সাধু ও চলিত ভাষার সংজ্ঞা এবং পার্থক্য
ক্রমবিবর্তনের পথে ভাগ হয়ে হয়ে ওঠে
বৈচিত্র্যময়। গড়ে ওঠে তার বিভিন্ন রূপ। বাংলা লেখ্য বা সাহিত্যিক ভাষার তেমনি
দুটি রূপ গড়ে উঠেছে –
১. সাধুরূপ
২. চলিত রূপ
যে ভাষারীতির মধ্যে তৎসম শব্দ, ক্রিয়া- সর্বনাম ও অনুসর্গের পূর্ণরূপ এবং সমাস ও
সন্ধিবদ্ধ পদের প্রয়োগ প্রাধান্য পায়। যার বাক্যরীতি নিয়মাধীন এবং
বাক্যবিন্যাসে গাম্ভীর্য ও পরিপাট্য লক্ষ্য করা যায়, তাকে সাধু ভাষা বলে। আর যে ভাষারীতির মধ্যে তদ্ভব ও ও দেশী
বিদেশী শব্দের আধিক্য, ক্রিয়া- সর্বনাম ও
অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যাতে সমাস ও সন্ধিবদ্ধ পদের ব্যবহার কম
এবং বাক্যবিন্যাস অপেক্ষাকৃত শিথিলবদ্ধ এবং গাম্ভীর্যহীন, তাকে চলিত ভাষা বলে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-” সাধু ভাষা
মাজাঘষা,
সংস্কৃত ব্যাকরণ অভিধান থেকে ধার করা অলংকারে সাজিয়ে তোলা।
চলিত ভাষার আটপৌরে সাজ, নিজের চরকায় কাটা
সুতো দিয়ে বোনা”।
সাধু ও চলিত ভাষারীতির তুলনামূলক আলোচনা করলে দুই ভাষার বেশ
কিছু বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়-
১. সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার
বেশি কিন্তু চলিত ভাষায় তদ্ভব ও দেশী-বিদেশী শব্দের আধিক্য দেখা যায়। যেমন-
সাধু চলিত
বৃক্ষ, বিদ্যালয়, হস্ত গাছ,
স্কুল,হাত
২. সাধু ভাষায় সমাস ও সন্ধিবদ্ধ
পদের প্রয়োগ বেশি হলেও চলিতে তার ব্যবহার খুবই কম। যেমন-
( সাধু)- লোভানল, চীরবসন (চলিত)- লোভেরআগুন, ছেঁড়া কাপড়
৩. সাধু ভাষায় ক্রিয়া, সর্বনাম ও অনুসর্গের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয় কিন্তু চলিতে
ক্রিয়া,
সর্বনাম ও অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন-
সাধু চলিত
(ক্রিয়া) করিতেছি করছি
(সর্বনাম) যাহারা যারা
(অনুসর্গ) হইতে হতে
৪. যৌগিক ক্রিয়াপদের ব্যবহার সাধু
ভাষায় বেশি হলেও চলিত ভাষায় কম। যেমন-
সাধু চলিত
গমন করা, শয়ন করা যাওয়া, শোওয়া
৫. চলিত রীতির লিখিত রূপে মৌখিক
উচ্চারণের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় যা সাধুরীতিতে দেখা যায় না।যেমন-
সাধু চলিত
কর,
দেখে, কোন করো, দ্যাখে, কোনো
৬. দ্বক্ষরতা বা দ্বিমাত্রিকতা সাধু
ভাষার তুলনায় চলিত ভাষাতেই বেশি গুরুত্ব পায়।যেমন-
সাধু চলিত
জানালা, রবিবার জানলা, রোববার
৭. দ্বিবচন বাচক শব্দগুলি সাধু ও
চলিতে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। যেমন-
সাধু চলিত
ভাতৃদ্বয় দুই ভাই
৮.সাধু ভাষায় একবচনে “টি”, “খানি” এবং বহুবচনে “গুলি” নির্দেশক ব্যবহৃত
হয় কিন্তু চলিতে একবচনে “টা”,”খানা” এবং বহুবচনে “গুলো” নির্দেশকের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন-
(সাধু)- ছেলেটি, বইখানি, গাছগুলি
(চলিত)- ছেলেটা, বইখানা, গাছগুলো
৯. সাধুরীতিতে কর্তা- কর্ম- ক্রিয়া
এই পদ বিন্যাস ক্রমটি রক্ষিত হলেও চলিত রীতিতে তা সর্বদা রক্ষিত হয় না। যেমন-
(সাধু)- আমি উহাকে কিছু বলি নাই।
(চলিত)- কিছু বলিনি আমি ওকে।
১০. সাধু ভাষায় স্বরসঙ্গতি, অভিশ্রুতি, হ-লোপ প্রভৃতি
ধ্বনি পরিবর্তন বেশি না থাকলে চলিতে তা অনেক পরিমাণে লক্ষিত হয়। যেমন-
সাধু চলিত
(স্বরসঙ্গতি) বিলাতি বিলিতি
(হ-লোপ) ফলাহার ফলার
১১. প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহার সাধু
ভাষার তুলনায় চলিত রীতিতেই বেশি দেখা যায়।
• উদাহরণ-
সাধু: “রাজার ভাগিনাদের উপর ভার
পড়িল পাখিটাকে শিক্ষা দিবার। পণ্ডিতেরা বসিয়া অনেক বিচার করিলেন”-
রবীন্দ্রনাথ
চলিত: “চালিয়েছি। খালিতাঁত।
তাঁত না চালিয়ে খিঁচ ধরল পায়ে, রাতে তাই খালিতাঁত
চালালাম এটটু”- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
- ধ্বনিমূল বা স্বনিমের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
- বাক্যতত্ত্ব
- শব্দার্থের উপাদানমূল তত্ব নিয়ে আলোচনা করো
- বাংলা ভাষার উৎপত্তি সরলপথরেখা আলোচনা কর।
- সংস্কৃতকে বাংলা ভাষার জননী বলা কতটা যুক্তিযুক্ত?
- “চার ভাষাবংশের দেশ ভারত”- আলোচনা করো |
- বাংলা ভাষার তিনটি পর্যায় বা স্তর আলোচনা করো |
- শৈলীবিজ্ঞান | শৈলীবিজ্ঞানের পরিভাষা |
- ভাষাবিজ্ঞান | সংজ্ঞা, ভাষার দিক, ভাষার মাত্রা, ভাষার পরিবর্তন |
- ভাষাবিজ্ঞানে প্রধান তিনটি শাখা আলোচনা করো
- রূপমূল বা রূপিমের সংজ্ঞা দাও | রূপমূলের শর্ত বা বৈশিষ্ট্য লেখ ।
- ধ্বনির স্বরূপ আলোচনা করো