শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করো | The aim of education | ClassGhar | Note With PDF |


The aim of education


শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করো

   জন্মের পর থেকে শিশুর জীবনে বহুমুখী বিকাশ
একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুরু হয়। প্রথমে পরিণমনের (Maturation) মধ্য দিয়ে
এবং পরে অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের দ্বারা এই বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। মানুষের বিকাশের
প্রতিটি স্তরে জীবনের কিছু না কিছু লক্ষ্য বর্তমান। এ প্রসঙ্গে দার্শনিক অ্যারিস্টটল
বলেছেন যে, প্রতিটি মহৎ শিল্পকলার একটি কল্যাণকর মহৎ লক্ষ্য থাকে। আবার যুগে যুগে শিক্ষার
লক্ষ্যও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রাচীন ভারতে শিক্ষার লক্ষ্য ছিল শিশুদের খাদ্য সংগ্রহ,
পরিধেয় সংগ্রহ ও আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত করা। কিন্তু আধুনিক

যুগে শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ
বিকাশ। বিভিন্ন দার্শনিক এবং
শিক্ষাবিদগণের বক্তব্য থেকে শিক্ষার কয়েকটি
লক্ষ্য নীচের আলোচনা করা হল-

 (1) জ্ঞানার্জন : ভারত, চিন, গ্রিস
যেখানে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এবং উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া গেছে,
সর্বত্রই শিক্ষার লক্ষ্য ছিল জ্ঞানার্জন। বর্তমানে ইউনেস্কোর নেতৃত্বে যে ডেলর কমিশন
গঠিত হয়েছে, তার প্রতিবেদনেও শিক্ষার চারটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হল জ্ঞানার্জনের
শিক্ষা। তাই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য যে জ্ঞানার্জন তা সর্বকালেই স্বীকৃত।

(2)
বৃদ্ধি ও বিকাশ
: মানব শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ অনেকাংশে সহজাত হলেও সুষ্ঠু,
যথাযথ ও বাঞ্ছিত পথে তাকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়ােজন হল অনুকূল পরিবেশ এবং শিক্ষা।
তাই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল সুষ্ঠু ও বাতি পথে শিশুর বিকাশকে নিয়ন্ত্রণ করা।

(3)
অভিযোজন
: অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন শিক্ষার লক্ষ্য হল শিশুকে সার্থকভাবে তার পরিবেশের
সঙ্গে মানিয়ে চলার সামর্থ্যের বিকাশসাধন। হর্নির (Horney)-র মতে– শিক্ষা হল প্রকৃতি,
অন্যান্য ব্যক্তি এবং অন্তিমে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে অভিযোজনের প্রক্রিয়া। শিক্ষাবিদ
রেমন্ট (Raymont)-ও প্রায় একই কথা বলেছেন।

(4)
বৃত্তিমূলক
: ভবিষ্যতে শিশু যাতে তার ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর জন্য বিশেষ বৃত্তি গ্রহণ
করতে পারে সে ব্যাপারে সাহায্য করা। পরবর্তী সময়ে সামাজিক উপব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা
এই দায়িত্ব গ্রহণ করে আসছে। একেই আমরা শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্য বলে থাকি।

(5) কৃষ্টিমূলক লক্ষ্য : সমাজের রীতিনীতি, প্রথা,
আচার-আচরণ, জীবনধারা তাকে মেনে চলতে হয়, সংরক্ষণ করতে হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের হাতে
হস্তান্তর করতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থা হল অন্যতম হাতিয়ার যার দ্বারা এই ধারা বাস্তবায়িত
হয়।

(6)
নৈতিক লক্ষ্য:
অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিশুর
নৈতিক মান উন্নত করা। শিক্ষাবিদ হার্বার্ট (Herbert) শিশুর নৈতিক মূল্যবোধ এবং চরিত্রগঠনের
ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর নৈতিক মানের
ওপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত।

(7)
আধ্যাত্মিক লক্ষ্য
: আদর্শবাদী দার্শনিক ফ্রয়েবেল মনে করেন ব্যক্তিজীবনের উদ্দেশ্য
হলে বিশ্বজগতের সঙ্গে একাত্ম হওয়া। প্রতিটি ব্যক্তিই নিজেকে বিশ্বজগতের অংশ হিসেবে
উপলদ্ধি করবে। শিক্ষাই ব্যক্তিকে এই উপলদ্ধিতে সাহায্য করে। আমাদের দেশের রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর, বিবেকানন্দ এবং শ্রী অরবিন্দ শিক্ষার আধ্যাত্মিক লক্ষ্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ
করেছেন।

(8)
চরিত্র গঠন
: চরিত্র গঠন ও নৈতিকতার শিক্ষা হল আধুনিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। রবীন্দ্রনাথ
এর মতে- “চরিত্রকে বলিষ্ঠ ও কর্মঠ করাই শিক্ষার প্রধান লক্ষ”। গান্ধিজীর মতে-“শিক্ষার
লক্ষ হবে চরিত্র গঠন”।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top