অমাধ্যম যুক্তি (আবর্তন ও বিবর্তন) | প্রশ্ন-উত্তর | Philosophy Xii Note PDF | ClassGhar |


 

অমাধ্যম
যুক্তি (আবর্তন ও বিবর্তন)

1.
অমাধ্যম অনুমান কাকে বলে ?

        অমাধ্যম কথার অর্থ হল কোন সাহায্য ছাড়াই অর্থাৎ সরাসরি।
তাই যে অবরোহ মূলক যুক্তিতে একটিমাত্র বচনকে আশ্রয় বাক্য রূপে ধরে তা থেকে অনিবার্যভাবে
একটি সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি আশ্রয় বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক বা সমব্যাপক
হয় তাকে অমাধ্যম যুক্তি বলে। যেমন-

    A-সকল কবি হয় ভাবুক।

     I- কোন কোন ভাবুক ব্যক্তি হয় কবি।

2.
মাধ্যম যুক্তি কাকে বলে?

মাধ্যম
কথার অর্থ হল কারো সাহায্য নেওয়া। তাই যে অবরোহ মূলক যুক্তিতে একাধিক পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত
আশ্রয় বাক্যের ভিত্তিতে অনিবার্যভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি আশ্রয়
বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক সমব্যাপক হয় তাকে মাধ্যম যুক্তি বলে। যেমন-

   A- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

   A- রাম হয় একজন মানুষ।

   A-রাম হয় মরণশীল।

3.
অমাধ্যম যুক্তি ও মাধ্যম যুক্তির মধ্যে পার্থক্য লেখ।

 a. অমাধ্যম যুক্তিতে একটিমাত্র আশ্রয় বাক্য থাকে।
অপরদিকে মাধ্যম যুক্তিতে একাধিক আশ্রয় বাক্য থাকে।

 b. অমাধ্যম যুক্তিতে একটি আশ্রয় বাক্যের ভিত্তিতে
সরাসরি সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়। কিন্তু এই যুক্তিতে একাধিক আশ্রয় বাক্যের পারস্পরিক
সম্বন্ধের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়।

c.
আবার, অমাধ্যম যুক্তিতে মাত্র দুটি পদ থাকে- উদ্দেশ্য পদ বিধেয় পদ। অপরদিকে এই যুক্তিতে
তিনটি পদে থাকে। যথা- পক্ষ পদ, মধ্যপদ ও হেতু পদ।

d.
অমাধ্যম যুক্তিতে কোন সংস্থান ও মূর্তির নাম নেই।
 মাধ্যম যুক্তিতে বহু সংস্থান ও মূর্তির উল্লেখ আছে।

 4.
অমাধ্যম যুক্তি কয় প্রকার ও কি কি?

অমাধ্যম
যুক্তি নয় প্রকার । যথা- আবর্তন, বিবর্তন, সমবিবর্তন, বচনের বিরোধানুমান, অন্তরাবরতন,
বিপরীত শব্দ ভিত্তিক আবর্তন, নিশ্চয়তা ঘঠিত অনুমান, গুন যোগে অনুমান, জটিল প্রত্যয়
যোগে অনুমান।

5.
আবর্তন কাকে বলে? যে আরোহমূলক অমাধ্যম যুক্তিতে ন্যায় সঙ্গত ভাবে স্থান পরিবর্তন ঘটিয়ে
আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য পদ কে সিদ্ধান্তে বিধেয় স্থানে এবং আশ্রয় বাক্যের বিধেয়
পদ কে সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য স্থানে বসিয়ে এবং গুণ অপরিবর্তিত রেখে একটি সিদ্ধান্ত
পাওয়া যায় তাকে আবর্তন বলে। যেমন-

   A. সকল
ছাত্র হয় পরিশ্রমী।

   ∴ I- কোনো কোনো পরিশ্রমী ব্যক্তি হয় ছাত্র।

6.
আবর্তনের নিয়ম গুলি কিকি ?

আবর্তনের
নিয়ম কে আমরা কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি –

ক.
গঠন সম্পর্কিত নিয়ম –

i.
আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য পদ সিদ্ধান্তে বিধেয় স্থানে বসে। ii. আশ্রয় বাক্যরে বিধেয়
পদটি সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্য স্থানে বসে।


.গুনের নিয়ম-

আশ্রয়
বাক্যের ও সিদ্ধান্তের গুণ একই থাকে। অর্থাৎ আশ্রয় বাক্য সদর্থক হলে
 সিদ্ধান্তটি সদর্থক এবং আশ্রয় বাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তটি
নঞর্থক হবে।

গ.
ব্যাপ্যতার নিয়ম-

যে
পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য নয়, সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হবে না। অর্থাৎ সিদ্ধান্তে
কোন পদকে ব্যাপ্য
 হতে গেলে তাকে অবশ্যই আগে
আশ্রয় বাক্যে ব্যপ্য হতে হবে।

7.
আবর্তন এর শ্রেণীবিভাগ করে দৃষ্টান্ত সহ ব্যাখ্যা করো।

আবর্তন
হলো দুই প্রকার। যথা- সরল বা সম
 
আবর্তন এবং অসরল বা অসম বা বিষম
 
আবর্তন।

সরল আবর্তন- যে আবর্তনে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের
পরিমাণ একই থাকে। তাকে সরল আবর্তন বলে।

যেমন-E
এবং I বচনের ক্ষেত্রে আমরা সরল আবর্তন হতে দেখি।

দৃষ্টান্ত 1. E-
কোনো বই নয় খাতা।

                  E- কোনো খাতা নয় বই।

           2. I- কোন কোন মানুষ হয় বোকা।

            I- কোন কোন বোকা প্রাণী হয় মানুষ।

 উভয়
যুক্তিতে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তে এর পরিমাণ এক থাকায় এটি সরল আবর্তন বলা যায়।
অসরল আবর্তন- যে আবর্তনে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের
পরিমাণ আলাদা
  হয় তাকে অসরল আবর্তন
বলে। সেই মতো আমরা
  A বচনের অসরল আবর্তন হতে
দেখি।

দৃষ্টান্ত-  A-সকল
ফুল হয় সুন্দর।

                I- কোন কোন সুন্দর বস্তু হয় ফুল।

এই
যুক্তিতে আশ্রয় বাক্য A বচন থেকে আমরা আবর্তনের নিয়ম অনুসারে সিদ্ধান্তটি I পেয়েছি।
দেখা গেছে এর আশ্রয় বাক্যটি সামান্য বচন হওয়ায় সিদ্ধান্তটি বিশেষ বচন হয়েছে। সেজন্য
A বচনের ক্ষেত্রে অসরল আবর্তন হতে দেখা যায়।

8.
নিষেধ মূলক আবর্তন কি ?

 আমরা
জানি আবর্তনে চতুর্থ ব্যাপ্যতা নিয়মটি লংঘন করার জন্য
  O বচনের আবর্তন কখনোই সম্ভব হয় না। তবে যুক্তি বিজ্ঞানীগণ
“নিষেধমূলক আবর্তন” নামে এক প্রকার নতুন আবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
  O বচনের আবর্তন দেখিয়েছেন। এই নিষেধমূলক আবর্তন টি
হল- যে আবর্তন প্রক্রিয়ায় O বচনের নঞর্থক চিহ্নটিকে বিধেয় পদের সঙ্গে যুক্ত করে
বচনটিকে সদর্থকে পরিণত করে তাকে আশ্রয় করে যে নতুন বচনটি সিদ্ধান্তরূপে প্রতিষ্ঠা
করা হয়, তাকে নিষেধ মূলক আবর্তন বলে। যেমন-

   O- কোনো
কোনো ছাত্র নয় সৎ।

   I- কোন কোন ছাত্র হয় অসৎ।

  ∴
I- কোন কোন অসৎ ব্যক্তি হয় ছাত্র।

            কিন্তু এই নিষেধমূলক আবর্তনকে প্রকৃত আবর্তন বলা যায়
না। কারণ- প্রকৃত আবর্তনে আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য পদ সিদ্ধান্তে বিধেয় হয়। এখানে
সেটি মেনেছে।

              দ্বিতীয় নিয়মে আশ্রয় বাক্যের বিধেয় পদ সিদ্ধান্তে
উদ্দেশ্য হয়। কিন্তু এখানে আশ্রয় বাক্যের বিধেয় পদ “সৎ” এই গুণটি
“অসৎ”- এই বিরুদ্ধ পদ রূপে সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্য হয়েছে।

               তৃতীয় নিয়মে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের গুণ একই
হয়। কিন্তু এখানে সেটি আলাদা হয়েছে। এইভাবে আবর্তনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় নিয়ম লঙ্ঘন
করায় এটি প্রকৃত আবর্তন নয়।

9.
A বচনের সরল আবর্তন
 কখনও সম্ভব নয় কেন?

আমরা
জানি সরল আবর্তন এর নিয়মানুসারে, যুক্তিতে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের পরিমাণ একই
থাকে। কিন্তু A বচনের সরল আবর্তন এর ক্ষেত্রে দেখি –

         A-সকল শিশু হয় সরল।

       A- সকল সরল প্রাণী হয় শিশু।

এখানে
আবর্তনের নিয়ম অনুসারে আশ্রয় বাক্যের বিধেয় পদ সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্য হয়েছে। আশ্রয়
বাক্যের উদ্দেশ্য পদ সিদ্ধান্তে বিধেয় হয়েছে।এদের গুণ ও একই আছে। কিন্তু এর চতুর্থ
ব্যাপ্যতার নিয়মটি লংঘন করেছে। সেজন্য আমরা মনে করি-A বচনের সরল আবর্তন কখনো সম্ভব
নয়।

10.
A বচনের সরল আবর্তন কোন কোন ক্ষেত্রে সম্ভব?

আমরা
সাধারণত জানি, আবর্তনের প্রকৃত নিয়ম অনুসারে A বচন কে সরল আবর্তন করার চেষ্টা করলে
আবর্তনের ব্যাপ্যতার
 
নিয়মটি লংঘন করার জন্য A বচনের সরল আবর্তন কখনো সম্ভব হয় না। তবে যুক্তি বিজ্ঞানীগণ
কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন দেখিয়েছেন যেগুলি নিম্নে উল্লেখ
করা হলো-

নির্দিষ্ট বিশিষ্ট অর্থে- যেসব A বচনের উদ্দেশ্য ও
বিধেয় পদ দুটি নির্দিষ্ট বিশিষ্ট পদ অর্থে বোঝায় সেই সব বচনের সরল আবর্তন সম্ভব হয়।
যেমন-

A-
এভারেস্ট হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ।

A-পৃথিবীর
সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ হয় এভারেস্ট।
        

   এখানে আশ্রয় বাক্য A বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়
পদ দুটি নির্দিষ্টভাবে বিশেষ পদকেই বোঝাচ্ছে। তাই এরূপ বচনে সরল আবর্তন সম্ভব হয়।

সঙ্গাঅর্থে -যেসব A বচন এর উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ দুটি
সংজ্ঞা অর্থে প্রকাশ পায়, সেই সব A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব হয়। যেমন-

    A- সকল মানুষ হয় বিচার শীল জীব।

    ∴ A-সকল বিচারশীল জীব হয় মানুষ।

 এখানে
মানুষ বলতে যেমন বিচারশীল জীবকে বোঝায়, তেমনি বিচারশীল বলতে সেই মানুষকেই বোঝায়।
কাজেই কোন A বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ সঙ্গা অর্থে বোঝালে সেইরূপ A বচনের
 সরল আবর্তন সম্ভব হয়।

সমার্থক অর্থে -যেসব A বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ
দুটি সমার্থক বোঝায়, সেইসব A বচনের
 
সরল আবর্তন সম্ভব হয়। যেমন-

    A-সকল
গাছ হয় উদ্ভিদ।

  A-সকল
উদ্ভিদ হয় গাছ।

    এখানে গাছ ও উদ্ভিদ এই পদ দুটি একই অর্থ প্রকাশ করায় এইরূপ বচনের সরল
আবর্তন সম্ভব হয়।

11.
বিপরীত পদ কি?
 

যে
পদের যা অর্থ তা থেকে যদি ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে বলে বিপরীত পথ।

 যেমন- সাদা-কালো।

12.
বিবর্তন কোন শ্রেণীর যুক্তি? বিবর্তন কাকে বলে? এর নিয়ম গুলি কি কি? বিভিন্ন প্রকার
নিরপেক্ষ বচনের বিবর্তিত রূপ দৃষ্টান্তসহ দেখাও। বস্তুগত বিবর্তন কাকে বলে? বস্তুগত
বিবর্তন কে প্রকৃত বিবর্তন বলা যায় কি?

 বিবর্তন হল একপ্রকার অবরোহ মূলক অমাধ্যম শ্রেণীর
যুক্তি। যে অবরোহ মূলক অমাধ্যম যুক্তিতে আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য পদ কে সিদ্ধান্তে
একই স্থানে রেখে এবং আশ্রয় বাক্যের বিধেয় পদের বিরুদ্ধ পদ কে সিদ্ধান্তে বিধেয় স্থানে
রেখে, গুণের পরিবর্তন ঘটিয়ে ও পরিমাণ একই রেখে একটি নতুন বচন পাওয়া যায় তাকে বিবর্তন
বলে। যেমন-

   A- সকল জবা ফুল হয় লাল।

   ∴
E- কোন জবা ফুল নয় অ-লাল।


বিবর্তনের নিয়ম- বিবর্তনের নিয়মগুলি
কে আমরা তিনটি শ্রেণীতে জানতে পারি।


গঠনের নিয়ম-

  i. এর আশ্রয়
বাক্যের উদ্দেশ্য পদ সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্য হয়।

 
ii. আশ্রয় বাক্যের বিরুদ্ধ পদ সিদ্ধান্তে বিধেয় হয়।
গুনের নিয়ম- এর আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের গুণ আলাদা
হয়। অর্থাৎ আশ্রয়বাক্য সদর্থক হলে সিদ্ধান্ত নঞর্থক এবং আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্ত
সদর্থক হয়।

পরিমাণের
নিয়ম- এর আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের পরিমাণ একই থাকে। অর্থাৎ আশ্রয় বাক্য সামান্য
হলে সিদ্ধান্তটি সামান্য এবং আশ্রয় বাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটি বিশেষ হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top