পঞ্চতন্ত্র (বই কেনা)- সৈয়দ মুজতবা আলী | সমস্ত SAQ প্রশ্ন-উত্তর | Class 11, Semester-II

সৈয়দ মুজতবা আলী লেখা পঞ্চতন্ত্র (বই কেনা) থেকে নতুন সিলেবাস উপযোগী সব প্রশ্ন-উত্তর দেওয়া হল।

পঞ্চতন্ত্র (বই কেনা)
পঞ্চতন্ত্র (বই কেনা)

পঞ্চতন্ত্র (বই কেনা) – সৈয়দ মুজতবা আলী

১. মাছি ধরা বিষয়ে পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিদের অভিমত লেখ। এই প্রসঙ্গে আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে এবং সান্তনা দিয়ে কি বলেছেন? 

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা “পঞ্চতন্ত্র” প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্তর্গত “বই কেনা” প্রবন্ধটিতে  “মাছি মারা কেরানি”-র ঠাট্টা রসিকতা প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিদের অভিমত প্রকাশ পেয়েছে। 

             পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে মাছিকে যেদিক দিয়ে ধরতে যাওয়া যাক না কেন সে ঠিক সময়ে উড়ে যাবে। কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, দুটো চোখ নিয়ে মাছির কারবার নয়। তার সমস্ত মাথাজুড়ে নাকি গাদা গাদা  চোখ বসানো আছে। আমরা শুধু মাছির মাথার সামনের দিকে চোখ দুটি দেখতে পাই। কিন্তু মাছির মাথার চতুর্দিকে চক্রাকারে চোখ বসানো আছে বলে সে একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়। 

         ∆ বিখ্যাত ফরাসি কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আনাতোল ফ্রাঁস সেই প্রসঙ্গে দুঃখ সূচক মন্তব্য করে বলেছেন যে- তার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকত তাহলে আচক্রবাল বিস্তৃত এই সুন্দরী ধরণীর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য তিনি একসঙ্গে দেখতে পেতেন।

        ∆ তবে আনাতোল ফ্রাঁস সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন যে তার মনের চোখতো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়। সর্বোপরি মনের চোখে বাড়ানো বা কমানো সম্পূর্ণ তার হাতে রয়েছে। তিনি যত নানা ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে থাকবেন ততই একটি একটি করে তার মনের চোখ ফুটতে থাকবে। 

২. “চোখ বাড়ানোর কথা তুললে চোখ রাঙাই”- চোখ বাড়াবার পন্থাটি কি? মন্তব্যটির প্রসঙ্গ লেখ। মনের চোখ ফোটানোর বিষয়ে রাসেল কি বলেছেন?

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “পঞ্চতন্ত্র” প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্তর্গত “বইকেনা” প্রবন্ধটি পড়ে জানতে পারি চোখ বাড়াবার পন্থা হলো বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি। 

      ∆ আলোচ্য মন্তব্যটির প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন যে পৃথিবীর অন্যান্য সভ্য জাতি যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত ততই বাঙালি জাতি আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোৎ ঘোৎ করে আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙায়। 

    ∆ এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক, চিন্তাবিদ বার্ট্রান্ড রাসেল মন্তব্য করেছেন যে সংসারের জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভেতর নিজস্ব পৃথিবী সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া। এইভাবে মনের ভিতরে যে যত বেশি নিজস্ব ভুবন সৃষ্টি করতে পারে ভব যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়। 

৩. “এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি উপায়ে”- অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করার উপায় কি? এই প্রসঙ্গে ওমর খৈয়ামের বক্তব্য কী ছিল?

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “পঞ্চতন্ত্র” প্রবন্ধ থেকে জানা যায় মনের মধ্যে অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করার দুটি উপায় আছে। যথা বই পড়ে ও দেশ ভ্রমণ করে। কিন্তু দেশ  ভ্রমণ করার মতো সামর্থ্য ও স্বার্থ সকলের থাকে না বলে শেষ পর্যন্ত একটি বিকল্প বাকি থাকে তা হল বই পড়া। 

     ∆ এ প্রসঙ্গে ফরাসি দার্শনিক ও সাহিত্যিক ওমর খৈয়াম বলেছিলেন – 

“Here with a loaf of bread beneath the bough,

A flask of wine, A book of  Verse an thou,

Beside me singing in the wilderness 

An wilderness is paradise enow”.

অর্থাৎ রুটি, মদ ফুরিয়ে যাবে। প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে। কিন্তু বইখানা অন্তত যৌবনা – যদি তেমন বই হয় তাই বোধহয় ওমর খৈয়াম বেহেশতের সরঞ্জামের তালিকা বানাতে গিয়ে বইয়ের কথা ভোলেননি। 

৪. “তবে তারা দেবভ্রষ্ট হবে”- কারা কিভাবে দেব ভ্রষ্ট হবে বলে বক্তার অভিমত?

 প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “পঞ্চতন্ত্র” প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্তর্গত “বই কেনা” প্রবন্ধটিতে “তারা”  বলতে প্রাবন্ধিক তাদেরকেই বুঝিয়েছেন যারা পুস্তকের সম্মান করতে জানে না। 

        আলোচ্য প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলতে চেয়েছেন যে বাঙ্গালিদের জ্ঞানার্জনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা থাকলেও বই কেনার প্রতি এক ধরনের অনীহা রয়েছে। বাঙালি তথা হিন্দুদের বিরাট গ্রন্থ রচনার দায়িত্ব নিজের হাতে লেখার মতো গুরুভার নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন “গণপতি” অর্থাৎ জনসাধারণের দেবতা গণেশ। গণেশ দেবকে হিন্দুরা সকল মঙ্গল কাজের শুরুতে বিঘ্নহন্তা রূপে স্মরণ করেন, পূজা করেন। অথচ সেই দেবতার মাধ্যমে সৃষ্ট পুস্তককে হিন্দু তথা বাঙালিরা সম্মান করে না। তাই প্রাবন্ধিক মনে করেছেন সেই “গণ”-ই পুস্তকের সম্মান না করে তারা তাদের পতিদেবকে অসম্মান করছে অর্থাৎ দেবভ্রষ্ট হচ্ছে। 

৫. “তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র”- অছেদ্য চক্রের পরিচয় দিয়ে কিভাবে এই চক্র ছিন্ন করতে হবে বলে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন তা লেখ। 

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা “বইকেনা” প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন যে বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না। আবার লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না। এই দুটি ঘটনার পরস্পরের সঙ্গে চক্রাকারে যুক্ত একেই লেখক অচ্ছেদ্য চক্র বলে উল্লেখ করেছেন। 

           ∆ প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন যে প্রশ্নোক্ত “অচ্ছেদ্য চক্র”কে ছিন্ন করে তার থেকে বেরিয়ে আসার পথ অত্যন্ত কঠিন। প্রকাশকের পক্ষে এটি কঠিন কারণ এই বিক্রির থেকে উপার্জিত অর্থেই সে তার পেটের ভাত জোগাড় করে। তাই সে দেউলিয়া হওয়ার ভয়ে ঝুঁকি নিতে বা এক্সপেরিমেন্ট করতে রাজি হয় না। একমাত্র ক্রেতাই পকেটের টাকা একটু খরচ করে বই কিনে বই বিক্রির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। প্রাবন্ধিকের মতে বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয়নি। বই কেনার বাজেট যদি তিন গুণ ও বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলেও দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং বই পড়ে পাঠক আনাতোল ফ্রাঁসের মাছির মতো অনেকগুলি মনের চোখ পেয়ে যাবে কিংবা রাসেলের মতো একগাদা নতুন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবে। এইভাবে প্রশ্নোক্ত “অচ্ছেদ্য চক্র” থেকে বেরিয়ে আসার পথ পাওয়া যেতে পারে। 

৬. বই কেনার ক্ষেত্রে পাঠকের বিভিন্ন মনোভাব বই কেনার প্রসঙ্গে কেমন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে?

 প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “বই কেনা” প্রবন্ধে বই কেনার প্রতি বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। 

      যে সমস্ত ব্যক্তি ঘোরতর সংসারী অর্থাৎ সংসারের প্রয়োজন না হলে কোনোভাবেই অযথা খরচ করেন না, তারা অনেক ভেবে-চিন্তে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে তবেই বই কেনে।

           যারা পাঁড় পাঠক তারা একনিষ্ঠ পাঠক। তারা বই পড়তে ভালবাসেন এবং বই কেনেন কারণ বইয়ের মধ্যেই তারা নানান ভুবনের সান্ত্বনা পান। প্রথমদিকে তারা বই কেনেন দাঁত মুখ খিঁচিয়ে, তারপর চেখে চেখে সুখ করে অর্থাৎ বইয়ের ভালো-মন্দ গুনাগুন যাচাই করে। শেষে বই কেনে ক্ষ্যাপার মতো অর্থাৎ বইয়ের মধ্যে নিজের মনের ভুবনকে খুজে পান বলে আগে-পিছে বই কেনেন। তারই মাঝে নেশাতুরের মতো বুঁদ হয়ে ডুবে থাকেন। তবে এটিই একমাত্র নেশা যাতে তাদের শারীরিক বা মানসিক কোনো ক্ষতিরই শিকার হতে হয় না।

৭. ” কিন্তু বাঙালি নাগর ধর্মের কাহিনী শোনে না”- কোন প্রসঙ্গে এরূপ মন্তব্য? এই বিষয়ে বাঙালির অভিমত কী? কথাটির মধ্যে সত্যতা কতখানি আছে?

 প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “বই কেনা” প্রবন্ধে জানতে পারি ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ “কোরআন”-এর সর্বপ্রথম যে বাণী মোহাম্মদ সাহেব শুনতে পেয়েছেন তাতে ছিল আল্লামা – বিল – কলমি অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন কলমের মাধ্যমে। আর কলমের আশ্রয় হলো পুস্তকে। “বাইবেল” শব্দের অর্থ বই পার excellence, সর্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক “The Book”। আর হিন্দুধর্মের যে দেবতাকে সমস্ত মঙ্গল কর্মের শুরুতে বিঘ্ন হন্তারূপে স্মরণ করতে হয় সে গণপতি অর্থাৎ গণেশদেব, হিন্দুদের বিরাটতম গ্রন্থ নিজের হাতে লেখার গুরুভার তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু বাঙালি পুরুষ বই কেনায় অবহেলা দেখায় এই প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক প্রশ্নদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।

∆ এ বিষয়ে বাঙালির অভিমত হল- “অত কাঁচা পয়হা কোথায় বাওয়া, যে বই কিনব?”

∆ বই কেনা প্রসঙ্গে বাঙালির যে অভিমত সেই বিষয়ে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন যে “কথাটির মধ্যে কনিষ্ঠা অর্থাৎ পরমাণু খুব সামান্য পরিমাণ সত্য লুকিয়ে রয়েছে, সেটা হলো এই যে বই কিনতে পয়সা লাগে ঠিকই – তবে তার বেশি কিছু নয়”।

৮. “মার্কটুয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখবার মতো ছিল”- মার্ক টুয়েন কে ছিলেন? তার লাইব্রেরির বিশেষত্ব কী ছিল?

 প্রাবন্ধিক মুজতবা আলির লেখা “বই কেনা” প্রবন্ধ থেকে জানা যায় মার্ক টুয়েন ছিলেন একজন মার্কিন রম্য ও হাস্যরসাত্মক সাহিত্যিক প্রভাষক।

        ∆ আলোচ্য প্রবন্ধে মার্কটুয়েনের লাইব্রেরির প্রসঙ্গ রয়েছে। তার লাইব্রেরির প্রধান বিশেষত্ব ছিল –  a. লাইব্রেরী খানা ছিল দেখার মতো:  মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিখানা ছিল দেখবার মতো। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বই, বই আর শুধু বই। এমনকি কার্পেটের ওপরেও গাদা গাদা বই স্তুপীকৃত হয়ে পড়ে থাকত। পা ফেলে চলাই কঠিন হতো। 

b. শেলফহীন লাইব্রেরী:  মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিটির কোনো শেলফ ছিল না। এ প্রসঙ্গে একজন বন্ধু মার্ক টুয়েনকে বলেছিলেন “বইগুলি নষ্ট হচ্ছে, গোটা কত শেলফ জোগাড় করছো না কেন”।

          মার্ক টুয়েন কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে ঘাড় চুলকে বলেছিলেন “ভাই, বলছ ঠিকই কিন্তু লাইব্রেরিটা যে কায়দায় গড়ে তুলেছি, শেলফ তো আর সেই কায়দায় জোগাড় করতে পারিনে,  শেলফ তো আর বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না”। 

          প্রকৃতপক্ষে শুধু মার্ক টুয়েনই নয়।দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই লাইব্রেরি গড়ে তোলেন কিছু বই কিনে আর কিছু বই বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ফেরত না দিয়ে। এই ছিল তার লাইব্রেরির বিশেষত্ব।

৯. “এক আরব পন্ডিতের লেখাতে সব সমস্যার সমাধান পেলুম”- এখানে কোন সমস্যার কথা বলা হয়েছে? তার সমাধানের কথা কি বলা হয়েছে?

 প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “বই কেনা” প্রবন্ধে জানতে পারি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ কিছু বই কেনে আর কিছু বই বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে। তারপর সেই বইগুলি ফেরত না দিয়ে একটা লাইব্রেরি গড়ে তোলে। আবার এমন কিছু বিবেক মানুষও আছেন যারা কোনো অবস্থাতেই পরের জিনিসে হাত দেন না। কিন্তু তারাই বইয়ের ক্ষেত্রে তাদের সর্বপ্রকার বিবেক বর্জিত হন। প্রশ্নদ্ধৃতাংশটিতে এই সমস্যার কথা বলা হয়েছে।

        ∆  এই সমস্যার সমাধানে আরব পণ্ডিত লিখেছেন যে ধনীরা ভাবে পৃথিবীতে অর্থ উপার্জন করা সবথেকে কঠিন কাজ। অন্যদিকে জ্ঞানীদের ধারণা অর্থ নয় জ্ঞান অর্জনই হল পৃথিবীর কষ্টসাধ্য কাজ। তবে ধনীর পরিশ্রমলব্ধ ধন যদি সে জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয় তবে জ্ঞানী অনেক ভালো পদ্ধতিতে সেই অর্থকে গঠনমূলক কাজে ব্যয় করতে পারে। অন্যদিকে জ্ঞানের উৎস যদি ধনীর হাতে সমর্পণ করা হয় তবে ধনীরা তার যথার্থ ব্যবহার অর্থাৎ পড়তে পারে না। তাই আরব পন্ডিত এই সমস্যার সমাধানে তার বক্তব্য শেষ করেছেন এই সিদ্ধান্ত দিয়ে যে- জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।

১০. “গল্পটি সকলেই জানেন কিন্তু তার গুঢ়ার্থ মাত্রকাল বুঝতে পেরেছি”- এখানে কোন গল্পের কথা বলা হয়েছে? পাঠ্যাংশ অনুসরণে গল্পটির মর্মার্থ লেখ।

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “বই কেনা” প্রবন্ধের উদ্ধৃতাংশে আরব্য উপন্যাসের এক গল্পের কথা বলা হয়েছে।

         গল্পটিতে রয়েছে- এক রাজা তার হেকিমের একখানা বই কিছুতেই করায়ত্ত করতে না পেরে তাকে খুন করে। তারপর বইটি হস্তগত হওয়ার পর রাজা বাহ্য জ্ঞান হারিয়ে বই পড়ছেন। কিন্তু পাতা এমনই জুড়ে গিয়েছে যে রাজামশাই হাতে থুতু লাগিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকে। অন্যদিকে হেকিম নিজের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন বলেই প্রতিশোধের ব্যবস্থা করে গিয়েছেন। তিনি বইয়ের পাতায় পাতায় কোণের দিকে মারাত্মক বিষ লাগিয়ে রেখেছিলেন। পাতা ওল্টানোর সময় সেই বিষ রাজার হাতে লেগে মুখে যাচ্ছিল। রাজাকে জানানোর জন্য এই প্রতিহিংসার খবরটি হেকিম বইয়ের শেষ পাতায় লিখে রেখেছিলেন। সেটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষ বাণের ঘায়ে মারা গেলেন।

       ∆  প্রকৃতপক্ষে প্রাবন্ধিক বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে তার মনে হয় বাঙ্গালীরা যেন এই আরব্য উপন্যাসের গল্পটি জানে আর সেই কারণে মরার ভয়ে বই কেনা ও বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।

১১. কাউকে মোক্ষম মারাত্মক অপমান করতে হলে তারা ওই জিনিস দিয়ে করে”- লেখক কোন প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন? কিভাবে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন? 

প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা “বই কেনা” প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন যে জ্ঞানের বাহনরূপে বই সংগ্রহের জন্য প্রকৃত মানুষ অকাতরে অর্থ খরচ করে কিন্তু বাঙালিরা তা করে না। অর্থাৎ বই কিনে পয়সা খরচ করাকে অধিকাংশ বাঙালি অপছন্দ করে। এই বিষয়ে প্রাবন্ধিক তার এক বন্ধুর কাছে দুঃখ প্রকাশ করলে সেই বন্ধু প্রাবন্ধিককে একটি গল্প শুনিয়েছিল। যে গল্পে এক ড্রইংরুম বিহারীনী নারীর কাছে একের বেশি বই কেনা অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ প্রাবন্ধিক জানেন বইয়ের প্রকৃত সম্মান করে ফ্রান্স। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

     ∆ প্রাবন্ধিক তার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করেছেন যে ফরাসিরা কাউকে অপমান করতে হলে বইকে অস্ত্র হিসাবে প্রয়োগ করে। যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তি তার দেশকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন তাহলে সেই ব্যক্তির সামনে তার দেশ সম্পর্কে কটুক্তি করা বা দেশকে অপমান করা হলে তবে সেই ব্যক্তি কোনভাবেই সেটা মেনে নিতে পারেন না। তাই যে ব্যক্তি কোনো দেশ প্রেমিক ব্যক্তিকে অপমান করতে চায়  সে সেই ব্যক্তির দেশকেই অপমান করে। নিজের অপমান অনেক সময় মেনে নেওয়া যেতে পারে কিন্তু দেশের অপমান বহুদিন দংশন করে। বিখ্যাত নোবেলজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক আঁদ্রে জিদে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রাণঘাতী বই লিখলে প্যারিসের স্থানীয়রা জিদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ, কটুক্তি করে। কিন্তু এই ঘটনায় জিদের অধিকাংশ বন্ধুবান্ধব চুপ করে থাকেন, জিদের হয়ে লড়েন না।  জিদে তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর লাইব্রেরীখানা নিলামে বেচে দেবেন বলে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেন। প্যারিসে এই খবর শোনা মাত্র সকলেই সেই নিলামে উপস্থিত হয়ে দেখেন যে, যারা জিদের হয়ে লড়েননি এবং তাদের যেসব বই তারা জিদকে স্বাক্ষরসহ উপহার দিয়েছিলেন জিদে সেগুলো মাত্রই নিলামে চড়িয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি শুধু জঞ্জালই বেঁচে ফেলেছেন।প্যারিসের লোক এই ঘটনার কথা শুনে অট্টহাসি হেসেছিল আর সেই খবর রয়টার বেতারে ছড়িয়েছিল। অপমানিত লেখকরা তিন ডবল দামে লোক পাঠিয়ে সেই বই কিনেছিলেন যাতে ঘটনাটা বেশি লোক জানতে না পারে। এই ঘটনা থেকেই লেখক প্রশ্নদ্ধৃত সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

নুন -জয় গোস্বামী | সমস্ত SAQ | একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Semester-II

Table of Contents

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top