চর্যাপদ এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা করো | Class 11 Note PDF |



চর্যাপদ এর ঐতিহাসিক
গুরুত্ব

 


ভূমিকা: সাহিত্য- কাব্যকলা কালোত্তীর্ণ হলেও তা সমকালীন
সমাজ ও জীবনের প্রতিচ্ছবি। সেই দৃষ্টিতে চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক
নিদর্শন।পাল ও সেন রাজাদের দীর্ঘ দুশো বছরের রাজনৈতিক উত্থান পতনের অস্থিরতায় বাংলার
সমাজজীবনে যে ভাঙা-গড়া চলতে থাকে, চর্যাপদে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

 

ধর্ম সমন্বয়: চর্যাযুগের বাংলাদেশে বিভিন্ন আদর্শের সমন্বয়ের আত্মব্যাপ্তি
এবং আত্ম স্বাতন্ত্র রক্ষার প্রবল সচেতনা যুগপৎ প্রচলিত ছিল। ফলে চর্যার ধর্মমতের মধ্যে
হিন্দু ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক দেহবাদের ধারা অনেকটা পরিমাণে প্রবেশ করেছিল।ডক্টর নীহাররঞ্জন
রায়ের মতে এই মিলন পাল পর্বের শেষের দিকে আরম্ভ হয়েছিল। বৌদ্ধ সাধনার সঙ্গে বাংলার
এই তান্ত্রিক সহজ সাধনার যোগবন্ধন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

 


বাঙালির স্বাতন্ত্রপ্রিয়তা: ভিন্ন ধর্মের সাধন পদ্ধতির
সমন্বয় ঘটলেও উন্নাসিকতাগর্বী আর্য ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি স্বাতন্ত্রপ্রিয় বাংলায়
সাদর অভ্যর্থনা লাভ করেনি। চর্যাপদে সিদ্ধাচার্যগণ আচার-আচরণ সর্বস্ব বেদ-ধর্মের দুর্বলতার
প্রতি কটাক্ষ করে বলেছেন-

“জাহের বান চিহ্ণ রূপ ণ জানী

সো কইসে আগম বে এ বখানী”।

কিন্তু বৌদ্ধ তান্ত্রিক
সাধনা খুব সহজেই স্বাতন্ত্র প্রিয় বাঙালির হৃদয় জয় করেছিল।

 

যুগ সীমানার পরিবর্তন: চর্যাপদ আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে বাংলা সাহিত্যের
প্রাচীনতম যুগ সীমানা ছিল মনসামঙ্গল। কিন্তু চর্যাপদ আবিষ্কৃত হওয়ায় তা প্রায় আড়াইশো
বছর অতীতে সম্প্রসারিত হয়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ
ঘটনা।

 


পূর্ববঙ্গের বৌদ্ধধর্ম: তৎকালীন বঙ্গালদেশ বা পূর্ববঙ্গে
ও বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার লাভ করেছিল- এ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে – “আদি ভুসুক
বঙ্গালি ভইলী” পদটি।

 

অস্পৃশ্যতা ও বর্ণভেদ: তখনকার উচ্চ- নীচ, স্পৃশ্য, অস্পৃশ্য, ভেদাভেদ বিদীর্ণ
সমাজের কলঙ্কিত মুখচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে চর্চার কোনো কোনো পদে। অস্পৃশ্য বলে একঘরে
করে রাখার প্রথাও প্রচলিত ছিল-

“টালতো ঘর
মোর নাহি পড়বেষী”- পদটিতে তার প্রমাণ মেলে।

 


তৎকালীন জীবনচিত্র: সমকালীন জীবনচিত্র ও ইতিহাসের একটি
অংশ। চর্যাপদে সমকালীন জীবনচিত্রের স্পষ্ট পরিচয় সুমুদ্রিত। নদীমাতৃক বাংলার খেয়া
ও সাঁকো পারাপারের দৃশ্য, নৌকার বিভিন্ন অংশের বর্ণনা, সাধারণ মানুষের আমোদ-প্রমোদ,পোশাক-পরিচ্ছদ,
নৃত্যগীত নাটকাভিনয়, অভাব-অনটন এমনকি শুঁড়িখানার মদ্যপানের চিত্র ও অংকিত হয়েছে।
এ সকল খণ্ড ক্ষুদ্র চিত্রের সমন্বয়ে তৎকালীন যুগ, সমাজ ও মানব জীবনের আলোকচিত্র আমাদের
সামনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

 

উপসংহার: চর্যার সাধনতত্ত্ব ও নির্বাণ লাভের  উপায়গুলির রুপক চিত্রের মধ্যে ইতিহাসের উপকরণের ছড়াছড়ি। চর্যাপদ যদিও
বৌদ্ধ সাধন সঙ্গীত তা সত্বেও তা সমকালীন ইতিহাসের জীবন্ত দলিল।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top