মাটি ছিল, জল ছিল, বায়ু ছিল অবারিত। কৃষি ছিল ,গ্রাম
ছিল ,ছিল ন ছায়া স্নিগ্ধ তপোবন। আজ সেসব শুধু স্মৃতি। নগর সভ্যতা, যন্ত্র সভ্যতা,
শিল্প সভ্যতা কেড়ে নিয়েছে আমাদের শান্তি।
গ্রাস করেছে গ্রামজীবনের পবিত্রতা। “মহুয়ার দেশ “সেই দুঃসহ বেদনার-ই বাণীরূপ।
কবি
সমর সেনের মহুয়ার দেশ তার যৌবনে দেখা সাঁওতাল পরগনা। নগরজীবনের দূষণ, অবক্ষয় আর যান্ত্রিকতায়
শ্রান্ত-ক্লান্ত কবি মহুয়ার দেশের স্বপ্নীল
পরিবেশে মুক্তির আশ্বাস পেতে চেয়েছিলেন। কারণ সে দেশ মেঘ মদির, ছায়াঘেরা তার পথ ।পথের
দু’ধারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে দেবদারু গাছ। সেখানে রাতের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত
করে সমুদ্রের জলকল্লোল ।মহুয়া ফুলের গন্ধ আর স্পর্শ তাকে নিবিড় ভাবে ঘিরে থাকে সর্বক্ষণ।
কিন্তু যন্ত্রসভ্যতার আগ্রাসনে ক্রমে ধূসর পাহাড়,
মাদলের ধ্বনি, মহুয়ার গন্ধ যেন কোথায় হারিয়ে যায়। সেখানে সন্ধান করা হয় কয়লা
খনি। শুরু হয় কয়লা উত্তোলন ।বড় বড় যন্ত্রের শব্দ আর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় কবির স্বপ্নের
দেশ সাঁওতাল পরগনা ।সেই দুঃসহ আর্তনাদ ধ্বনিত হয়-
“এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে
মাঝে মাঝে শুনি
মহুয়া বনের ধারে কয়লা খনির
গভীর বিশাল শব্দ”।
ফলে
প্রকৃতির আদিম সন্তানেরা পরিণত হয় যন্ত্রসভ্যতার দাস খনি শ্রমিকে।হারিয়ে যায় তাদের
স্বপ্ন। হারিয়ে যায় সবুজ। হারিয়ে যায় তাদের প্রাণপ্রাচুর্য। কবির ভাষায়-
“আর শিশির ভেজা সবুজ সকালে
অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধুলোর কলঙ্ক”।
যে মেঘ মদির মহুয়ার দেশ ছিল কবির যৌবনের উপবন, তার ক্লান্তি নিরসনের স্নেহসিক্ত আশ্রয়,
আজ যন্ত্র আর শিল্প-সভ্যতার নিষ্ঠুর বর্বরতায় মহুয়ার দেশের ভূমিপুত্র রাই ক্লান্ত, অবসন্ন। কবির দৃষ্টিতে –
“ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়
কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন”।
এভাবেই পুঁজিবাদী শিল্প-সভ্যতা মহুয়ার দেশ এর
মতো অজস্র গ্রাম জীবনকে গ্রাস করছে চরম নিষ্ঠুরতা। সে বেদনাই বাগ্ময় হয়ে উঠেছে কবিতাটিতে।