“বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতায় বাউল সাধন তত্ত্ব আলোচনা করো |

 
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতায় বাউল সাধন তত্ত্ব আলোচনা কর

“বাড়ির
কাছে আরশিনগর” কবিতায় বাউল সাধন তত্ত্ব  

 

“বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতাটির আপাত অর্থের অন্তরালে বাউল সাধন
তত্ত্ব রূপায়িত হয়েছে ।বাউল সাধনা মনের মধ্যেই “মনের মানুষের” সাধনা। অথচ
শত শত জনম ধরে তাকে পাওয়া যায় না। এই পড়শি বা মনের মানুষকে না পাওয়া বা না দেখার
অন্তহীন আর্তি বাউল সাধনার একটি লক্ষণীয় বিষয়। পাঠ্য কবিতাতেও সেই আর্তি ভূলোক দ্যুলোক
বিচরণ করে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে-

” আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”।

       বাউল সাধনা হলো আত্মশুদ্ধি বা চিত্তশুদ্ধির সাধনা। মনের লোভ-লালসা, বিষয়-
বাসনাই ঈশ্বরের সাথে মিলন পথের প্রতিবন্ধকতা। কবির ভাষায়-

” গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি”-

এ বাধার বিপুল
জলরাশি অর্থাৎ বিষয়বাসনা ত্যাগের মাধ্যমে
  আত্মশুদ্ধি ঘটলে
তবেই তাকে লাভ করা যায়।

         বাউল সাধনায় ঈশ্বর নিরাকার, অবয়বহীন,উপলব্ধির বস্তু। কবির ভাষায় –

“ও তার হস্ত-পদ-স্কন্দ-মাথা নাই রে”।

        বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মতোই পঞ্চভূতে গড়া অনুব্রহ্মাণ্ড এই মানবদেহে তিনি
অবস্থান করেন অর্থাৎ বাউল সাধনা এক অর্থে দেহ সাধনা। দেহ বা মনের মধ্যেই বাউলের ঈশ্বর
অনুসন্ধান তাই আসলে তা আত্মানুসন্ধান। এ যেন মানুষের মধ্যে কার স্পিরিচুয়াল হিউম্যানিজম
এর সাধনা।

         এই ঈশ্বরকেই বাউলেরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বময় কর্তা বলে মনে করেন। তিনি
যেমন অসীম, তেমনি অসীম তার ক্ষমতা। তাকে স্পর্শ করতে অর্থাৎ অন্তরে লাভ করতে পারলে
সকল ভব যন্ত্রণা দূর হতো।

“পড়শী যদি আমায় ছুঁত

আমার যম যাতনা যেত দূরে”।

তিনি সকল মুক্তির
আধার- এ যেন বৌদ্ধ সহজ সাধনার নির্বাণ লাভ।

 

        বাউলরা গুরুবাদে বিশ্বাসী। কবিতায় যে তরণীর কথা বলা হয়েছে তিনি আসলে
গুরু। যিনি সাধনার পথ দেখান। পৌঁছে দেন লক্ষ্যে। তবে দেহাত্মবাদী বাউলের ঈশ্বর দেহের
মধ্যে থাকলেও সাধন ছাড়া সেই পরম আত্মার সাথে মিলনের সাধ্য নেই। তাই সাধক হৃদয়ে থেকে
যায় চির অতৃপ্তির আক্ষেপ।

” সে আর লালন একখানে রয়

তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে”।

    এভাবেই
কবিতাটির বর্ণে- অক্ষরে-শব্দে-ছন্দে বাউল সাধনতত্ত্বের সার্থক প্রকাশ ঘটেছে।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *