“কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পটি ছোট গল্প হিসেবে সার্থকতা বিচার
করো
সাহিত্যের সবচেয়ে বিশিষ্ট এবং আকর্ষণীয়
শাখা হলো ছোট গল্প। তবে নাম ছোট গল্প হলেও শুধু আকৃতিতে ছোট হলেই তা ছোটগল্প হয় না,
তাতে সমগ্র জীবন নয়, জীবনের খন্ডাংশেরই প্রকাশ ঘটে। কাহিনী হয় একমুখী। ঘটনা সহজ-সরল। বর্ণনা বাহুল্য থাকেনা। তত্ত্ব
বা সরাসরি উপদেশ কথার স্থান নেই ছোটগল্পে। নাটকের মত একটি ক্লাইম্যাক্স থাকে এবং এর
একটা ব্যঞ্জনা ধর্মী উপসংহার থাকে। পাঠকের অন্তরে অতৃপ্তি জাগিয়ে রেখে হঠাৎই শেষ হয়
ছোট গল্প। উক্ত বৈশিষ্ট্যের
নিরিখে বিচার করলে দেখি “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পে পঞ্চাশের মন্বন্তর বিধ্বস্ত
বাংলার একটি নির্দিষ্ট সময়কালের খন্ড জীবনচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে ।
ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য প্রথম দর্শনে মৃত্যুঞ্জয়ের
প্রতিক্রিয়া তার শারীরিক মানসিক বিপর্যয় এবং মধ্যবিত্ত থেকে সর্বহারায় ক্রম পরিণতিইগল্পের
মূল ঘটনা যা জটিলতা হীন এবং একমুখী। সোজা পরিণতির দিকে প্রবাহিত। ব্যাখ্যা বর্ণনায় লেখক অত্যন্ত নির্লিপ্ত থেকে ঘটনার
প্রয়োজনে ব্যতীত বর্ণনাকে সংযত রেখেছেন তাই বর্ণনা বাহুল্য নেই এবং আকৃতিতেও গল্পটি
ছোট। লেখকের মার্কসবাদী চিন্তাভাবনার ছায়াপাত ঘটলেও গল্পের কাহিনীতে কোথাও তত্ত্বকথা
প্রকট হয়ে ওঠেনি। নেই কোন উপদেশ ও ।
গল্পের
শেষ উক্তি “গা থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও।” মৃত্যুঞ্জয়ের
এই বক্তব্যে তার চারিত্রিক পরিবর্তনের চূড়ান্ত পর্যায় প্রকাশিত হয়। তার এই
tragic পরিণতি মানবিক জীবনবোধে উত্তরণের মহান সত্যটিকে স্পষ্ট করে। এভাবেই গল্পে একটি
ক্লাইম্যাক্স বা মহামুহূর্ত রচিত হয় ।
গল্পটি
শেষ করার পরে মৃত্যুঞ্জয়ের এই পরিণতি পাঠককে ভাবায়। তাদের মনে জাগায় অতৃপ্তির রেশ।
মনে হয় “শেষ হয়ে হইল না শেষ”। উপসংহারটি তাই লজিক্যাল বা ব্যঞ্জনাধর্মী।