কথাসাহিত্যে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়/ বনফুলের
অবদান (১৮৯৯-১৯৭৯)
✤ ভূমিকা: বিশ শতকের আধুনিক কথাসাহিত্যে যিনি
বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে মানুষের বহু বিচিত্র রূপের পরিচয় উদঘাটন করেছেন তিনি বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুল। পেশায় চিকিৎসক হলেও নেশায় তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণীর
সাহিত্যিক।
✤ সাহিত্য পরিচয়: বনফুল পঞ্চাশখানির ও বেশি উপন্যাস এবং অজস্র ছোট গল্পের স্রষ্টা।
তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলি হল- “তৃণখন্ড”, “বৈতরণীর তীরে”,
“দ্বৈরথ”, “মৃগয়া”, “জঙ্গম”, “স্থাবর”,
“ডানা”, “কষ্টিপাথর”, “কিছুক্ষণ”, “অগ্নিশ্বর”,
“ভুবনসোম”, “সীমারেখা” ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থ গুলির মধ্যে
“উর্মিমালা”, “অনুগামিনী”, “সপ্তমী”, “দূরবীন”
প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
✤ সাহিত্য আলোচনা: “জঙ্গম” উপন্যাসে
সমকালীন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষিতে বহু উৎকেন্দ্রিক চরিত্রের মানসিকতা ফুটে
উঠেছে। অন্ধকারে আবদ্ধ মানবজাতির অতীত ইতিহাসকে টেনে এনেছেন “স্থাবর উপন্যাসে”।
নারী স্বাধীনতা এবং সমাজে নারীর স্থান নিয়ে রচিত হয়েছে “কষ্টিপাথর”,
“ডানা” উপন্যাসে রয়েছে পক্ষীতত্ত্ব ও মনস্তত্ত্বের সমান্তরাল ছবি। নারী
চরিত্রের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে “কিছুক্ষণ” উপন্যাসে – এমনই বিচিত্র বিষয়ের
সন্নিবেশ ঘটেছে তাঁর উপন্যাসে। “কারণ” (৫০ টি শব্দে), “নিমগাছ”,
“স্বাধীনতা”, “বুধনি”, “শ্রীপতি সামন্ত”, “ছোটলোক”, “আইন”, “বাঘা”, “বুড়িটা”, “অর্জুন মন্ডল”
প্রভৃতি গল্প প্রাণধর্মে অত্যন্ত সজীব।
✤ অবদান ও বৈশিষ্ট্য:
• বিষয়বৈচিত্র্যে
বনফুলের উপন্যাস ও গল্পগুলি অনন্য। একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তিতে তাঁর রচনা ভারাক্রান্ত
নয় বরং বিচিত্র বিষয় সন্নিবেশ পাঠককে একঘেয়েমির ক্লান্তি থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে।
বিষয়বৈচিত্র্যের সাথে সাথে তাঁর রচনায় বিচিত্র বর্ণময় চরিত্র সৃষ্টি দক্ষতাও চোখে
পড়ে। তাঁর গল্পে বিচিত্র মানুষেরা ভিড় করে এসেছে এবং ঘটনার বিদ্যুৎ চমকে তাদের চরিত্রধর্ম
ইঙ্গিতময় হয়ে উঠেছে- এ যেন মানুষের চারিত্রিক অ্যানাটমি।
বনফুল ছিলেন আশাবাদী,
জীবনরসিক, মানবতাবাদী সাহিত্যিক। জীবনকে তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি
দিয়ে দেখেছেন এজন্য রবীন্দ্রনাথ তাঁকে “বিজ্ঞানী মেজাজের লেখক” বলেছেন।
নিম্ন শ্রেণীর মানুষের মাহাত্ম্যকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন।
বনফুল প্রকৃতিবাদী
হলেও মানুষকে তিনি উন্নত শ্রেণীর জন্তু ভাবেননি। রক্ত মাংসে গড়া মানুষের জৈব প্রবৃত্তির
মধ্যেও যে বড় স্বভাবের মানুষ্যপ্রকৃতি থাকে তিনি তারই সন্ধানে প্রয়াসী ছিলেন।
বনফুলের আরেকটি লক্ষণীয়
বৈশিষ্ট্য হলো গল্পে তিনি রিয়েলিস্ট এবং স্যাটায়ারিস্ট। তিনি একদিকে যেমন বাস্তববাদী
তেমনি অন্যদিকে মানুষ ও সমাজের মর্মে জমে ওঠা কলুষতার প্রতি তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ
করতে ছাড়েননি।
তবে তিনি মানব মনের
গভীরে খুব কমই ডুব দিয়েছেন।মানব স্বভাবের দোষ- গুণ, ত্রুটি- দুর্বলতার প্রতি আলোকপাত
করতে চেয়েছেন।
বাকপরিমিতি বনফুলের
রচনার আর একটি বৈশিষ্ট্য। চরিত্র, ঘটনা, পরিবেশ-পরিস্থিতি সবই তার বর্ণনায় চকিতে উদ্ভাসিত
হয়ে ওঠে।
তাঁর প্রতিভার ছোঁয়ায়
জীবনের ছোটখাটো দিকগুলি মুক্তার মতো নিটোল ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ড. ভূদেব চৌধুরী যথার্থই
বলেছেন -“বাংলা সাহিত্যে বনফুলের ছোট গল্পগুলি এক অসাধারণ বিস্ময়- সে কেবল আশ্চর্য
বাক সংক্ষিপ্তির কল্যাণেই নয় -শৈলী এবং ভাবানুষঙ্গে অনির্বচনীয়”।
✹ আধুনিক বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো
✹ আধুনিক কাব্য সাহিত্যে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো
✹ বাংলা গানের ইতিহাসে নজরুল ইসলামের অবদান
✹ বাংলা গানের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের অবদান
✹ বাংলা গানের ইতিহাসে রজনীকান্ত সেনের অবদান
✹ বাংলা গানের ইতিহাসে মান্না দের অবদান
✹ বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান
✹ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসুর অবদান
✹ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
✹ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
✹ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজ এর অবদান
❤ বাংলা কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো
❤ চিকিৎসাবিদ্যা / বিজ্ঞানচর্চায় নীলরতন সরকারের অবদান আলোচনা করো
❤ বিজ্ঞানচর্চায় বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো
❤ বিজ্ঞান সাধনায় জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো
❤ বাঙালি চিকিৎসাবিদ্যায় কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (বসু) এর অবদান বর্ণনা করো
❤ সংগীতে সলিল চৌধুরীর অবদান বর্ণনা করো
❤ বাংলা চলচ্চিত্রে তপন সিংহের অবদান বর্ণনা করো
❤ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায়ের অবদান লেখ
❤ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটকের অবদান লেখ
❤ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল, যামিনী, অবনীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, রামকিঙ্করের ভূমিকা
❤ বাংলা গানের ইতিহাসে নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ, রজনীকান্ত, মান্না দে, অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান