“শিক্ষা হল সংগতিবিধানের
প্রক্রিয়া”— ব্যাখ্যা করো।
v সংগতিবিধানের অর্থঃ– যে প্রক্রিয়ার দ্বারা ব্যক্তি তার কোনো চাহিদা সরাসরিভাবে বা পরিবেশ
পরিবর্তনের মাধ্যমে চরিতার্থ করে, অথচ নিজের বা অপরের
অন্যান্য চাহিদাগুলির বিনাশ ঘটায় না, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সংগতিবিধান।
শিক্ষাই শিশুকে বা ব্যক্তিকে তার বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজনে সহায়তা করে। প্রাকৃতিক
বস্তুজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিবিধান ঘটায়। আর এই জ্ঞান
আসে শিক্ষা থেকে। আবার মানুষের আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা, রীতি-নীতি প্রভাবিত হয় সমাজ
পরিবেশ দ্বারা। সমাজে সার্থকভাবে বেঁচে থাকতে বা সমাজের সঙ্গে সংগতি বিধানের জন্য চাই
শিক্ষা। আবার মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাঙ্খ ইত্যাদি প্রক্ষোভগুলি সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের
অভাবে ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। শিক্ষা এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা
পালন করে। শিক্ষাবিদ ডিউই (Dewey)-এর মন্তব্য করেন যে—“Education is adjustment
and adjustment is Education.”শিক্ষাই হল অভিযোজন এবং অভিযোজনই শিক্ষা।
শিক্ষা শিক্ষার্থীকে তার বিভিন্ন ধরনের
পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধানের সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রধান তিনটি হল—
(1) প্রাকৃতিক পরিবেশ : প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে
সংগতিবিধানের জন্য প্রয়ােজন হয় বস্তুজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান। এই জ্ঞান অর্জিত হয় শিক্ষাপ্রক্রিয়ার
মাধ্যমে।
(2) সামাজিক পরিবেশ : সমাজে সার্থকভাবে বেঁচে
থাকা হল ব্যক্তিজীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের সঙ্গে একাত্ম হওয়া,
যাকে সামাজিকীকরণ বলা হয়। তাই প্রয়োজন কিছু কৌশলের, যেমন—আত্মীকরণ, সহযােজন, উপযােজন
প্রভৃতি। শিক্ষা সামাজিকীকরণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীকে সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধানে
সাহায্য করে।
(3) প্রাক্ষোভিক পরিবেশ : ব্যক্তির মনের মধ্যে
অবিরত যে ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-প্রত্যাশাগুলি কাজ করে তার বাহ্যিক প্রকাশ অনেক সময় ব্যক্তির
নিজের ও অন্যদের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। কখনো কখনো তা ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্যকে
বিপর্যস্ত করে তোলে। শিক্ষা এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।
সমস্ত দিক বিবেচনা করলে শিক্ষাবিদ ডিউইর সেই
মতটিকে অস্বীকার করার আর কোন উপায় থাকে না যে,
“শিক্ষা হল সংগতিবিধান
বা অভিযোজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া”।