বচনের
বিরোধিতা ও বিরোধানুমান
● বিরোধিতার
অর্থ– সাধারণভাবে “বিরোধিতা”
বলতে বুঝি- বিরোধ /কলহ/বিবাদ/ঝগড়া ইত্যাদি। অর্থাৎ একই বিষয়কে কেন্দ্র করে দুটি পরস্পর
বিরোধী মত।
যেমন-
আমি বললাম আজ সারাদিন বৃষ্টি হবে। কিন্তু আমার বন্ধু বলল আজ সারাদিন বৃষ্টি হবে না।
এখন
এই যে বৃষ্টি হওয়া এই একটিমাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাদের দুই বন্ধুর এইযে ভিন্নমত
এটাই হলো বিরোধিতা।
● বচনের বিরোধিতা– বচনের” বিরোধিতা” বলতে আমরা একইভাবে কমপক্ষে
দুটি বচনের মধ্যে বিরোধিতা লক্ষ্য করি।
তাই
বলা যায় যখন দুটি নিরপেক্ষ বচনের বিষয় এক বোঝাতে তাদের উদ্দেশ্য ও বিধেয় একই থাকে,
কিন্তু তাদের মধ্যে গুন কিংবা পরিমাণ উভয়ের পার্থক্য থাকে, তাহলে সেই বচন দুটির পারস্পরিক
সম্বন্ধ কে বচনের বিরোধিতা বলে।
যেমন-A-সকল
ছাত্র হয় বিনয়ী।
E-
কোন ছাত্র নয় বিনয়ী ।
উক্ত
দৃষ্টান্তে দুটি বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় এক আছে। কিন্তু এদের মধ্যে গুণের পার্থক্য
থাকায় এদের মধ্যে বিরোধিতার সম্বন্ধ দেখা যায়।
● বিরোধিতার
বৈশিষ্ট্য- উক্ত সংজ্ঞার ভিত্তিতে
বচনের বিরোধিতার কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
1.
বচনের বিরোধিতায় কমপক্ষে দুটি বচন থাকবে।
2.
এর দুটি বচন অবশ্যই নিরপেক্ষ বচন হবে।
3.
দুটি বচনের বিষয়ক বোঝাতে বচন দুটির উদ্দেশ্যে বিধেয় একই থাকবে।
4.
বচন দুটির গুন আলাদা হতে পারে।
5.
বচন দুটির পরিমাণ আলাদা হতে পারে।
6.
দুটি বচনের গুণ ও পরিমাণ উভয়ই আলাদা হতে পারে।
7.
দুটি বচনের একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা কিংবা একটি মিথ্যা হলে অন্যটি সত্য হতে পারে।
বচনের
বিরোধিতাঃ- বচনের বিরোধিতা চার প্রকার-
i.
বিপরীত বা অতিবিষম
বিরোধিতা।
ii.
অধীন বিপরীত বা
অনুবিষম বিরোধিতা।
iii.
অসম বা অতিবর্তী
অনুবর্তী বিরোধিতা।
iv.
বিরূদ্ধ বিরোধিতা।
এখন বর্গক্ষেত্রের সাহায্যে
উক্ত চার প্রকার বিরোধিতার দৃষ্টান্ত সহ আলোচনা করা হল।
বিপরীত বিরোধিতা (A,E)- যখন দুটি সামান্য বচনে একই বিষয়ে বোঝাতে তাদের উদ্দেশ্য
ও বিধেয় এক থাকে, কিন্তু বচন দুটির মধ্যে গুণের পার্থক্য থাকে, তাহলে সেই বচন দুটির
পারস্পরিক সম্বন্ধ কে বিপরীত বা অতি বিষম বিরোধিতা বলে।
যেমন-
A-সকল শিশু হয় সরল।
∴ E- কোনো শিশু নয় সরল।
উক্ত
বচন দুটির মধ্যে দুটিই সামান্য বচন। এদের মধ্যে বিষয় এক বোঝাতে উদ্দেশ্য ও বিধেয়
একই থাকে। কিন্তু বচন দুটির মধ্যে গুণের পার্থক্য ঘটেছে অর্থাৎ এদের একটি সামান্য সদর্থক
এবং অন্যটি হল সামান্য নঞর্থক।সেজন্য এরূপ বচন দুটির মধ্যে বিপরীত বিরোধিতা সম্বন্ধ
আছে বলা যায়।
ii.
অধীন বিপরীত বিরোধিতা (I,O)- যখন দুটি বিশেষ বচনে একই বিষয় বোঝাতে তাদের উদ্দেশ্য
ও বিধেয় একই থাকে। কিন্তু বচন দুটির মধ্যে গুণের পার্থক্য থাকে, তাহলে সেই বচন দুটির
পারস্পরিক সম্বন্ধ কে অধীন বিপরীত বিরোধিতা বা
অনুবিষম বিরোধিতা বলে।
যেমন-
I-কোনো কোনো শিশু হয় সরল ।
O- কোন কোন শিশুর নয় সরল ।
উক্ত
বচন দুটির মধ্যে দুটিই বিশেষ বচন। এদের মধ্যে বিষয় এক বোঝাতে উদ্দেশ্য ও বিধেয় একই
থাকে ।কিন্তু বচন দুটির মধ্যে গুণের পার্থক্য ঘটেছে অর্থাৎ এদের একটি বিশেষ সদর্থক
এবং অন্যটি হল বিশেষ নঞর্থক। সেজন্য এরূপ বচন দুটির মধ্যে অধীন বিপরীত বিরোধিতার সম্বন্ধ
আছে বলা যায়।
iii. অসম বিরোধিতা (A+I,E+O)- যখন দুটি নিরপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য- বিধেয় ও গুণ একই
থাকে কিন্তু পরিমাণ আলাদা হয় ,তাহলে সেই বচন দুটির পারস্পরিক সম্বন্ধ কে অসম বিরোধিতা
বলে ।
যেমন-1.
A-সকল বই হয় দামি।
I-
কোন কোন বই হয় দামি।
2.
E- কোন শিল্পী নয় কবি।
∴ O- কোন কোন শিল্পী নয় কবি ।
উক্ত
বিরোধিতার দুটি জোড়ের প্রথমটিতে দুটি নিরপেক্ষ বচনের মধ্যে উদ্দেশ্য-বিধেয় ও গুণ একই
আছে। কিন্তু পরিমাণ আলাদা হয়েছে। একটি সামান্য বচন এবং অন্যটি বিশেষ বচন।
আবার,
দ্বিতীয়টিতে একইভাবে দুটি নিরপেক্ষ বচনের উদ্দেশ্য- বিধেয় একই। অর্থাৎ দুটি নঞর্থক
বচন। কিন্তু এদের পরিমাণ আলাদা। তাই উক্ত দু’টি জোড়ের মধ্যে অসম বিরোধিতার সম্বন্ধে
দেখা যায়।
iv.
বিরুদ্ধ বিরোধিতা (A+O,E+I)- যখন দুটি নিরপেক্ষ বচনে উদ্দেশ্য বিধেয় একই থাকে।
কিন্তু গুণ ও পরিমাণ আলাদা হয়। তাহলে সেই বচন দুটির পারস্পরিক সম্বন্ধ কে বিরুদ্ধ
বিরোধিতা বলে ।
যেমন-
1.A-সকল মানুষ হয় চালাক।
∴ O-কোনো কোনো মানুষ নয় চালাক।
2.
E- কোনো মানুষ নয় চালাক।
∴ I-
কোন কোন মানুষ হয় চালাক।
উক্ত
বিরোধিতার দুটি জোড়ের প্রথমটি তে দুটি নিরপেক্ষ
বচনের মধ্যে উদ্দেশ্য-বিধেয় একই আছে। কিন্তু গুণ ও পরিমাণ আলাদা হয়েছে। অর্থাৎ একটি
সামান্য সদর্থক এবং অন্যটি বিশেষ নঞর্থক ।
আবার
দ্বিতীয় টি তে একইভাবে দুটি নিরপেক্ষ বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় একই আছে। কিন্তু গুণ
ও পরিমাণ আলাদা হয়েছে। অর্থাৎ একটি সামান্য নঞর্থক এবং অন্যটি বিশেষ সদর্থক বচন।
অসম
বিরোধিতা কে প্রকৃত বিরোধিতা বলা যায় কি ?
অসম
বিরোধিতা কে প্রকৃত বিরোধিতা বলা যায় কিনা এ নিয়ে যুক্তি বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য
আছে ।জানা যায় অনেক যুক্তি বিজ্ঞানী মনে করেন প্রকৃত বিরোধিতায় দুটি বচন একসঙ্গে
সত্য বা মিথ্যা হতে পারে না ।সে ক্ষেত্রে দুটি বচনের মধ্যে একটি বচন সত্য হলে অন্য
বচনটি মিথ্যা হবে। কিংবা তাদের মধ্যে একটি বচন মিথ্যা হলে অন্যটি সত্য হবে ।যেটি নিম্নোক্ত
দৃষ্টান্তের সাহায্যে বোঝা যায়-
1.A-
সকল গোলাপ হয় সুগন্ধি।(সত্য )
∴ I-কোন
কোন গোলাপ হয় সুগন্ধি।(সত্য )
2.E-
কোন ছাত্র নয় বোকা।(মিথ্যা)
∴ O-
কোনো কোনো ছাত্র নয় বোকা।(মিথ্যা )
উক্ত
দু’টি দৃষ্টান্তে বচন দুটির মধ্যে সত্য-মিথ্যার বিরুদ্ধ সম্পর্ক না থাকায় অসম বিরোধিতা
কে প্রকৃত বিরোধিতা বলা যায়না।
তবে অনেক যুক্তি বিজ্ঞানী মনে করেন অসম বিরোধিতা
কে যারা প্রকৃত বিরোধিতা বলে মানতে রাজি নন ,তারা বিরোধ কথাটিকে সংকীর্ণ অর্থে দেখেছেন।
কিন্তু ব্যাপক অর্থে আমরা জানি দুটি বচন এর মধ্যে গুণ এক থাকলেও পরিমাণ এর পার্থক্য
থাকায় অসম বিরোধিতা কে প্রকৃত বিরোধিতা বলাই যুক্তিযুক্ত।