টুনুর
মায়ের চরিত্রটি আলোচনা করো।
সাহিত্যে
মাঝে-মাঝে এমন দু-একটা নারী চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যারা মনেপ্রাণে স্বামীর
আদর্শকে অন্তরে লালন করে। তার প্রকৃত সহযোগী হয়ে ওনাকে জীবনের পাথেয় বলে মনে করেন।
টুনুর মা তাদেরই একজন। সন্তানের নামে পরিচিত এই নামহীনা চরিত্রটি “কে বাঁচায়
কে বাঁচে “গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী। শীর্ণকায় অথচ মমতাময়ী নারী। স্বামীর
সহধর্মিণী ও সহমর্মিণী হওয়া যদি সতী-সাধ্বী স্ত্রীর conception হয় তবে তার সকল দৃষ্টান্ত টুনুর মা। তিনি স্বামী অন্তপ্রাণ।
ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যু দেখে স্বামীর যে অস্থিরতা তা তিনি কেবল মেনেই নেননি, মনেও নিয়েছেন
।স্বামীর মতো তিনিও অর্ধাহারে দিন কাটান ।মৃত্যুঞ্জয়ের কথায়-” কত বলেছি ,কত
বুঝিয়েছি, কথা শুনবে না। আমি না খেলে উনি খাবেন না”। শয্যাশায়ী অবস্থায়ও তিনি
স্বামীর খোঁজে তৎপর। স্বামীর সহযাত্রী হতে তিনি প্রস্তুত। নিখিলের কথার উত্তরে তিনি
বলেন – “উঠতে পারলে আমিই তো ওর সঙ্গে ঘুরতাম ঠাকুরপো”। টুনুর মা উদার হৃদয়ের
অধিকারিণী। মৃত্যুঞ্জয়ের মতোই সর্বহারা নিরন্ন মানুষের প্রতি তার সত্যিকারের দরদ,
সহানুভূতি ও মমত্ববোধ ছিল। এ বিষয়ে নিখিলের কাছে তার স্বীকারোক্তি উল্লেখ করা যায়
-“ছেলেমেয়ে গুলির জন্য সত্যি আমার ভাবনা হয় না। কেবলই মনে পড়ে ফুটপাতের ওই
লোকগুলির কথা”। চরিত্রটি এমনই মানবিকতাবোধে উজ্জ্বল।
স্বামীর
আদর্শের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ছিল তার সুগভীর। তাই মন্বন্তর বিধ্বস্ত মানুষগুলির জন্য
তার প্রতিক্রিয়া মৃত্যুঞ্জয়ের মতোই সমগোত্রীয়। তার বক্তব্য -“ওর সঙ্গে থেকে
থেকে আমিও অনেকটা ওর মতো হয়ে গেছি”। অথবা “উনি পাগল হয়ে যাচ্ছেন, আমারও
মনে হচ্ছে যেন পাগল হয়ে যাব”। গল্পে
টুনুর মায়ের চরিত্র খুবই স্বল্প পরিসরে। কিন্তু তার চারিত্রিক ব্যঞ্জনা ও শিল্প দায়িত্ব
পরিণতির পক্ষে অপরিসীম। মানসিক দৃঢ়তা, মানবিকতা ,নিরন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং
সার্থক সহধর্মিনী হিসাবে চরিত্রটি বাস্তব ও সজীব। মৃত্যুঞ্জয় কে সমর্থন করে সেই নায়ক
চরিত্রটিকে উজ্জ্বল করে তোলার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা যথেষ্ট ।
More Notes:- English