পাঠক্রম বলতে কী
বোঝ?
পাঠক্রম- পাঠক্রম শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ “শিক্ষার্থীকে
শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার পথ বা মাধ্যম”।
পাঠক্রম বলতে বোঝায়-
শিক্ষার্থীদের সমস্ত রকমের অভিজ্ঞতা যা দ্বারা শ্রেণীকক্ষে, কর্মশালায়, খেলার মাঠে
এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে লাভ করে। এই অর্থে বিদ্যালয়ের সমগ্র জীবনই
পাঠক্রম যা শিক্ষার্থী জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রেই স্পর্শ করে এবং সুসংহত ব্যক্তিত্ব গড়ে
তোলে।
পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য বা আধুনিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Curriculum) :
শিক্ষা একটি গতিশীল
প্রক্রিয়া। শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতি রেখে পরিবর্তিত হচ্ছে শিক্ষার গুরুপ্তপূর্ণ
উপাদান পাঠক্রম। পাঠক্রম সংক্রান্ত আধুনিক ধারণা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য
করা যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(১) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ভর : পাঠক্রমের মূল কাঠমো
শিক্ষার মূল লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই পাঠক্রমে বিষয়বস্তু, পরিবেশ ও অভিজ্ঞতার
সমন্বয় সাধন করা হয়।
(২) শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সহায়ক : শিক্ষার লক্ষ্য
শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গেসঙ্গে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, আধ্যাত্মিক,
নৈতিক, বৃত্তিমূলক বিকাশ; এককথায় সর্বাঙ্গীন বিকাশ। তাই শিক্ষার্থীর সমস্ত দিকের বিকাশের
উপযোগী বিভিন্ন অভিজ্ঞতাই আধুনিক পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
(৩) পরিবর্তনশীলতা : পাঠক্রম একটি প্রবহমান
ও গতিশীল প্রক্রিয়া। আধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন,
আর্থসামাজিক অবস্থা
ও পরিবেশ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, উন্নয়নের পরিবর্তনশীল গতি ও প্রেক্ষাপটে শিক্ষার লক্ষ্যের
নিরন্তর বিবর্তন ঘটছে। তাই পরিবর্তনশীল জগতে ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনের সহায়ক বিষয়বস্তু
ও অভিজ্ঞতা নিরন্তর সংযোজিত হচ্ছে।
(৪) তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক : পাঠক্রমের মাধ্যমেই
শিক্ষা নামক জীবন প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত পথে পরিচালিত করা হয়। এর একটি
তাত্ত্বিক দিক আছে, তেমনি ব্যবহারিক উপযোগিতাও লক্ষ্য করার মতো।
(৫) বিষয়গুলি পরিপুরক : পাঠক্রমের বিষয়বস্তুগুলি
একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ও পরিপূরক।
(৬) শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ও বাইরে বিস্তৃত : শিক্ষার্থীর জ্ঞানমূলক
বিকাশের উপযোগী বিষয়বস্তুগুলির আলোচনা শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সম্ভব হলেও, দৈহিক ও মানসিক
বিকাশের উপযোগী জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন,
আধুনিক বিকাশমুখী পাঠক্রমের দুটি অংশ—
(১) শ্রেণিকক্ষের
পঠন-পাঠনের কাজ, (২) শ্রেণিকক্ষ বহির্ভূত কাজ।
(৭) আদর্শগত ও বাস্তবসম্মত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত : পাঠক্রমের ভিত্তি
হল তার আদর্শগত ও বাস্তবগত দিক। কারণ কেবল আদর্শের দিকে লক্ষ রেখে পাঠক্রম সংগঠিত করলে
শিক্ষার্থীকে হয়তো সামাজিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা যাবে, কিন্তু বাস্তব জ্ঞানের অভাবে
সে জীবনসংগ্রামে পিছিয়ে পড়বে। তাই আদর্শ ও বাস্তব দুটি দিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
(৮) তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক দিকসম্পন্ন: আধুনিক পাঠক্রমে
দুটি দিক দেখা যায়—তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক। শিক্ষার্থীকে সুপরিকল্পিত পথে পরিচালনার জন্য পাঠক্রমের
তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় দিকই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
(৯) চাহিদা ও সামর্থ্যভিত্তিক : পাঠক্রম প্রস্তুতির
ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, চাহিদা ও সামর্থ্যের ওপর যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়, তেমনই
চাহিদা ও সামর্থ্যের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বিভিন্নতা রয়েছে, তার প্রতিও
লক্ষ রাখা হয়ে থাকে।
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে
বলা যায়, আধুনিক পাঠক্রম হল অভিজ্ঞতানির্ভর, পরিবর্তনশীল জীবনকেন্দ্রিক, কর্মভিত্তিক,
চাহিদাভিত্তিক ও উদ্দেশ্যমুখী।
- পাঠক্রমের উপাদানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো (Factors of Curriculum)
- পাঠক্রম রচনা নীতিগুলি আলোচনা কর |
- পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি গুরুপ্তপূর্ণ তা আলোচনা করো।
- পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?
- পাঠক্রম কী? পাঠক্রম নির্ধারণে শিশুর কোন কোন চাহিদা ও ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া?
- পাঠক্রম কয় প্রকার ও কি কি? জীবন কেন্দ্রিক পাঠক্রমের সম্পর্কে আলোচনা কর |
- গতানুগতিক পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? গতানুগতিক পাঠক্রমের উপযোগিতা লেখো। গতানুগতিক পাঠক্রমে ত্রুটি গুলি আলোচনা কর।
- পাঠক্রম কি? গতানুগতিক পাঠক্রম ও আধুনিক পাঠক্রমের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযোগিতা গুলি লেখ। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের ত্রুটিগুলি আলোচনা কর।
- অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমের উপযোগিতাগুলি লেখ। অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমে ত্রুটিগুলি লেখ।
- অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রমের উপযোগিতা এবং ত্রুটি আলোচনা কর।
- সুশিক্ষকের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Competent Teacher)
- শিক্ষার্থীর উপর বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব |
- শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের গুরুত্ব (Importance of Heridity and Environment in Education)