সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর আমার বাংলা গল্পে “তিনকুলে কেউ ছিলনা তার“- কার কথা বলা হয়েছে? তার দুর্দশাগ্রস্ত সংগ্রামী জীবনের পরিচয়
দাও। দ্বাদশ শ্রেণি নোটস Download Free PDF। নীচে PDF Download Link দেওয়া আছে, ডাউনলোড করে নিন।
“আমার বাংলা”
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
মানবতাবাদী সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় অপরিসীম সহানুভূতিতে
অবিভক্ত বাংলাদেশের মর্মকথাকে কান পেতে আর মন দিয়ে শুনেছেন। “আমার বাংলা”
গ্রন্থ তার সেই অভিজ্ঞতার স্মারক। অনুভব এর বাণী মূর্তি। গ্রন্থের ভূমিকায় লেখক তার
কয়েক দিনের সঙ্গী, পিতৃ মাতৃহীন
দাফার মর্মস্পর্শী জীবনকথা ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেক স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যারা চিরকাল
জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয় কিন্তু হঠাৎ সকল ব্যর্থ আকাঙ্ক্ষাকে পাথেয় করে একদিন পাড়ি
দিতে হয় মৃত্যুর পরপারে, দাফা তাদেরই একজন।
তিনকূলে কেউ ছিলনা তার। কে ছিল তার মা-বাবা
কিছুই জানেনা দাফা। ছোটবেলায় সে ছিল গরু চোর। চুরির দায়ে কতবার যে মার খেতে হয়েছে
তাকে সেই প্রমাণ তার শরীরে আজও বর্তমান। ললিত নামের কোন এক সহৃদয় ভদ্রলোক তাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রয় দেয় নিজের বাড়িতে।
তাকে দেওয়া হল গরুর রাখালী। বদলে গেল দাফা। তার জীবন প্রবাহিত হলো নতুন পথে। ললিতের স্ত্রীকে সে মা বলে ডাকল।সে হয়ে গেল ললিতের ছেলের মত।
দাফাকে
সবাই হাবাগোবা বলেই জানত। সেই হাবাগোবা দাফা পড়তে শিখল। দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে শুরু
হলো দাফার সংগ্রামী জীবন। সমিতির ঝান্ডা নিয়ে প্রচারে যাওয়া, হাটে হ্যান্ডবিল বিলি
করা, চোঙা ফোঁকা সব কাজেই ডাক পড়তো দাফার। দায়িত্ব সহকারে সবকিছুই পালন করত সে।
এক বুক স্বপ্ন ছিল দাফার। ইচ্ছে ছিল একবার শহরে যাবার।
শহরে নাকি কত আলো। তাছাড়া রেলগাড়ি দেখেনি সে কখনো। এসব দেখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে
উঠত সেই পাহাড়তলীর ছেলেটির মনটা।
এরপর কয়েকটা বছর কেটেছে দেশভাগ আর সাম্প্রদায়িক হানাহানি
নিয়ে। সত্যিকারের মানুষের মত করে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার ফিরে পেতে দাফা নেমেছিল
প্রত্যক্ষ সংগ্রামে। একদিন শোনা গেল বুকে গুলি লেগে তার মৃত্যু হয়েছে। খুব জোর লড়েছিল। কিন্তু বন্দুকের সঙ্গে পারেনি। দাফা মরতে চায়নি,
চেয়েছিল মানুষের মতো মাথা উঁচু করে বাঁচতে। শুধু পাহাড়তলীর দাফা নয় বাংলাদেশের অনেক
মানুষই মগ্ন ছিল সেই প্রত্যাশায়।
এভাবে মেঘলা আকাশে এক ঝলক বিদ্যুতের মতো দাফার সংগ্রামী
জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।