শিকার কবিতায় কোন নির্মম সত্যের প্রকাশ ঘটেছে? Class 12 Bengali Note with PDF | ClassGhar |

শিকার কবিতায় কোন নির্মম সত্যের প্রকাশ ঘটেছে?

        কবিতায়
কল্পনার প্রকাশ ঘটলেও তারই মাঝে আত্মগোপন করে থাকে কোনো
  সত্য ।তাকে আবিষ্কার করে নিতে হয়। এই সত্য কখনো বা
সহজ-সুন্দর আবার কখনোবা ভয়ঙ্কর নির্মম। কবি জীবনানন্দ দাশের “শিকার” কবিতায়
কিছু সাংকেতিকতার আশ্রয়ে প্রকাশিত হয়েছে এক নির্মম সত্য ।

           জীবনানন্দ দাশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মানব সমাজের
মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বাস্তব রূপ চিত্র নির্মাণ করেছেন তাঁর এই কবিতায়।
কবিতার শুরুতেই দেখি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় এক ভোর। নীল আকাশের নীচে সবুজের
সমারোহ। আকাশের নীলাভ বক্ষে তখনও একটি নক্ষত্র বিদ্যমান জ্বলজ্বলে মুক্তার মত।প্রভাত
আলোক সম্পাতে দেশোয়ালিদের জ্বালা উজ্জ্বল আগুন নিষ্প্রভ। সকালের আলোয় শিশিরে
  আকাশের নীল আর অরণ্যের সবুজে  সৃষ্টি হয়েছে ময়ূরপুচ্ছের  বর্ণ বাহার।এমনই প্রকাণ্ড ভোরে চিতাবাঘিনীর হিংস্রতা
থেকে আত্মরক্ষা করে তীব্র জীবন কামনা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে সুন্দর বাদামি হরিণ। সবুজ
ঘাস খেয়ে শীতল নদীর জলে ক্লান্তি ঢেলে দিয়ে উল্লাস পাওয়ার জন্য। সাহসে সাধে সৌন্দর্যে
হরিণীদেরকে চমকে দেবার উদগ্র বাসনায়। কিন্তু তথাকথিত সভ্য মানুষের নিষ্ঠুর গুলির আঘাতে
শেষ হয়ে গেল তার প্রাণ এবং আকাঙ্ক্ষা।

               আমরা মানব সভ্যতার যারা বড়াই করে থাকি অথচ অসভ্যের
মত অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী কে ধ্বংস করি
 
স্বার্থ লোভ লালসা আর বিলাসিতা চরিতার্থের জন্য,
  তাদের অবিবেকী মানসিকতা ও হৃদয়হীনতার কথাই প্রকাশিত
হয়েছে “শিকার” কবিতায়।তাদেরই রসনা তৃপ্তির জন্য প্রাণ দিতে হয় প্রাণচঞ্চল
সুন্দর হরিণকে।তাদেরই সভ্য পোশাকের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসা দাঁত -নখে বিক্ষত
  হয় আরণ্যক শান্তি সৌন্দর্য ও পবিত্রতা। তাদেরই নির্মম
হিংস্রতায় রক্তাক্ত হয় অরণ্য পরিবেশ। যে হিংস্রতা চিতা বাঘিনীর চেয়েও ভয়ঙ্কর। খাদ্য
ও খাদকের সম্পর্ককে ছিড়ে
 
চিতা বাঘিনীর লোলুপতা থেকে মুক্তি পায় হরিণ। কিন্তু মানুষের নিষ্ঠুর বর্বরতা থেকে
মুক্তি নেই। জীবন সংগ্রামে যে হরিণটি জয়ী হতে চেয়েছিল, একরাশ আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্তির
কামনায় ফুলে উঠেছিল বুক, ধূমপায়ী টেরিকাটা আততায়ীর গুলিতে সে পৌঁছে যায় চিরঘুমের
দেশে- “সুন্দর বাদামি হরিণ এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল”!

 এই বিস্ময় 
চিহ্নের সাহায্যে কবি এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে অরন্যের প্রতি এই সভ্যতার আগ্রাসন
অনুচিত,
  বেমানান এবং ক্ষতিকর-
মানব সমাজের পক্ষে। আধুনিক সভ্যতার নির্মমতায় আরণ্যক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধ্বংস
হচ্ছে তার শান্তি স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতা। এই নির্মম সত্যই
  এই কবিতাটির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

 

Download Pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top