জনার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো | নীলধ্বজের প্রতি জনা Note PDF |


জনার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

জনার চরিত্র

সাহিত্যে মাঝে মাঝে এমন দু’একটি চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে যারা মর্যাদাবোধ
ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের পুণ্যালোকে উদ্ভাসিত- তেমনি এক তেজস্বিনী নারী জনা।তিনি রাজা
নীলধ্বজের স্ত্রী এবং প্রবীর জননী।

জনার প্রকৃত পরিচয় তিনি জননী, তবে তিনি ক্ষত্রতেজপূর্ণ অসামান্যা। পুত্রশোকে
কাতর হলেও পুত্রের বীরত্বগৌরবে তার চিত্ত ভরে উঠেছে। তাই তাঁর বক্তব্য –

“ক্ষত্রকূল  রত্ন পুত্র প্রবীর সুমতি,

সম্মুখ সমরে পড়ি
গেছে স্বর্গধামে,

কি কাজ বিলাপে
প্রভু”?

প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে বিদ্রোহিনী জনার হৃদয়ে জেগেছে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা।
অর্জুন অন্যায় যুদ্ধে তাঁর প্রিয় পুত্র প্রবীরকে বধ করেছে। ব্যথায় অধীর হলেও জনা
তাঁর অশ্রুকে পরিণত করেছেন প্রতিশোধের অগ্নিশিখায়। ব্যথার করুন রাগিনী পরিণত হয়েছে
বিদ্রোহের দুন্দুভিধ্বনিতে-

” টুট কিরীটির
গর্ব আজি রণস্থলে!

খন্ডমুণ্ড তার
আন শূলদন্ড শিরে!”

জনা যুক্তিবাদী। তিনি যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন যে দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরসভা,
খাণ্ডবদহন,ভীষ্ম -দ্রোণ-কর্ণ বধে অর্জুনের বীরত্ব নয় ছলনা বা তার প্রকাশ ঘটেছে। তাই
জনার যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন-“……..কহ মোরে, শুনি, মহারথী প্রথা কি হে এই, মহারথী?”

আত্মমর্যাদাবোধ জনা চরিত্রটিকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে।নীলধ্বজ যখন

পুত্রহত্যাকারী
শত্রু অর্জুনকে মিত্ররূপে বরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তখন এ ঘটনা জনার পক্ষে তীব্র অপমানজনক
হয়ে উঠেছে। তারই প্রকাশ লক্ষ্য করি জনার বক্তব্যে-

“সেবিছ যতনে
তুমি অতিথি রতনে-

  কি লজ্জা!”

 

সন্তানের বীরত্বে গর্বিত হলেও একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে তার কাছে ভুবন শূন্য।
মাতৃহৃদয়ে সেই হাহাকার ক্ষণে ক্ষণে আছড়ে পড়ে হৃদয়ের দুকূল ছাপিয়ে-“.. নিঃসন্তানা
করিল আমারে”! অথবা “হা পুত্র! শোধিলি কি রে তুই এইরূপ মাতৃধার”?- এভাবে
জনার চিরন্তন মাতৃ হৃদয়ের অশ্রুসজল রূপটি পাঠক চক্ষুকেও সিক্ত করে।

জনার জিহ্বা থেকে স্বামীর প্রতি বিদ্রুপ বাক্য বর্ষিত হলেও স্বামীর প্রতি
শ্রদ্ধা ও কোমলতা বিসর্জিত হয়নি। নারী ধর্মের অনুশাসন তাঁকে সংযত রেখেছে-“….
‌ গুরুজন তুমি,পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তোমারে”। অর্থাৎ জনা একদিকে যেমন বীরাঙ্গনা,
তেজস্বিনী তেমনি অন্যদিকে পুত্র স্নেহান্ধ ও পতিপ্রাণা।

বেদ,পুরাণ শাস্ত্রে তাঁর জ্ঞান অপরিমেয় কিন্তু আত্মগৌরবের শোচনীয় পরাভাবে
তিনি আত্মপ্রাণ বিসর্জনের সংকল্প নেন।

আত্মমর্যাদা রক্ষার যজ্ঞভূমিতে যারা মাতৃত্বের কুসুমকলিরূপ পুত্রকে আহুতি
দিতে কুন্ঠিত হন না। নারী-জীবনের অবলম্বন প্রেমাস্পদকে যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর মুখোমুখি
দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করেন এমনকি চরম ব্যর্থতায় আত্মবিসর্জনের মহাসংকল্প গ্রহণ করেন,
অশ্রুকে যারা পরিণত করেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গে জনা তাঁদেরই দলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top