প্রাচীন ভারতে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপির গুরুত্ব আলোচনা করো | Class XI Note With PDF |


ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপির গুরুত্ব

     ইতিহাসের
বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্যে প্রাচীন লিপিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন
ধাতু, প্রস্তরখণ্ড, ঘরবাড়ি বা মন্দিরের গায়ে লিখিত প্রচুর প্রাচীন লিপি আবিষ্কৃত
হয়েছে। এইসব লিপি থেকে ইতিহাসের বহু তথ্য পাওয়া যায়। নিম্নে লিপির গুরুপ্তগুলি আলোকপাত
করা হল।

(১)
অবিকৃত উপাদান: লিপিগুলি বিভিন্ন ধাতু,
পাথর প্রভৃতির ওপর খোদিত হয় বলে এগুলি অন্যান্য উপাদানের মতো প্রাকৃতিক কারণে সহজে
নষ্ট হয়ে যায় না। তাই লিপি থেকে তুলনামূলকভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্যতা তথ্য পাওয়া
সম্ভব।

(২)
পক্ষপাতহীন উপাদান: ইতিহাসের অন্য উপাদানগুলি
দীর্ঘকাল ধরে নানা হাতে পড়ে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু শিলালিপির ক্ষেত্রে সেই ধরনের
বিকৃতি ঘটা সম্ভব  হয় না। ফলে লিপিগুলিকে প্রাচীন
যুগের তুলনামূলক পক্ষপাতহীন  উপাদান হিসেবে
গণ্য হয়।

(৩) সময়কাল নির্ণয়ে: লেখগুলিতে ব্যবহৃত বর্ণমালার
আকৃতি ও বিবর্তন থেকে তার সন-তারিখ অনুমান করা যায়। কোনটি আগের আর কোটি পরের তা বিভিন্ন
যুগের লিপির তুলনামূলক বিচারে নির্ণয় করা সম্ভব।

(৪) রাজ্যসীমা নির্ণয়ে: লিপির প্রাপ্তিস্থান থেকে রাজাদের রাজ্যসীমা সম্পর্কে
মোটামুটি ধারণা করা যায়। যেমন অশোকের লিপিগুলির প্রাপ্তিস্থান থেকে তাঁর রাজ্যসীমা
সম্পর্কে অনেকটা স্পষ্ট ধারণা করা যায়।

(৫)
যথার্থ তথ্য প্রদানে: প্রাচীন রাজকাহিনিগুলি
লোকচক্ষুর আড়ালে লিখিত হয় বলে তাতে অনেক কাল্পনিক ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু লিপিগুলি
জনগণের সামনেই স্থাপন করা হত বলে এতে কাল্পনিক কাহিনি যুক্ত হওয়া কঠিন ছিল। অর্থাৎ
সাহিত্য অপেক্ষা শিলালিপিতে অনেক যথার্থ তথ্য পাওয়া সম্ভব।

(৬)
তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ে: বিভিন্ন
প্রাচীন সাহিত্য বা অন্যান্য উপাদান থেকে পাওয়া ঐতিহাসিক তথ্যগুলি কতটা সঠিক তা সে
যুগের শিলালিপির সঙ্গে তুলনামূলক বিচারের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেতে পারে।

(৭)
শাসনবিষয়ক তথ্য প্রদানে: বিভিন্ন রাজা
বা রাজবংশের শিলালিপিগুলি থেকে সে যুগের যুদ্ধবিগ্রহ, রাজকীয় নির্দেশ, মন্দির নির্মাণ,
ভূমিদান, ধর্মপ্রচার, বিশেষ কোনো স্মরণীয় ঘটনা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।

(৮)
শিল্প-উৎকর্ষ সম্বন্ধে জানতে: লিপিতে ব্যবহৃত
পাথর থেকে সে যুগের ভাস্কর্যশিল্পের এবং ধাতু থেকে সে যুগের ধাতুশিল্পের উৎকর্ষ সম্পর্কে
জানা যায়।

(৯)
বৈদেশিক সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে: বিদেশে
প্রাপ্ত শিলালিপিগুলি থেকে সমকালীন ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য, বিদেশের সঙ্গে। স্কৃতিক
 যোগাযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।

উপসংহার: প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে লিপি যে
অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে, সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ইতিহাসবিদ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, “প্রাচীন
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে লিপি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ”। ইতিহাসবিদ ফ্লিট বলেছেন যে, “সাহিত্য, স্থাপত্য-ভাস্কর্য,
মুদ্রা প্রভৃতি থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, তার সত্যতা নির্ণয়ে লিপিগুলি যথেষ্ট সাহায্য
করে থাকে”। ইতিহাসবিদ ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন
যে, “ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপিগুলির গুরুত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা সর্বাধিক”।


 Downoad Pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top