“ভারত বর্ষ” গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো | দ্বাদশ শ্রেনি Bengali Note PDF | Classghar |

 


“ভারত বর্ষ” গল্পের নামকরণের সার্থকতা

         “নামকে যারা নামমাত্র মনে করেন আমি তাহাদের দলে
নই”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 অর্থাৎ
নাম শুধু নাম মাত্র নয় তা সুদুরপ্রসারী। ব্যঞ্জনাগর্ভী এবং রচনাটির অন্তর্নিহিত সত্যের
বাণীময় রূপ। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের “ভারতবর্ষ” গল্পের নামকরণ ঘটনা বা চরিত্র
কেন্দ্রিক নয়- তা ব্যঞ্জনাধর্মী।

         নামকরণের সার্থকতা বিচার এর পূর্বে গল্পের কাহিনী সম্পর্কে
ধারণা করে নেওয়া প্রয়োজন। গ্রামীণ নিস্তরঙ্গ জীবন। ধান কাটার শীতের মরসুম। অকাল বর্ষণে
কর্মহীন। দুশ্চিন্তা মুক্তির আড্ডা চলে বাজারে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এক বুড়ির আগমন
এবং বটতলায় আশ্রয়। ফাপি পরবর্তী রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। বুড়ির নিঃসাড় দেহ আবিষ্কার।হিন্দুর
মৃতদেহ ভেবেই হিন্দুরা তাকে নদীর চরে ফেলে দেয়।বিকালে মুসলমানরা দেহটি তুলে আনে। মুসলমান
বুড়ির দেহ কবর দিতে চায়। বচসা। মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত যুযুধান দু’পক্ষের দাঙ্গার
উপক্রম। সবাইকে অবাক করে বুড়ির জেগে ওঠা। তার স্বরূপটি চিনে নেবার নির্দেশ দিয়ে দূরের
দিকে প্রস্থান। গল্পের সংক্ষিপ্ত কাহিনী এটুকুই।
              

           কাহিনী বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট দেখা যায় গল্পকার গল্পের
কোথাও ভারতবর্ষ নামটি উল্লেখ করেননি। উল্লেখ করেননি কোন স্থানের নাম। কারণ গল্পের নামকরণই
অকুস্থলের সুনিশ্চিত ইঙ্গিত দেয়। এ গল্প আবহমান ভারতবর্ষের গল্প। ভারত মহামানবের মিলনক্ষেত্র।
ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তবুও কুসংস্কার, অশিক্ষা আর অজ্ঞানতা
আজও মানুষকে সংকীর্ণ ধর্মীয় বৃত্তের মধ্যে সীমায়িত করেছে। এই অন্ধ ধর্মীয় সংস্কার
অসহায় মানুষের জীবনের কথা ভাবেনা। ভাবে মৃত্যুর পর সৎকারের কথা। সৃষ্টি করে বিভেদ।
রচনা করে নিজেকে ধ্বংস করার পথ। তাই ভারত ইতিহাস বারংবার কলঙ্কিত হয়েছে হিন্দু-মুসলমানের
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। কিন্তু ভারতের সংস্কৃতি বিভেদের নয়- ঐক্যের। বৈচিত্রের মধ্যে
ঐক্যের দেশ ভারতবর্ষ। সব জাতি -ধর্মের মানুষকে ভারত তার স্নেহময় অমল- শ্যামল কোলে
স্থান দিয়েছে। মানবিক পরিচয় কে সুদৃঢ় করেছে। তাই গল্পে শুভ চেতনার প্রতীক বুড়িটা
জেগে উঠে বিবদমান দুই পক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে সে কে তা চিনে নিতে। সব মৌলবাদী চক্রান্তকে
ব্যর্থ করে সে যে ভারতবাসী ,এই সত্য পরিচয়টি তার আচরণের মাধ্যমে না-বলা কথায় প্রকাশ
করেছে। এভাবে গল্পের “ভারত বর্ষ” নামকরণের মধ্য দিয়ে একদিকে ভারতের সাম্প্রদায়িক
বিভেদের কঠোর বাস্তব রূপ কে তুলে ধরার সাথে সাথে ভারতআত্মার
  সত্য স্বরূপটি দিনের আলোর মত পরিষ্কার করে দিয়েছেন
পাঠকের সামনে। “ভারতবর্ষ” নামকরণের মাধ্যমে গল্পকার ভারতের একটি অঞ্চলের
ঘটনার মাধ্যমে সমগ্র ভারতবর্ষকে চিনিয়ে দিয়েছেন। এভাবেই নামকরণটি তার আভিধানিক অর্থকে
ছাড়িয়ে সুগভীর ব্যঞ্জনাময় এবং শিল্প সমন্বিত হয়ে উঠেছে।


Download Pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top