“তারা বলে ভয় করে যে কর্তা”- কারা এ কথা বলে? তাদের কিসের ভয়? কর্তা জবাবে কি বলেন?

তারা বলে ভয় করে যে কর্তা

 

       অসাধারণ সমাজমনস্ক এবং
বিশ্লেষণী ক্ষমতার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “কর্তার ভূত” রচনা থেকে
উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। ভূতগ্রস্ত দেশে অতীতে নিয়মতন্ত্রও প্রথাচারকে
  অন্ধভাবে
অনুসরণ করলেও স্বাধীন চিন্তা ভাবনা অধিকারী দু-একটা মানুষ এই ব্যবস্থার পরিবর্তন
চায়। কিন্তু ভূতের নায়েবের ভয়ে সেকথা প্রকাশ করতে পারে না।সেই সমস্ত ভীরু অথচ
ভূত শাসন থেকে মুক্তিকামী মানুষেরা এ কথা বলে।

 

       
দীর্ঘদিন ধরে ভূতগ্রস্ত দেশবাসী নির্বিচারে ভূত শাসন মেনে
এসেছে। সব ভাবনাচিন্তা ভূতের মাথায় চাপিয়ে নিশ্চিন্তে- নিশ্চেষ্ট- নিষ্ক্রিয়
জীবন যাপন করে এসেছে। ফলে তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে।
অন্তর থেকে হারিয়ে গেছে আত্মশক্তি। হারিয়ে গেছে সাহস। নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস
বা ভরসা নেই। তাই বুড়ো কর্তার ভূত দেশটাকে ছেড়ে দিলে অর্থাৎ অতীতে ধর্মতন্ত্র
এবং প্রথাচারকে ত্যাগ করলে দেশ বা সমাজকে পরিচালনা করার জন্য যে বাস্তব ও স্বাধীন
চিন্তা ভাবনা দরকার তা তাদের ছিল না। তাই দেশটা তারা চালাতে পারবে কিনা এ বিষয়ে
তারা সন্দিহান ও ভীত হয়ে পড়েছে। এই মানসিক দুর্বলতা বা আত্মশক্তির অভাবই এই
ভয়ের উৎস।

 

     
দেশের দুএকটা মানুষের এই উক্তির উত্তরে কর্তা বলেন-
“সেইখানেই তো ভূত”। মন্তব্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এতদিন দেশসুদ্ধু
লোক চোখ বন্ধ করে অদৃষ্টের চালে আদিম চলাচলে আভিজাত্য অনুভব করেছে। ফলে নতুন
চিন্তা ভাবনা নতুনকে গ্রহণের মানসিকতা ও সাহস গড়ে ওঠেনি।তাই কর্তা যদি দেশটাকে
ছেড়ে দেয় তারা কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে এ বিষয়ে ভীতি অনুভব করে। তাই কর্তা
বলতে চেয়েছেন প্রাচীন ধর্মীয় অনুশাসন
,প্রথাচার বা
কুসংস্কারের জাল ছিঁড়ে বের হতে না পারলে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়া যায় না। নতুন
ভাবে চিন্তা ভাবনা ও কাজ করার সাহস সঞ্চয় করা যায় না। শক্তি মরে ভীতির কবলে। সেই
ভয়ের কারণেই দেশ শুধু মানুষের কাঁধে ভূত অর্থাৎ অতীতের নিয়মতন্ত্র জাঁকিয়ে বসে
শাসন চালায়। মানুষের মুক্তির উপায় থাকে না।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *