দর্শনের ধারণা | গুরুপ্তপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর | একাদশ শ্রেণী |

 দর্শনের ধারণা

 

1. ভারতীয় দর্শন কয় ভাগে বিভক্ত ও কি কি?

দুই ভাগে বিভক্ত-আস্তিক
দর্শন ও নাস্তিক দর্শন।

 

2. আস্তিক ও নাস্তিক দর্শন বলতে কী বোঝো?

আস্তিক- আস্তিক বলতে
আমরা সাধারণত বুঝে থাকি যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী। কিন্তু ভারতীয় দর্শন মতে- যে দার্শনিক
সম্প্রদায় বেদের প্রামাণ্যে বিশ্বাসী। যারা ঈশ্বর, কর্মফল, জন্মান্তর, আত্মা, পাপ-
পুণ্য ইত্যাদি অতীন্দ্রিয় সত্ত্বার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে তাদের আস্তিক দর্শন বলে।

যেমন- সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা
ও বেদান্ত দর্শন সম্প্রদায়।

 

নাস্তিক- নাস্তিক
বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যারা ঈশ্বর মানে না। কিন্তু ভারতীয় দর্শন মতে- যেসব দার্শনিক
সম্প্রদায় বেদের প্রামাণ্য বিশ্বাস করে না। যারা ঈশ্বর, আত্মা, কর্মফল, জন্মান্তর
ইত্যাদি অতীন্দ্রিয় সত্ত্বার অস্তিত্ব অস্বীকার করে তাদের নাস্তিক দর্শন বলে।

যেমন – চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন সম্প্রদায়।

 

3. আস্তিক দর্শন কয় ভাগে বিভক্ত ও কি কি?
দুই ভাগে বিভক্ত-বেদ স্বতন্ত্র ও বেদানুগত।

বেদ স্বতন্ত্র দর্শন-
যে আস্তিক দার্শনিক সম্প্রদায় বেদের প্রামাণ্যে বিশ্বাসী কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে
নিজেদের যুক্তিতর্কের প্রভাব ফেলেছেন তাদের বেদ স্বতন্ত্র দর্শন বলে।

যেমন – সাংখ্য, যোগ, ন্যায়,বৈশেষিক দর্শন
সম্প্রদায়।

বেদানুগত দর্শন-
যে আস্তিক দর্শন সম্প্রদায় বেদকেই একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ রূপে স্বীকার করেন, তাদের
বেদানুগত দর্শন বলে।

যেমন- মীমাংসা ও বেদান্ত দর্শন সম্প্রদায়।

 

4. ষড়দর্শন কি?

ভারতীয় দর্শনে বেদের
প্রামাণ্যে বিশ্বাসী আস্তিক সম্প্রদায়ভুক্ত সাংখ্য,যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক ও মীমাংসা,
বেদান্ত এই ছয়টি দর্শন সম্প্রদায়কে একত্রে ষড়দর্শন বলে।

 

5. ভারতীয় দর্শনে মোট দার্শনিক সম্প্রদায়
কয়টি ও কি কি?

মোট নয়টি। যথা-
চার্বাক, বৌদ্ধ, জৈন, সাংখ্য, যোগ,বৈশেষিক, মীমাংসা, বেদান্ত

 

6. বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতার
নাম কি?

চার্বাক দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- এটি বিতর্কিত।

a. কারো মতে চার্বাক
ঋষি।

b. কারো মতে চর্ব
ধাতু।

c. কারো মতে চারু+বাক্।

d. কারো মতে দেবগুরু
বৃহস্পতি।

 

বৌদ্ধ দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- গৌতম বুদ্ধ

জৈন দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- মহাবীর জৈন

সাংখ্য দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- মহর্ষি কপিল মুনি

যোগ দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- মহর্ষি পতঞ্জলি

ন্যায় দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- মহর্ষি গৌতম

বৈশেষিক দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- মহর্ষি কণাদ মুনি

মীমাংসা দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- মহর্ষি জৈমিনী

বেদান্ত দর্শন:

প্রতিষ্ঠাতার নাম- মহর্ষি বদরায়ণ

 

7. ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থ কয়টি ও কি কি?

পুরুষার্থ চারটি। যথা- ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ

ধর্ম- ধারণ করা

অর্থ- বিষয়

কাম-কামনা বা বাসনা

মোক্ষ-দুঃখের আতন্তিক
নিবৃত্তি

 

8. পঞ্চমহাভূত কি কি?

পঞ্চ মহাভূত হল- ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম

 

ক্ষিতি- পৃথিবী বা
মাটি

অপ-জল

তেজ- আগুন

মরুৎ-বাতাস

ব্যোম-আকাশ

 

9. ভারতীয় দর্শনের অপর নাম কি?

মোক্ষ শাস্ত্র

 

10. মীমাংসা দর্শনের আদি গ্রন্থের নাম কি?

জৈমিনি সূত্র

 

11. কোন দর্শনকে “প্রমাণ শাস্ত্র”
বলা হয়?

ন্যায় দর্শনকে

 

12. কোন দর্শনকে “প্রমেয় শাস্ত্র”
বলা হয়?

বৈশেষিক দর্শনকে

 

13. মানব জীবনের পরম পুরুষার্থ কি?

মোক্ষ লাভ

 

14. মোক্ষকে “পরম পুরুষার্থ” বলা
হয় কেন?

মোক্ষ লাভ করলে মানুষের
সমস্ত কামনা-বাসনার অবসান হয় এবং পূর্ণ জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পায়, সেই জন্য মোক্ষকে
“পরম পুরুষার্থ” বলা হয়।

 

15. ভারতীয় দর্শনকে অন্য কি নামে অভিহিত
করা হয়?

“মোক্ষবাদী
দর্শন” নামে অভিহিত করা হয়।

 

16. প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের আকর গ্রন্থের
নাম কি?

বেদ।

 

17. ভারতীয় দর্শনে কতকগুলি মৌলিক ধারণা বা
প্রত্যয় সম্পর্কে আলোচনা করো।

 

a. প্রমা কি?

“প্র”
কথার অর্থ হল শ্রেষ্ঠ এবং “মা” কথার অর্থ হল জ্ঞান।এককথায় শ্রেষ্ঠ বা যথার্থ
জ্ঞান। তাই ভারতীয় দর্শন মতে কোনো বিষয়ের যথার্থ জ্ঞানকে প্রমা বলে।

যেমন- টেবিলের উপর ফুলদানি প্রত্যক্ষের জ্ঞান
হলো প্রমা জ্ঞান।

 

b. অপ্রমা কি?

ভারতীয় দর্শন মতে
কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে
  অযথার্থ বা মিথ্যা
জ্ঞানকে অপ্রমা বলা হয়।

যেমন- অন্ধকারে দড়িকে দেখে সাপ ভাবা।

 

c. প্রমেয় কি?

ভারতীয় দর্শনে জ্ঞানের
বিষয়কে প্রমেয় বলে। যেমন- ফুলের উপর একটি মৌমাছি বসে থাকার বিষয়টি হলো প্রমেয়।

 

d. প্রমাতা কি?

ভারতীয় দর্শনে কোনো
বিষয়ের যথার্থ জ্ঞান লাভ কারীকে প্রমাতা বলে।

 

e. প্রমাণ কি?

ভারতীয় দর্শনে যথার্থ
জ্ঞান লাভের উপায়কে প্রমাণ বলে।

 

18. ভারতীয় দর্শনে প্রমাণ কয়টি ও কি কি?

প্রমাণ 6 টি। যথ-
প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ, উপমান, অর্থাপত্তি, অনুপলব্ধি

 

প্রত্যক্ষ: ইন্দ্রিয়ের
সঙ্গে বিষয়ের সাক্ষাৎ সন্নিকর্ষের মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ হয় তাকেই প্রত্যক্ষ বলে।

যেমন- টেবিলের উপর একটি ফুলদানি প্রত্যক্ষ
করা।

 

অনুমান: ভারতীয়
দর্শনে “অনু” কথার অর্থ হল “পশ্চাৎ” এবং “মান” কথার
অর্থ হল “জ্ঞান”। এককথায় “পশ্চাৎ জ্ঞান”। তাই ভারতীয় মতে যে
জ্ঞান অন্য জ্ঞানকে অনুসরণ করে তাকেই অনুমান বলে। কিংবা বলা যায় যে মানসিক প্রক্রিয়ায়
জানা বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অজানা বিষয়ে জ্ঞান লাভের চেষ্টা করা হয় তাকেই অনুমান
বলে।

যেমন- ধোঁয়া দেখে আগুনের জ্ঞান লাভ।

 

উপমান: “উপমা”
কথার অর্থ হল মিল বা সাদৃশ্য। তাই যে প্রক্রিয়ায় দুটি ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে কতগুলি
বিষয়ের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে যখন তাদের মধ্যে অন্য কোনো বিষয়ের সাদৃশ্যের অস্তিত্ব
অনুমান করা হয়,তাকেই উপমান বলে। যেমন- দূরে গরুর সদৃশ একটি প্রাণীকে দেখে তাকে গবয়
নীল গাই বলে চিনতে পারা।

 

শব্দ: ভারতীয় দর্শনে
বলা হয়েছে- “আপ্ত বাক্যং শব্দ
  প্রমাণঃ”-
অর্থাৎ আপ্ত বাক্য হল শব্দ প্রমাণ। এখানে আপ্ত বলতে বোঝায় বিশ্বাসযোগ্য। তাই কোনো
বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির বিবৃতি থেকে যে জ্ঞান লাভ হয় তাকে শব্দ প্রমাণ বলে।

যেমন- অনু-পরমানু সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বচন।

 

         ঈশ্বর, আত্মা, কর্মফল,
জন্মান্তর ইত্যাদি অতীন্দ্রিয় জগত বিষয়ে মুনি-ঋষিদের বচন হল শব্দ প্রমাণ।

 

অর্থাপত্তি: এখানে
“অর্থ” বলতে বোঝায় বিষয়। তাই কোনো বিষয়ের আপত্তির ভিত্তিতে যে জ্ঞান লাভ
হয় তাকে অর্থাপত্তি প্রমাণ বলে। যেমন- দূরে কোন বস্তুকে দেখে তাকে মানুষ বা গাছের
গুড়ি ভাবা।

 

অনুপলব্ধি:
“অনুপলব্ধি” কথার অর্থ হল কোন বিষয়ের উপলব্ধি না হওয়া। তাই বস্তুর অভাব
প্রত্যক্ষে যে জ্ঞান লাভ হয় তাকে অনুপলব্ধি প্রমাণ বলে।

যেমন- “ঘটাভাববিশিষ্ট ভূতলম্”-
অর্থাৎ মেঝেতে ঘটের অভাব প্রত্যক্ষ করা।

 


19. কোন দার্শনিক কয়টি প্রমাণ মেনেছেন ও
কি কি?

a. চার্বাক দার্শনিক সম্প্রদায় -1 টি – প্রত্যক্ষ
প্রমাণ

b. বৌদ্ধ ও বৈশেষিক দার্শনিক সম্প্রদায়
– 2 টি – প্রত্যক্ষ ও অনুমান

c. সাংখ্য, যোগ ও জৈন দার্শনিক সম্প্রদায়
– 3 টি – প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ

d. ন্যায় দার্শনিক – 4 টি – প্রত্যক্ষ, অনুমান,
উপমান, শব্দ

e. মীমাংসা দার্শনিক সম্প্রদায় – 5 টি –
প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ ও অর্থাপত্তি

f. বেদান্ত দার্শনিক – 6 টি প্রমাণ – প্রত্যক্ষ,
অনুমান, উপমান, শব্দ, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি

 

20. ভারতীয় দর্শন কি?

ভারতীয় দর্শন হল
সত্য দর্শন।

 

21. জৈনদের প্রথম তীর্থঙ্কর কে ছিলেন?

ঋষভ দেব।

 

22. কোন সম্প্রদায়কে নাস্তিক শিরোমনি বলা
হয়?

চার্বাক দর্শনকে।

 

23. ভারতীয় দর্শনের মূল উৎস কি?

বেদ।

 

24. আস্তিক অথচ ঈশ্বরে অবিশ্বাসী কারা?

সাংখ্য।

 

25. পুরুষার্থ বলতে কী বোঝো?

মানুষের জীবনের প্রকৃত
আদর্শকে যে মানবিক মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করা যায় সেই মানবিক মূল্যবোধকে পুরুষার্থ
বলা হয়।

যেমন- ধর্ম,অর্থ, কাম ,মোক্ষ

 

      এককথায় পুরুষার্থ
হলো মানুষের পরম কাম্য বস্তু যা তার চরম অভিষ্ঠ সিদ্ধ করে।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top