“শিক্ষার
উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীর সুসংহত বিকাশ”—উক্তিটি আলোচনা করো
» শিক্ষার উদ্দেশ্য—শিক্ষার্থীর
সুসংহত বিকাশ : আধুনিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর
সুসংহত বিকাশ। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশের নানান উপাদানের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার
ফলে শিক্ষার্থীর বিকাশ ঘটে। শৈশব, বাল্যকাল, বয়ঃসন্ধি, প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থা ইত্যাদি
কয়েকটি স্তরের মধ্য দিয়ে এইবিকাশ সম্পন্ন হয়। প্রতিটি বিকাশের স্তর পরস্পরের ওপর
নির্ভরশীল। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্তর অনুযায়ী বিভিন্ন
প্রকার বিকাশে সাহায্য করা। যেমন—
(1) দৈহিক বিকাশ : শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশে সহায়তা
করা। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, ব্রতচারী, এন. সি. সি. প্রভৃতি শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশে
সহায়ক হয়।
(2) মানসিক বিকাশ : শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে সহায়তা করা হল শিক্ষার
অন্যতম উদ্দেশ্য। মানসিক বিকাশ বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীর বুদ্ধি, চিন্তা, কল্পনাশক্তি,
স্মৃতি, আগ্রহ প্রভৃতির বিকাশ। বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ, আলোচনা প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর
মানসিক বিকাশে সাহায্য করা হয়।
(3) প্রাক্ষোভিক বিকাশ : আধুনিক শিক্ষার আর-একটি
গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক বিকাশে সহায়তা করা। রাগ, ভয়, ঘৃণা,
আনন্দ, হিংসা প্রভৃতি প্রক্ষোভগুলি ব্যক্তিজীবনে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষার
কাজ হল শিক্ষার্থীর অবাঞ্ছিত প্রক্ষোভগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে তার মধ্যে বাতি প্রক্ষোভগুলিকে
বিকশিত করা।
(4) সামাজিক বিকাশ : শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন
প্রকার সামাজিক গুণের বিকাশ ঘটানাে। শিক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী সামাজিক রীতিনীতি,
আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং ধীরে ধীরে দায়িত্ববান সুনাগরিক হয়ে
ওঠে।
(5) নৈতিক বিকাশ : শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের একটা অংশ হল নৈতিক বিকাশ।
শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর নৈতিক চরিত্রের, মূল্যবােধের বিকাশ ঘটে।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য
হল শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, সামাজিক সব দিকের সামঞ্জস্যপূর্ণ বিকাশ।
বিশ্বের প্রায় সব শিক্ষাবিদ শিশুর সুসংহত বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্বের কথা
উল্লেখ করেছেন।