“তেলেনাপোতা আবিষ্কার” বাস্তবতার ছাঁচে ঢালা শকুন্তলা কাহিনী বিচার
ভূমিকা: “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পের কাহিনী পরিকল্পনায় মহাকবি কালিদাসের “অভিজ্ঞান শকুন্তলম” নাটকের “শকুন্তলা কাহিনী”-র মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও সংস্কৃত সাহিত্যের “শকুন্তলা কাহিনী” তে অলৌকিক ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। আর “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পের “শকুন্তলা কাহিনী” তে রয়েছে বাস্তবতার ছোঁয়া। তাই প্রশ্ন উঠেছে তেলেনাপোতা আবিষ্কার শুধুই গল্প নাকি বাস্তবতার ছাঁচে ঢালা শকুন্তলা কাহিনী? দুটি কাহিনী বিশ্লেষণ
করে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
শকুন্তলা কাহিনী: কালিদাসের নাটকে শকুন্তলা কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র।তপোবনে মহর্ষি কণ্বের আশ্রমে পালিতা কন্যা।
শান্তস্বভাব,মিষ্টভাষী, সেবাপরায়ণি শকুন্তলা যৌবনে পদার্পণ করলে মহর্ষি তাকে আশ্রম এর দায়িত্ব দিয়ে সোমতীর্থে গমন করেন। এই সময় হস্তিনাপুরের রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়া করতে এসে আশ্রমে আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং শকুন্তলার রূপ-গুণে আকৃষ্ট হয়ে গান্ধর্ব মতে তাঁকে বিবাহ করেন। এরপর রাজ নামাঙ্কিত আংটিটি স্মারক হিসেবে প্রদান করে রাজা রাজধানীতে ফিরে যান। পতি চিন্তায় নিমগ্ন শকুন্তলা অতিথি দুর্বাসা মুনির সেবাকর্ম থেকে বিচলিত হয়ে অভিশপ্ত হন। যথাসময়ে মহর্ষি কণ্ব আশ্রম এ ফিরে শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রার ব্যবস্থা করেন। পথে শকুন্তলা রাজ প্রদত্ত আংটি হারিয়ে ফেলেন। দুর্বাসার অভিশাপ এর কারণে অভিজ্ঞান ছাড়া দুষ্মন্ত শকুন্তলা কে চিনতে না পেরে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে এক ধীবরের কাছ থেকে আংটিটি প্রাপ্ত হয়ে দুষ্মন্ত পূর্বস্মৃতি ফিরে পান এবং ঘটনাক্রমে পুত্র ভরত এবং স্ত্রী
শকুন্তলার সঙ্গে মিলন ঘটে।
তুলনা (মিল): “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পের যামিনী কে শকুন্তলা এবং নায়ককে দুষ্মন্তের আসনে বসালে আমরা
প্রায় একই ধরনের কাহিনী পাই। যামিনী শকুন্তলার মতোই বিলাস-বৈভব-বিবিক্ত গ্রাম্য বনলতা। তার চরিত্রেও শকুন্তলার মতোই শান্ত স্বভাব, কর্মনিপুণতা, সেবাপরায়নতা ও কর্তব্য জ্ঞানের অভাব নেই। দুষ্মন্তের আগমনের মতোই নায়ক মৎস্য শিকারের জন্যই এই গ্রামে এসে উপস্থিত হয় এবং পুকুরঘাটে মৎস্য শিকার কালে যামিনীর প্রথম দর্শন পায়। পরে যামিনীর আতিথ্য গ্রহণ করে। দুষ্মন্তের মতোই আবেগের বশে একসময় যামিনীকে বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি
দিয়ে ফেলে। শকুন্তলার মতোই যামিনী ও তার প্রতি অনুরক্ত হয়। পরে দুষ্মন্তের মতোই নায়ক ফিরে আসার আশ্বাস দিয়ে শহরে নিজ গৃহে ফিরে যায়। দুর্বাসার অভিশাপ এর মতই ম্যালেরিয়ার অভিশাপ তার জীবন থেকে মুছে দেয় তেলেনাপোতা এবং যামিনীর সান্নিধ্য লাভের সকল স্মৃতি। শকুন্তলার মতোই প্রতীক্ষায় দিন কাটাতে হয় যামিনীকে।
তুলনা (অমিল): তবে শকুন্তলার কাহিনীর সঙ্গে যামিনীর কাহিনীর বেশ কিছু তফাৎ রয়েছে। শকুন্তলাকে বিভিন্ন নায়ক এর দ্বারা প্রত্যখ্যাত হতে হয়নি। যা যামিনীর ক্ষেত্রে ঘটেছে। যামিনীর স্বভাব ও অনেক বেশী আধুনিক। দুষ্মন্ত শকুন্তলার বিবাহ হয়েছিল কিন্তু নায়ক ও যামিনীর বিবাহ হয়নি। দুর্বাসার অভিশাপ এর জন্য শকুন্তলা দায়ী ছিল কিন্তু ম্যালেরিয়ার অভিশাপের জন্য যামিনী দায়ী ছিল না। দুষ্মন্ত শকুন্তলার পরবর্তীকালে মিলন ঘটলেও নায়ক ও যামিনীর মিলনের সম্ভব হয়নি। তাছাড়া যামিনীর কাহিনীতে নেই কোন অলৌকিকতার ছোঁয়া। সম্পূর্ণ কাহিনীটিই বাস্তব।
সিদ্ধান্ত: উভয় কাহিনীর এই সমস্ত অমিল থাকলেও কোনো বিবাহযোগ্যা কন্যার সম্মুখে নায়ক এর আগমন,তার প্রতি অনুরক্ত হওয়া, তাকে বিবাহের জন্য বাগদান এবং পরিস্থিতির বিপাকে পড়ে তাকে বেমালুম ভুলে যাওয়া এই কাহিনীর মূলগত পার্থক্য নেই। তফাৎ যেটুকু আছে তা বাস্তবতার ছাঁচ গ্রহণ করার কারণে ঘটেছে। অর্থাৎ সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে সমালোচকের সাথে একমত হয়ে বলা যায় “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” বাস্তবতা ছাঁচে ঢালা শকুন্তলা কাহিনী।
-
- “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পের রোমান্টিকতা ও বাস্তবতার টানাপোড়েন নিয়ে আলোচনা করো
- “ডাকাতের মা” গল্পের সমাজচিত্র বর্ণনা |
- “বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতায় পড়শীর স্বরূপ আলোচনা করো |
- “বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতার ভাববস্তু আলোচনা করো
- “বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতায় বাউল সাধন তত্ত্ব আলোচনা করো |
- নীলধ্বজের চরিত্র আলোচনা করো