেষে একথা বলা যায়, একজন শিক্ষকের যদি
সেবাধর্ম মনোভাব বা সেবামূলক আদর্শ না থাকে তবে তিনি সমাজে আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠতে
পারবেন না।

(ট)
স্বাধীন নিরপেক্ষ চিন্তা :
সুশিক্ষকের একটি বড়ো গুণ হল স্বাধীন চিন্তা
(Freedom of thought) করার ক্ষমতা। শিক্ষকের যদি স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা না থাকে,
তবে যে কোনো সামাজিক ঘটনা সম্পর্কে তিনি অন্যের চিন্তার দ্বারা (বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম
বা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ) ভারাক্রান্ত হয়ে মতামত প্রকাশ করবেন, নিজের স্বাধীন মত
প্রকাশ করতে পারবেন না। আর এর ফলে সেই শিক্ষক সেই ভ্রান্ত ধারণাই শিক্ষার্থীদের ওপর
জোর করে চাপানোর চেষ্টা করবেন, যা কখনই সমাজে কাম্য বা কাঙ্ক্ষিত নয়। আধুনিক সমাজব্যবস্থায়
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি স্বাধীন নিরপেক্ষ চিন্তা ধারার ক্ষমতা না থাকে, তবে
শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পাবে। শিক্ষার্থী ক্রমে ক্রমে মানসিক
ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়বে, যা সমাজে আদর্শ নাগরিক গড়ে ওঠার প্রধান অন্তরায়।

(ঠ)
দৈহিক স্বাস্থ্য :
সুশিক্ষককে দৈহিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। কারণ—(i)
শিক্ষককে বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় থাকতে হয়। তাঁর শারীরিক পরিশ্রমের কথা বিবেচনা করে
তিনি যদি ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী না হন, তাহলে তাঁর পক্ষে এই বৃত্তিতে থাকা অসুবিধাজনক
হয়ে পড়ে। (ii) শিক্ষককে দেখতে সুশ্রী হলে ভালো হয়। তার কারণ এতে তাঁর প্রতি ছাত্রেরা
সহজে আকৃষ্ট হয়। তবে শুধুমাত্র দেখতে সুশ্রী হলেই যে ছাত্ররা আকৃষ্ট হবে, তার কোনো
নিশ্চয়তা নেই। শিক্ষকের অন্য গুণের সঙ্গে এই গুণের যদি সার্থক সমন্বয় হয়, তবেই তা
কার্যকর হবে। (iii) শিক্ষকের গলার স্বর ও বাচনভঙ্গি ভালো হওয়া দরকার। এতেও ছাত্ররা
তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন।

(ড)
মানসিক স্বাস্থ্য :
সামগ্রিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া শিক্ষকের পক্ষে
একান্ত প্রয়োজন। যেসব মানসিক বৈশিষ্ট্য থাকলে শিক্ষক মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন
সেগুলি হল—ছাত্রদের সঙ্গে আদর্শ-সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা, প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়া
নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, নিজের দোষ-ত্রুটির সার্বিক মূল্যায়নের ক্ষমতা এবং সর্বপরি মানসিক
সন্তুষ্টি।


T- Truth.

E- Efficiency.

A- Affection.

C- Command over the taught.

H- Health, Physical and mental.

E- Eagerness.

R- Resourcefulness.

 

(২) শিক্ষকের পেশাগত বৈশিষ্ট্য
(Professional Characteristics of teacher)

 

(ক)
একজন শিক্ষকের কাছে কাম্য :

(i) শিক্ষাবৃত্তির উন্নতির জন্য তিনি সমাজের
পাশে থাকবেন।

(ii) শিক্ষক তার বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত বা বিশেষ
অধ্যয়নের ক্ষেত্রে সভ্যপদ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কোনো প্রতিষ্ঠানের সভ্যপদও
গ্রহণ করবেন।

(iii) সহশিক্ষক এবং শিক্ষাদান সংক্রান্ত সহকর্মীদের
সঙ্গে সুষ্ঠু নৈতিক আচরণ পোষণ করবেন।

(iv) বই, সাময়িক পত্রিকা, সংবাদপত্র এবং
নিজের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উন্নতির জন্য অন্যান্য উৎস থেকে জ্ঞান লাভের চেষ্টা করবেন যাতে
নিজের বিষয়ে জ্ঞান লাভে কোনো ঘাটতি না থাকে।

(v) নিজের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জ্ঞান লাভের
উদ্দেশ্যে চলচিত্র, filmstrips, দূরদর্শন, বেতারকে কাজে লাগাবেন।

(vi) তিনি অধিবেশন, কর্মশালা, সেমিনার এবং
বিভিন্ন সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন ; সঙ্গে সঙ্গে 
তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন
জায়গায় শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য ঘুরতে নিয়ে যাবেন জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা দানের
জন্য।

(vii) অভিভাবক ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে
তার সম্পর্ক, পেশাদারী বিচক্ষণতার সাক্ষ্য বহন করবে।

(viii) তার দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের
সবদিকে উন্নতির খেয়াল রাখবেন।

(xi) একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে, একজন
শিক্ষকের নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা থাকতে হবে। একই সঙ্গে এটা খুব জরুরী যে একজন
শিক্ষক শুধু উন্নত চরিত্রের অধিকারী হবেন না, সঙ্গে সঙ্গে একজন বিশ্বাসী মানুষও হবেন।
কর্মক্ষেত্রের প্রতি বিশ্বাস, মানুষের চরিত্রে বিশ্বাস ও তারসহকর্মীদের প্রতি তিনি
বিশ্বাস রাখবেন।

 

(খ)
সহকর্মীদের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা :

(i) একজন শিক্ষক তার সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো
মানবিক আচরণ স্থাপনে সচেষ্ট হবেন।

(ii) সকর্মীদের ব্যক্তিত্বকে তিনি উপযুক্ত
মর্যাদা দেবেন।

(iii) ক্ষুদ্র দল বা গোষ্ঠীকে তিনি কখনই প্রশ্রয়
দেবেন না।

(iv) শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও
অন্যান্যদের সামনে তিনি তার সহকর্মীদের কখনই সমালোচনা করবেন না।

(v) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা অন্যের
কাছে, তিনি তার সহকর্মীদের অসাক্ষাতে নিন্দা করবেন না।

 

(গ)
বিদ্যালয় পরিচালক গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ :

(i) শিক্ষক, যিনি শিক্ষাবিভাগের প্রধান, তিনি
বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সকল সদস্য ও কর্মীবৃন্দদের উপযুক্ত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন।

(ii) বিদ্যালয়ের প্রতি তিনি অনুগত থাকবেন।

(iii) শিক্ষকের সবসময় কাজ হবে বিদ্যালয়ের
প্রধানের কাঠিন্য ও সীমাবদ্ধতার প্রশংসা করা।

(iv) উৎশৃঙ্খল কথাবার্তাকে তিনি কখনই প্রশ্রয়
দেবেন না।

(v) প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মাধ্যমে (প্রধান
শিক্ষক) তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে সময়মতো উপযুক্ত রিপোর্ট

বিবরণ জমা দেবেন।

 

(ঘ)
সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ :

(i) শিক্ষক-অভিভাবক মিটিং এবং এই জাতীয় বিভিন্ন
কার্যকলাপে তিনি অংশগ্রহণ করবেন।

(ii) সামাজিক ব্যাপারে তিনি অংশগ্রহণ করবেন।

(iii) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজে উপস্থিত
থাকবেন যাতে ছাত্রদের উন্নতি ও ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা করতে পারেন।

(iv) অভিভাবকের প্রতি সহায়ক, সহানুভুতিশীল,
পরস্পর বোঝাপড়ার মনোভাব নিয়ে একজন

শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের অসুবিধাগুলি
তাদের অভিভাবকদের স্পষ্ট করে জানাবেন।

(v) দলের সদস্যদের জন্য উপযুক্ত সৌজন্য দেখাবেন,
বিশেষত যখন বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন।

 

(ঙ) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগঃ

(i) শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে স্বাধীনভাবে
মেলামেশা করতে পারবে।

(ii) প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বকে শিক্ষক
উপযুক্তভাবে নিরীক্ষণ করবেন।

(iii) প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হিতসাধনের জন্য
তিনি আগ্রহী হবেন।

(iv) প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রয়োজন
তিনি মেটাবেন।

(v) শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে-কোনো
কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন।

(vi) শিক্ষককে শিক্ষার্থীর প্রতি আস্থা রাখতে
হবে।

(vii) শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায্য
ও পক্ষপাতশূন্য থাকবেন।

 

(চ) শিক্ষার নিয়মাবলী সম্পর্কে জ্ঞান :

রাষ্ট্র শিক্ষার নিয়মাবলী বা নিয়ম নীতি
ঠিক করে এবং যেটা শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ন্ত্রিত
হয়। রাষ্ট্রীয় শিক্ষার নিয়মাবলীর কয়েকটি ভাগ লক্ষ্যণীয়—

(i) বিদ্যালয়ের স্মারক বিষয়ে নীতিসমূহ সম্পর্কে
জ্ঞান।

(ii) শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ের নীতিসমূহ, যেমন—একটি
বিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য বয়স, ভর্তির প্রণালী, বেতন, তহবিল, শিক্ষাদানের উপাদানের
নির্দেশ, বিদ্যালয়ের নিয়মানুবর্তিতা পরিক্ষা এবং মূল্য নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে যথাযোগ্য
ভূমিকা পালন।

(iii) বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বিষয়ে নিয়ম-নীতি
সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

(iv) বিদ্যালয়ের কর্মীবৃন্দের কাজের অবস্থান
ও সমৃদ্ধির বিষয়ে বিভিন্ন জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

(v) বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে
সম্পর্ক সম্পর্কে জ্ঞান। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সম্পূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতিটা
চালানো হয় শিক্ষাদানের নিয়মাবলীর নিয়মানুসারে। এর থেকে পথভ্রষ্ট হওয়ার অর্থ শিক্ষকদের
সমস্যার সম্মুখীন করা।

 

(ছ)
সাধারণ মনোভাব :

একজন শিক্ষক সমাজের সদস্য, তিনি সমাজে বাস
করেন ও সমাজে কাজও করেন। তার বিশেষ দায়িত্ব ও ভূমিকা অবলোকন করে তার কাছ থেকে আশা
করা হয়, তিনি সমাজের সাধারণ মানুষের থেকে একটু ওপরের স্তরে থাকবেন। সমাজে তার সাধারণ
মনোভাব উৎসাহী ও আশাবাদী হওয়া উচিত। গণতন্ত্রের আদর্শ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্মীয় আদর্শ
থেকে মুক্ত চিন্তা ইত্যাদি আদর্শ ও সমাজবাদের আদর্শ দ্বারা তিনি পরিচালিত হবেন। তিনি
সমাজের প্রয়োজনের ও সমস্যার দিকগুলি যথাযোগ্যভাবে উপলব্ধি করবেন।

 

(জ)
নীতিশাস্ত্রের কাজ :

শিক্ষক যেহেতু অবিরাম সংগ্রাম করে সমাজে অন্যদের
কাছে আদর্শ হওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেন, তাই শিক্ষকের কোনো কাজই তুচ্ছ বা অনুপযুক্ত বলে
মনে করা উচিত নয়। তিনি সহজেই অন্যের কাজকে বিবেচনা করে দেখেন এবং বিচক্ষণ বক্তব্য
সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল থাকেন। একজন শিক্ষক তার রোজকার অনুশীলন খুব ভালোভাবে
তৈরি করবেন। কোনো কাগজ ভাঁজ করা বা কোনো লেখা—যাই হোক না কেন, তিনি নিখুঁত যত্নসহকারে
কাজ করবেন। বাগলে (Bagley) তাই বলেছেন, “However able and experienced the
teacher, he could never do without his Preliminary Preparation.” তাই শিক্ষকের এ
সম্পর্কে আশ্বস্ত হওয়া উচিত যে, তিনি সব কাজ সুন্দর, পরিষ্কারভাবে, প্রণালীরীতি অনুসারে
ও নির্দিষ্ট সময় অনুসারে সম্পন্ন করেছেন।


 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top