দর্শনের শাখা হিসেবে তর্কবিদ্যা স্থান | দর্শনের শাখা হিসেবে নীতিবিদ্যার স্থান | “দর্শনের প্রত্যয়”- পাশ্চাত্য দর্শন |

দর্শনের শাখা হিসেবে তর্কবিদ্যা স্থান | দর্শনের শাখা হিসেবে নীতিবিদ্যার স্থান

 

6. দর্শনের শাখা হিসেবে তর্কবিদ্যা স্থান সম্পর্কে আলোচনা
করো।

তর্কবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো লজিক (Logic)। ইংরেজি
Logic” শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ “logos” থেকে।
logos” শব্দটির দুটি অর্থ চিন্তা বা ভাষা। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে
তর্কবিদ্যার চিন্তা বলতে এক অনুমান সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান।

       জ্ঞাত
বিষয়ের ভিত্তিতে অজ্ঞাত বিষয়ের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাকে তর্ক বা অনুমান বলে। যেমন-
যেখানে ধূম সেখানে বহ্নি।

     এই সত্য
অবগত থাকলে এবং দূর থেকে পর্বতের কোন স্থানে ধূম প্রত্যক্ষ করলে সেখানে বহ্নি আছে এরূপ
অনুমান লব্ধ জ্ঞান আমরা লাভ করতে পারি।

     যখন অনুমান
ভাষায় প্রকাশিত হয়, তখন তাকে যুক্তি বলে। যুক্তিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এর
দু’টি অংশ আছে-

i. আশ্রয় বাক্য থেকে আশ্রয় করে সিদ্ধান্ত টানা হয়।

ii. সিদ্ধান্তের জ্ঞাত আশ্রয় বাক্যের উপর ভিত্তি করে
আমরা যে অজ্ঞাত সত্যটি লাভ করি তাকে সিদ্ধান্ত বলি।

           যুক্তি
দুই প্রকার- অবরোহ এবং আরোহ অবরোহ যুক্তির লক্ষ্য হলো প্রমাণ এবং আরোহ যুক্তির লক্ষ্য
হলো আবিষ্কার।

          নিয়ম
সঙ্গত পদ্ধতিতে চুক্তি গঠিত হলে যুক্তি বৈধ হয়, না হলে অবৈধ হয়।

     তাই
Copi বলেছেন -“যে শাস্ত্রে যুক্তি গঠনের বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতি নির্ধারণ করা
হয় এবং সেইসব নিয়ম ও পদ্ধতিকে ভিত্তি করে যুক্তির বৈধতা এবং অবৈধতা বিচার করা হয়,
তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে।”

যুক্তিবিদ্যার বৈশিষ্ট্য:

 i. যুক্তিবিদ্যা
হলো একটি বিজ্ঞান।

 ii. যুক্তিবিদ্যা
হল একটি অদৃষ্টনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

 iii. যুক্তিবিদ্যার
আলোচ্য বিষয় হল অনুমান বা যুক্তি।

 iv. যুক্তি
বিদ্যার যুক্তি গঠনের নিয়ম ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।

 v. যুক্তির
অঙ্গ হিসাবে পদ,সামান্য, অসাধারণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মন্তব্য: দর্শনের আলোচ্য বিষয়সমূহ ও তৎসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যৌক্তিকতার
বিচার আমরা যুক্তিবিজ্ঞানের সাহায্যে করতে পারি। তাই যুক্তিবিদ্যার মধ্য দিয়েই দার্শনিক
বক্তব্য যুক্তিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে এবং এইভাবে যুক্তিবিদ্যার দর্শনকে নির্বিচারদের থেকে
রক্ষা করতে পারে। এই কারণে যুক্তিবিদ্যা দর্শনের একটি অপরিহার্য শাখা হিসেবে স্বীকৃতি
লাভ করেছে।

 

7. দর্শনের শাখা হিসেবে নীতিবিদ্যার স্থান সম্পর্কে
আলোচনা করো।

 নীতিবিদ্যার
ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো “Ethics“। এই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে
Ethos” থেকে। “Ethos” কথার বাংলা অর্থ হলো আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি
বা অভ্যাস, চরিত্র ইত্যাদি।

       রীতিনীতি
একটি নৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। এর মধ্যেই চরিত্র গড়ে ওঠে এবং এই চরিত্র তার আচরণের
মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়।

         অতএব
ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে আমরা নীতিবিদ্যা বলতে বুঝি সেই বিদ্যাকে যা সমাজে বসবাসকারী
আত্মসচেতন মানুষের রীতিনীতি, অভ্যাস বা আচার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে।ব্যাক্তির নীতি
বৈধ আছে। এই নীতি বৈধতা তার বিচার-বুদ্ধির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই মানুষের নিজের এবং
অন্যের আচরণের ভালো-মন্দ বিচার করতে হয়।

       অধ্যাপক
ম্যাকেঞ্জি
বলেন “নীতি বিজ্ঞান হল এমনই এক বিজ্ঞান যা মানুষের আচরণের কথা আলোচনা
করে
“। উল্লেখ্য এই যে পরম কল্যাণের আদর্শের আলোকে মানুষের আচরণের কেবলমাত্র ঐচ্ছিক
ক্রিয়ার ভালো-মন্দ বিচার করাই নীতিবিদ্যার কাজ। পূর্ব থেকে সংকল্প করে একটি নির্দিষ্ট
উদ্দেশ্য অনুসারে যখন মানুষ কাজ করে তাকে বলে ঐচ্ছিক ক্রিয়া।

         তাই
অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি বলেন “মানুষের জীবনের অন্তর্নিহিত আদর্শের সাধারণ আলোচনা বা
বিজ্ঞান হচ্ছে নীতিবিদ্যা
“।

         অধ্যাপক
লিলি
বলেন “নীতিবিজ্ঞান সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ ভালো কি মন্দ, উচিত কি অনুচিত
প্রভৃতি বিচার করে
“।

নীতিবিদ্যার বৈশিষ্ট্য:

 

i. নীতি বিজ্ঞান হলো একটি বিজ্ঞান।

ii. নীতি বিজ্ঞান হল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

iii. নীতি বিজ্ঞান এক পরম কল্যাণের আদর্শের আলোকে মানুষের
আচরণের নৈতিক মূল্য বিচার করে।

iv. নীতি বিজ্ঞান মানুষের আচরণের ঐচ্ছিক ক্রিয়ামূল্য
অবধারণ করে।

v. নীতিজ্ঞান কেবলমাত্র সমাজে বসবাসকারী আত্মসচেতন জীব
হিসেবে মানুষের আচরণের মূল্য বিচার করে।

 

8. বস্তুর অবভাসিক রূপ কি?

 বস্তু যেভাবে
আমাদের সামনে প্রতিভাত বা প্রকাশিত হয় তাকেই বলা হয় বস্তুর অবভাসিক রূপ।

9. বস্তুর অন্তর রূপ কি?

 বস্তুর অন্তর
রূপ বলতে বোঝায় বস্তু আসলে যেমন সেই রূপকে অর্থাৎ বস্তুর প্রকৃত সত্ত্বাকে।

10. মূর্ত বিষয় বলতে কী বোঝো?

যে বিষয় বা বস্তু আমাদের সামনে প্রকাশিত হয় তাকেই
বলে মূর্ত বিষয়।

 11. অমূর্ত
বিষয়ে কি?

যে বিষয় আমাদের সামনে প্রকাশিত হয় না, যাকে শুধুমাত্র
অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে হয় তাকেই বলা হয় অমূর্ত বিষয়।

 12. সদ্ বস্তু
বলতে কি বোঝো?

 যে বস্তুর বাস্তব
অস্তিত্ব আছে তাকেই বলা হয় সদ্ বস্তু।

 13. মূল্যবিদ্যা
কি?

 যে শাস্ত্র
শিব, সত্য ও সুন্দর – মানুষের এই তিনটি আদর্শ সংক্রান্ত আলোচনাকে উপস্থাপিত করে তাকেই
বলা হয় মূল্যবিদ্যা।

 

14. নীতিবিদ্যা কি?

 

যে শাস্ত্রে সামাজিক মানুষের আচার-আচরণের  ভালো -মন্দ, ন্যায় -অন্যায়, উচিত-অনুচিত প্রতি
নৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বলা হয় নীতিবিদ্যা।

 

 15. পরিবেশ
নীতিবিদ্যা কাকে বলে?

 যে নীতিবিদ্যা
মানুষের পরিবেশের নৈতিকতা সম্পর্কিত আলোচনাকে উপস্থাপিত করে তাকেই বলা হয় পরিবেশ নীতিবিদ্যা।

16. দর্শনকে “চিন্তার উৎস” বলে কেন?

 পেরির মতে দর্শন
আকস্মিক কিছু নয়, অলৌকিক কিছু নয় বরং অনিবার্য ও স্বাভাবিক। তাই দর্শনকে “চিন্তার
উৎস” বলা হয়।

9 thoughts on “দর্শনের শাখা হিসেবে তর্কবিদ্যা স্থান | দর্শনের শাখা হিসেবে নীতিবিদ্যার স্থান | “দর্শনের প্রত্যয়”- পাশ্চাত্য দর্শন |”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *