বাংলা ভাষার তিনটি পর্যায় বা স্তর আলোচনা করো | Class XI Note PDF |

বাংলা ভাষার তিনটি পর্যায় বা স্তর আলোচনা করো


 বাংলা ভাষার
তিনটি পর্যায় বা স্তর-

 

    ভাষা নিয়ত
পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের পথ পরিক্রমায় বাংলা ভাষা বেরিয়ে এসেছে হাজারেরও বেশি
বছর। তার সুদীর্ঘ বিবর্তন পথকে ভাষাতাত্ত্বিকগণ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন-

প্রথম পর্যায়-
প্রাচীন বাংলা (আনুমানিক ৯০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ)

দ্বিয়ীয় পর্যায়- মধ্য বাংলা (আনুমানিক ১২০০-১৭৬০/১৮০০ খ্রিস্টাব্দ)

            মধ্য বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- আদি মধ্য বাংলা (আনুমানিক ১২০০-১৫০০
খ্রিস্টাব্দ)

অন্ত-মধ্য
বাংলা (আনুমানিক ১৫০০-১৭৬০/১৮০০খ্রিস্টাব্দ)

তৃতীয়
পর্যায়
– আধুনিক বাংলা (আনুমানিক ১৭৬০/১৮০০ খ্রীষ্টাব্দ- বর্তমান কাল)

আদি বাংলা/প্রাচীন বাংলা: 

    ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিকরূপতাত্ত্বিক ও ছন্দরীতিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভাষাবিদগণ খ্রিস্টীয় দশম থেকে
দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত সময়কে আদি বাংলা বলে উল্লেখ করেছেন। এই আদি বা
প্রাচীন বাংলার নিদর্শন হল
  মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত চর্যাপদ
গ্রন্থটি। যার কবিদের মধ্যে রয়েছেন- লুইপা
, কাহ্ন পা, ভুসুকু পা প্রমুখ।

 

নিদর্শন: “টালত
মোর ঘর নাহি পড়বেষী

       হাঁড়ীত ভাত নাহি নিতি
আবেষী”

                            (৩৩ সংখ্যক চর্যা)

 

মধ্য বাংলা: 

    সময়ের সাথে সাথে প্রাচীন বাংলার সাথে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের
কারণে 
ভাষাবিদগণ
১২০১-১৭৬০ বা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত সময়কালের বাংলাভাষাকে নাম
দিয়েছেন মধ্য বাংলা। প্রায় ৬০০ বছর ধরে বিস্তৃত এই ভাষাকে আলোচনার সুবিধার্থে
দুটি ভাগে ভাগ করা হয়-

    ১. আদি মধ্য
বাংলা:
যা ১২০১ মতান্তরে ১৩৫০-১৫০০খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। বড়ু চন্ডীদাসের
“শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” গ্রন্থে এই ভাষার নিদর্শন মেলে।

    ২. অন্ত
মধ্য বাংলা:
যার বিস্তৃতি ১৫০১-১৭৬০/১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং সাহিত্যিক
নিদর্শন হল-বৈষ্ণব পদাবলী
, মঙ্গলকাব্য, চৈতন্য জীবনী কাব্য প্রভৃতি। মধ্য বাংলার নিদর্শন –

কে না বাঁশী বা এ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে

কে না বাঁশী
বা এ বাড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে”।
 

                     (-শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন)

আধুনিক বাংলা: 

    ১৭৬০ খৃষ্টাব্দ থেকে আধুনিক বাংলার সূত্রপাত হলেও ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন এবং বাংলা গদ্যের বিকাশই যুগান্তর ঘটিয়ে আধুনিক
বাংলার সূচনা করে। তাই ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃত
বাংলাভাষাকে আধুনিক বাংলা বলা হয়। বিদ্যাসাগর
, বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখ এ যুগের বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক।

নিদর্শন:

আমরা তো অল্পে খুশি; কী হবে দুঃখ করে?

আমাদের দিন
চলে যায় সাধারণ ভাত-কাপড়ে”।

                                                                          – ( জয় গোস্বামী)


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *