বৈদিক সাহিত্যের ওপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ | বৈদিক সাহিত্য সম্পর্কে যা জানো লেখ |

বৈদিক
সাহিত্যের ওপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ অথবা 
বৈদিক সাহিত্য সম্পর্কে যা জানো লেখ। B.A History Note Semester I

 



বৈদিক সাহিত্য

    সাহিত্য, ধর্মগ্রন্থ,
ও দর্শনশাস্ত্র রচনায় ও চিন্তাভাবনায় বৈদিক আর্যরা অন্যান্য সাধারণ ও বহুমুখী প্রতিভার
স্বাক্ষর রেখেছেন, আর্যদের প্রাচীনতম সাহিত্য ও ধর্মগ্রন্থ হল ‘বেদ’। ‘বেদ’ শব্দের অর্থ
‘জ্ঞান’। বেদ সংস্কৃত ভাষায় রচিত। বেদকে ‘অপৌরুষেয়’ বা ‘ঈশ্বরের বাণী’ বলে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা
বিশ্বাস করেন। ঈশ্বরের কাছ থেকে শুনে এবং বংশ পরস্পরায় শুনে মুখস্থ করে বেদের বাণী
গুলি চলে আসছিল বলে এর নাম ‘শ্রুতি’। এ যুগে বেদ লিখিত আকারে ছিল না তাই বেদের অপর
নাম ‘স্মৃতি’। পরবর্তীকালে লিপি বর্ণমালার উদ্ভাবন হলে বেদকে লিখিত রূপে দেওয়া হয়।
হিন্দুদের সকল ধর্মচিন্তা, সমাজ সংগঠন প্রভৃতি বেদে বর্ণিত হয়েছে।

    বেদ,
চার ভাগে বিভক্ত- ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। এর মধ্যে ঋকবেদে সর্বপ্রাচীন। অন্যান্য বেদ
গুলি ঋকবেদকে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে রচিত হয়েছিল।  প্রতিটি বেদের চারটি ভাগ দেখা যায় যথা- সংহিতা,
ব্রাহ্মণ, অরণ্যক, ও উপনিষদ। সংহিতা পদ্যের আকারের রচিত, যা প্রধানত স্তোত্র মন্ত্রের
সমষ্টি। ঋক সংহিতার বহু স্তোত্র সাম, যজু ও অথর্ব বেদের স্তোত্র গুলি যঞ্জের সময় সুর
করে গান করা হত। ব্রাহ্মন অংশ গুলি গদ্যের আকারে রচিত। এতে যাগযঞ্জের বিভিন্ন বিধি
ও মন্ত্র গুলির টিকা লিপিবদ্ধ রয়েছে।

আরণ্যক ও উপনিষদ

    আরণ্যক
ও উপনিষদ অংশগুলি অনেক পরে রচিত, যে সকল মানুষ 
যাগযজ্ঞের
বিশ্বাস না করে অরন্যে 
বসবাস
করতো এবং আত্মার মুক্তির উপর চিন্তা করতো, তাদের কথাই অরণ্যকে স্থান পেয়েছে। অরণ্যকে
দার্শনিক চিন্তায় ভক্তিধর্ম এবং জন্মান্তরবাদের বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। উপনিষদ কর্মফল
তত্ত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মৃত্যুর পর মানুষ কর্মফল অনুযায়ী পুনরায় জন্মগ্রহণ
করে এবং জীবন আত্মা পরমাত্মার লীন হয়ে যায় বলে উপনিষদে প্রকাশ হয়। কর্মফলের হাত
থেকে মুক্তির জন্য ধ্যান, সন্যাস, এবং পরিশুদ্ধ নীতিবোধের কথা উপনিষদে পাওয়া যায়।

বেদাঙ্গ ও সূত্রসাহিত্য

    বেদবিদ্যা যথাযথ ভাবে আয় ও করার শিক্ষাকে ‘বেদাঙ্গ’
বলা হয়। বেদাঙ্গকে সূত্রসাহিত্য ও বলা হয়। এতে ছয়টি সূত্র বা দর্শন আছে। সেগুলি হল
(১) শিক্ষা,যার সাহায্যে বিশুদ্ধ উচ্চারণের বেদ পাঠ করা যায়; (২) ছন্দ, বেদের স্তোত্র
গুলি ছন্দ আকারে আলোচনা করা হয়েছে; (৩) ব্যাকারন, যার সাহায্যে ভাষাকে শুদ্ধভাবে প্রয়োগ
করা যায়; (৪) নিরুক্ত, যাতে বৈদিক ভাষাতত্ত্ব জানা যায় ; (৫) জ্যোতিষ, যাতে গ্রহ-নক্ষত্রের
অবস্থা ও প্রভাব জানা যায়। (৬) কল্প,যাতে সমাজ 
পরিচালনার নিয়ম, যাগযজ্ঞের প্রণালী প্রভৃতি জানা যায়। কল্পসূত্র কয়কটি অংশে
বিভক্ত যথা- স্রৌত্র, দৃহ্য, শুল্ব ও ধর্ম। ধর্ম সূত্রে সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে অনুশাসন
আছে। যার উপর নির্ভর করে মনুসংহিতা বৃহস্পতি স্মৃতি, নারদ স্মৃতি  প্রভৃতি গ্রন্থ রচিত।

ষড়দর্শন 

    ষড়
দর্শনকে বেদাঙ্গের অপর অংশ বলে ধরা হয়। এই ছয়টি দর্শনের উদগাঁথা হলেন ছয়জন বিখ্যাত
ঋষি তথা- কোপিলের শাঙ্খ, পতঞ্জলি ‘যোগ’, গৌতম ‘ন্যায়’, কানন্দ ‘বৈশিষিক’, জৈমিনীর ‘পূর্ব মীমাংসা’ ও ব্যাসবেদের ‘উত্তর মীমাংসা’ বা ‘বেদান্ত’ এভাবে সামগ্রিক বৈদিক সাহিত্য বলতে
বেদ, বেদাঙ্গ ও ষড়দর্শনকে সামগ্ৰীক ভাবে বোঝায়।

(বি: দ্র: – বোঝার সুবিধার জন্য পয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষায় পয়েন্ট ছাড়া লেখা উত্তম) 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top