রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান ? পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও | Is political science a science | PDF |



>


রাষ্ট্রবিজ্ঞান
কি বিজ্ঞান? পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।
  
অথবা,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান পদবাচ্য? আলোচনা করো।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে
বিজ্ঞান বলার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি:-

           সাধারণভাবে বিজ্ঞান বলতে এক সুসংবদ্ধ বিশেষ
জ্ঞানকে বোঝায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞান শব্দটি যুক্ত হওয়ায় তা অনেকদিন আগেই
বিতর্কের সূত্রপাত করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে সংশয় ও মতবিরোধ রয়েছে।
এই কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা যায় কি না তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা পক্ষে
ও বিপক্ষে যে মতামত প্রকাশ করেছেন তা আলোচনা করা যেতে পারে।

পক্ষে যুক্তি

(1) সুসংবদ্ধ জ্ঞান;
যে-কোনো সুসংবদ্ধ জ্ঞানকে বিজ্ঞান আখ্যা দেওয়া হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানও একটি বিজ্ঞান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, শ্রেণি বিভক্তিকরণ, কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের
মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আচার-আচরণ, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে সুসংবদ্ধ
জ্ঞান অর্জন সম্ভব।

(2) সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা : বিজ্ঞানের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও আহরিত জ্ঞান থেকে একটি
সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই সূত্রগুলি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের পথনির্দেশ
করতে সাহায্য করে। লর্ড ব্রাইসের মতে, ব্যক্তির রাজনৈতিক আচরণ জটিল হলেও তার মধ্যে
একটা সামঞ্জস্য দেখা যায় যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল ভিত্তিস্বরূপ।

(3) সর্বজনীন বিধি প্রণয়ন: অ্যারিস্টটল, ফাইনার, বোদাঁ, ব্রাইস প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে কয়েকটি সর্বজনীন বিধি ও পদ্ধতি প্রণয়নে
প্রয়াসী হয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোনো নির্দিষ্ট গবেষণাগার না থাকলেও বিভিন্ন
দেশের রাজনৈতিক জীবনের বিবর্তন, উত্থান-পতনের ইতিবৃত্ত, রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন
ইত্যাদির গবেষণা সর্বজনীন বিধি প্রণয়নে সাহায্য করে।

(4) তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে শুধুমাত্র তত্ত্বের ওপর গুরুত্ব
আরোপ করা হয় না। বিজ্ঞানের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও তথ্যের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে
পৌঁছেতে হয়। মানব ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ের তথ্যগুলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে মার্কস
ও এঙ্গেলস সমাজবিকাশের ধারার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

বিপক্ষে যুক্তি

(1) 
অনিশ্চিত প্রকৃতিবিশিষ্ট
: রাষ্ট্রবিজ্ঞান
যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তাদের প্রকৃতি অনিশ্চিত, জটিল ও পরিবর্তনশীল। পদার্থবিদ্যা
বা রসায়নশাস্ত্রের মতাে এখানে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও তত্ত্ব গঠন সম্ভব নয়।

(2) গবেষণাগারে পরীক্ষার অযোগ্য : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচিত বিষয়গুলি কোনো নির্দিষ্ট
গবেষণাগারে পরীক্ষা করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র মানবসমাজ হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর গবেষণাগার।
এই গবেষণাগার রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর ইচ্ছা অনুসারে নির্মিত হয় না। একজন ভৌতবিজ্ঞানী গবেষণাগারে
যেভাবে গবেষণার অনুকূল পরিবেশ কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করতে পারেন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর
পক্ষে তা সম্ভব নয়।

(3) তথ্য অপেক্ষা তত্ত্বের প্রাধান্য
: বিজ্ঞানীরা যেভাবে তত্ত্ব ও তথ্যের
ওপর সমান গুরুত্ব দিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুশীলন করে থাকেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তা দেখা যায়
না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তথ্যের চেয়ে তত্ত্ব বেশি প্রাধান্য পায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক
অনুশীলনের পরিবর্তে দার্শনিক চিন্তার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

(4) সর্বসম্মত পদ্ধতির অনুপস্থিতি : বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো সর্বসম্মত পদ্ধতি বলে
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কিছু দেখা যায় না। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন
ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন।

উপসংহার
পরিশেষে উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান যেমন ভৌতবিজ্ঞানের
সমপর্যায়ভুক্ত বিশুদ্ধ বিজ্ঞান নয়, তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক চরিত্রকেও সম্পূর্ণ
অস্বীকার করা যায় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান-গবেষণা যে সম্পূর্ণ অনুমাননির্ভর, একথা
কোনোভাবেই বলা যায় না। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে পদার্থবিদ্যা বা গণিতশাস্ত্রের মতো বিশুদ্ধ
বিজ্ঞান বলা না গেলেও এটি যে একটি সুসংহত সামাজিক বিজ্ঞান, সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে
পারে 
না

প্রাচীন ভারতে ইতিহাসের উপাদানহিসেবে লিপির গুরুত্ব আলোচনা করো

শিক্ষার ব্যপক অর্থ বলতে কী বোঝায়| ব্যপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top