“বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতায় পড়শীর স্বরূপ আলোচনা করো | PDF Download |

 


বাড়ির কাছে
আরশিনগর কবিতায় পড়শীর স্বরূপ

“বাড়ির কাছে
আরশিনগর” কবিতাটি রূপক প্রতীকের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি অনন্য কবিতা। কবিতায়
এক পড়শীর কথা বলা হয়েছে। আপাত অর্থে অগাধ জলরাশি বেষ্টিত আরশিনগর গ্রামে বসবাসকারী
এক প্রতিবেশী রূপে চিত্রিত হলেও তিনি আসলে বাউলের একান্ত কামনার ধন, সাধনার লক্ষ্যবস্তু,
মনের মানুষ অর্থাৎ স্বয়ং ঈশ্বর।

          তাঁর স্বরূপ বোঝাতে গিয়ে কবি বলেছেন তিনি আরশিনগর অর্থাৎ মানব মনেই বসত
করেন। অথচ তাকে দেখা যায় না।তরণী ছাড়া অগাধ জলরাশি পেরিয়ে যেমন সেই গ্রামে পৌঁছানো
যায় না, তেমনি বিষয়বাসনা রূপ প্রতিবন্ধকতা মনের মধ্যে বাস করা পড়শীর সাথে মিলনের
মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করে।

         কবি বর্ণিত সেই পড়শির অবয়ব অদ্ভুত। তার হাত -পা- কাঁধ -মাথা নেই। কবির
ভাষায় “ও তার হস্ত-পদ-স্কন্দ-মাথা নাই রে।” অর্থাৎ তিনি নিরাকার,অবয়বহীন,
উপলব্ধির বস্তু।

 

            তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কবি বলেন-

“ও সে ক্ষণেক থাকে শূণ্যের উপর

আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে”।

অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের
মতই পঞ্চভূতে গড়া অনুব্রহ্মাণ্ড এই মানবদেহে তিনি অবস্থান করলেও কখনো বস্তুজগতে কখনো
শূণ্য মার্গে তিনি বিচরণ করেন।

 

        এই পড়শীর এক বিশেষ গুণ আছে। তাঁর ছোঁয়াতে যম যন্ত্রণা দূর হয়। অর্থাৎ
তিনি যেমন অসীম, তেমনি অসীম তার ক্ষমতা। তাঁর সান্নিধ্য লাভ বা তার সাথে মিলিত হতে
পারলে ইহলোকের সকল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। তিনি বাউলের ঈশ্বর, মুক্তিদাতা।
তাই কবির ভাষায়-

” পড়শী যদি আমায় ছুঁত

আমার যম- যাতনা যেত দূরে”।

        তবে এই পড়শীকে ধরা ছোঁয়া যায় না। তিনি চির অধরাই থেকে যান। তিনি দূর
আকাশের তারা নন। দেহের মধ্যে কার দৃষ্টিপ্রদীপ। তবু তিনি অধরা ,অলভ্য। তাই

“আবার সে আর লালন একখানে রয়

তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে”।

        এভাবেই কবিতায় পড়শীর স্বরূপটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top