মৃত্যুঞ্জয়ের ক্রম পরিবর্তন “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্প অবলম্বনে লেখা | মৃত্যুঞ্জয় কিভাবে সর্বহারায় পরিণত হল |

  




       বাস্তবের ঘটনা সংবেদনশীল হৃদয়ে নাড়া দেয়।
মানসিক গঠন অনুযায়ী তা চরিত্রের স্বল্প অথবা বিস্তর পরিবর্তন ঘটায়। ফুটপাতে অনাহারে
মৃত্যুর ঘটনা মৃত্যুঞ্জয়ের মর্মমূলে আঘাত করে পাল্টে দিয়েছিল তার জীবনবোধকে। মানসিক
গঠন অনুযায়ী তা চরিত্রের স্বল্প অথবা বিস্তর পরিবর্তন ঘটায়। ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর
ঘটনা মৃত্যুঞ্জয়ের মর্মমূলে আঘাত করে পাল্টে দিয়েছিল তার জীবনবোধকে।

      মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায় কে
বাঁচে” গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় পঞ্চাশের মন্বন্তর বিধ্বস্ত দিনে অফিস যাওয়ার
পথে প্রথম ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা দেখে। এ ঘটনার আঘাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে
বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ঘটনার তীব্র প্রভাব তার পেটের খাদ্য টুকুও বের করে আনে।

     এই ঘটনার সুদুরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ায় সে এসে
শার্শিতে আটকানো মৌমাছির মতো মাথা খোড়ে এর সমাধানের সন্ধানে। নিজের চারবেলা পেট ভরে
খায় ,রিলিফ ওয়ার্ক করে না তাই ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে।
রাত কাটে বিনিদ্র ।খাদ্যে অরুচি জন্মায়।
 
প্রায়শ্চিত্তের জন্য সে নিজের এবং স্ত্রীর (টুনুর মা) এক বেলার ভাত বিলিয়ে দেয়।
মাইনের তারিখে সে সমস্ত মাইনেটা তুলে দেয় রিলিফ ফান্ডে।

     ক্রমশ তার অফিস যাওয়া অনিয়মিত হয়ে পড়ে। কাজে
ভুল করে। চুপচাপ বসে ভাবে। বাড়িতেও তাকে ঠিকমতো পাওয়া যায়না। ফুটপাথ ধরে ঘুরে বেড়ায়
। ডাস্টবিনের ধারে ,গাছের নিচে, ফুটপাতে আশ্রয়হীন নিরন্ন লাইন দিয়ে পড়ে থাকা মানুষদের
দেখে দেখে লঙ্গড়খানার অন্ন প্রার্থীর ভিড়। শোনে তাদের প্যানপ্যানানির মতো
  মন্দ ভাগ্যের কথা। তারপর সেটাও বন্ধ করে দেয় ।

      এভাবে একদিন মৃত্যুঞ্জয়ের অফিস জীবনে চিরছেদ
পড়ে।বন্ধ হয় বাড়ি ফেরাও। শরীর থেকে অদৃশ্য হয় সিল্কের জামা। কোমরে জড়িয়ে ওঠে একখণ্ড
ছিন্ন বস্ত্র। গায়ে জমে মাটির স্তর। দাড়িতে গ্রাস করে মুখমন্ডল। অসংখ্য অন্নহীনের
সাথে পড়ে থাকে ফুটপাতে। কাড়াকাড়ি করে লঙ্গরখানায় খিচুড়ি খায়। তাদেরই মতো একঘেয়ে
সুরে বলে- “গা থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও”।

      মৃত্যুঞ্জয়ের মনের কোণে বোধ হয় এই উপলব্ধি
জন্মেছিলো”-  দুর্ভিক্ষের দ্বারে
  বসে ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্ন পান”। তাই
একটি ঘটনাই
  তার সমগ্র চেতনাকে নাড়িয়ে
দিয়েছিল,
  ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল
আজন্মলালিত মধ্যবিত্ত জীবন চর্চা কে। মধ্যবিত্ত থেকে টেনে নামিয়ে ছিল হতদরিদ্র নিরন্ন
ফুটপাতবাসীর
  দুর্দশাগ্রস্ত অনিশ্চিত,
অসুস্থ জীবনে। তাদের সাথে সমান করে দিয়েছিল তাকে। এভাবেই স্বল্পকালের মধ্যে নিজস্ব
ক্ষুদ্র সমাজ, পেশা পরিবার ছেড়ে সে মিশে যায় ফুটপাতের জীবনে। পরিণত হয় সর্বহারায়।


Download Pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top