“আমি কি তা দেখতে পাচ্ছিস নে”-উক্তিটির আলোকে গল্পটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখ / উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো/ গল্পটি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গল্প হিসাবে কতটা সার্থক/ ভারতবর্ষ দ্বাদশ শ্রেণি | Note With PDF |
সমাজের প্রতি শিল্পের দায়বদ্ধতা কে গুরুত্ব
দিয়েই রচিত হয়েছে “ভারতবর্ষ”
গল্পটি। গল্পটিতে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ মহামানবের মিলনক্ষেত্র এই ভারতের ঐতিহ্য
ও সংস্কৃতির মর্মমূলে আলোকপাত করে তার অন্তরকে উদঘাটিত করে দিয়েছেন পাঠকের সামনে।
ভারতবর্ষ শুধু হিন্দু বা মুসলমানের নয়,
শুধু শিখ জৈন বা বুদ্ধের নয় ,ভারতবর্ষ সমগ্র ভারতবাসীর। ভারতের মাটি ,জলবায়ু অপার
স্নেহে লালন পালন করে চলেছে তার সব ধর্মের মানবসন্তানকে। বহুজাতির মিলনক্ষেত্র ভারত
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সবার পরশে পবিত্র এই ভারতবর্ষ মানবতার আদর্শে ঐক্যবদ্ধ।
সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ তাদের শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে
এদেশের মাটিতে পুঁতে ছিল সাম্প্রদায়িকতার বীজ। ভারতবাসীর অজ্ঞানতার অন্ধকারে তা অঙ্কুরিত
হয়ে তার ষড়যন্ত্রের শিকার
চালিয়ে ফাটল ধরাতে চেয়েছে হিন্দু মুসলিম ঐক্যকে। কখনো কখনো সে চক্রান্তে রক্তাক্ত
হয়েছে ভারতের মাটি। কিন্তু ভারত তা মেনে নেয়নি। ঐক্যের অমৃতধারার বিভেদের বিষকে নিঃশেষ করতে চেয়েছে। “ভারতবর্ষ” গল্পে তারই
ছায়াপাত স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। পৌষে
বাদলার অবসানে বটতলায় বুড়ির
নিঃসাড় দেহটি আবিষ্কৃত হয়। হিন্দুরা তাকে নদীর চরে ফেলে দিয়ে আসে। বিকালে মুসলিমরা
তাকে মুসলিম ভেবে শাস্ত্রানুযায়ী সৎকার করার জন্য তুলে নিয়ে আসে। ফলে হিন্দু-মুসলমান
উভয় পক্ষের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উপক্রম হয়। সরকারি শান্তিরক্ষী চৌকিদার ও যখন শান্তি
রক্ষায় ব্যর্থ প্রায়, তখন সবাইকে হতবাক করে জেগে ওঠে শুভবুদ্ধি, মানবতা ও চেতনার
প্রতীক- সেই বুড়িটি। অজ্ঞ মানবের অন্তরের লুপ্ত প্রশ্ন উঠে আসে -“বুড়ি, তুমি
হিন্দু না মুসলমান?” এ যেন সমগ্র ভারতবর্ষের আত্মজিজ্ঞাসা। এই ঘোরালো প্রশ্নের সমাধানে যখন চিন্তাবিদ মানুষের কপালে
ভাঁজ পড়ে তখন বুড়ির বিরক্তিকর প্রত্যুক্তি -“আমি কি তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”এই
এক কথাতেই সব সমস্যার সমাধান হয়। জাগ্রত হয় ভারতবাসীর অন্তর্দৃষ্টি। সব সুপ্তির স্বপ্নজাল,
সব কুজ্ঝটিকার অন্ধকার ছেড়ে এই সত্যই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ভারতবর্ষে
হিন্দুর নয়, মুসলমানের নয়। তা সমগ্র ভারতবাসীর। ভারতবাসীর পরিচয় তার ধর্মের মধ্যে
সীমিত নয়। পরিচয় তার জাতিসত্তায়। গল্পটির মূল বক্তব্য, উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য এখানেই
সার্থকতা পায়। গল্পটিও হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী চেতনায় ঘা দেওয়া এক অনন্য
গল্প।