শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সমাজচিত্র বা সামাজিকতা বর্ণনা করো | Class 11 Bengali Note |



শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সমাজচিত্র বা সামাজিকতা
বর্ণনা

 

ভূমিকা: “সাহিত্য সমাজের দর্পণ”। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের উৎস
পুরান ভাগবত হলেও সমকালীন লৌকিক জীবনধারা এর কাহিনীকে পুষ্ট করেছে। ফলে সমসাময়িক লোকজীবনের
নানা চিত্র ও রীতি-নীতি প্রতিফলিত হয়েছে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের কথাবস্তুতে।

 

দেবদেবীর পূজা: দৈব নির্ভর সেই যুগে সমাজে নানা ধরনের দেব-দেবীর পূজা প্রচলিত
ছিল। কোনো শুভ কাজ আরম্ভের আগে শ্রীরামচন্দ্রের বন্দনা করা হতো। মেয়েরা মনস্কামনা
সিদ্ধির আশায় চণ্ডীর পূজা করত। এমনকি শুভ কাজ শুরুর পূর্বে
  তিথি, বার, ক্ষণ, বিচার করার রীতি ছিল।

 

বাল্য বিবাহ: সমাজে বাল্যবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল।আইহনের সঙ্গে রাধার অল্প
বয়সেই বিবাহ হয়েছিল।

 

আত্মহত্যার রীতি: নানা অপবাদ, অবসাদ, অপরাধ ও মনঃকষ্টে গলায় কলসি বেঁধে
জলে ডুবে, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে, বিষ খেয়ে কিংবা গলায় পাথর বেঁধে ডুবে আত্মহত্যার ঘটনা
প্রচলিত ছিল।

 

আস্থা ও বিশ্বাস: সংসারে আসক্তিহীন নারী মাথা মুড়িয়ে যোগিনী সাজে তির্থে
ঘুরে বেড়াত। তাছাড়া জন্মান্তর, কর্মফল, অদৃষ্ট এবং নানা মন্ত্রতন্ত্রে মানুষের গভীর
আস্থা ও বিশ্বাস ছিল।

 

অশুভের লক্ষ্মণ: হাঁচি ও টিকটিকির শব্দ, শূণ্য কলসি কাঁখে জল আনতে যাওয়া,
দক্ষিণ দিকে শৃগালের গমন, শুষ্কডালে কাকের ডাক- ইত্যাদিকে অশুভের লক্ষণ বলে মনে করা
হত।

 

নারী হত্যা গর্হিত অপরাধ: নারীহত্যাকে তৎকালীন সমাজে অত্যন্ত নিন্দনীয়
ও গর্হিত অপরাধ বলে বিবেচিত হতো। “শতেক ব্রহ্মবধ

নহে যার তুল”। নারী হত্যাকারীকে কেউ
ঘৃণায় স্পর্শ করতো না।

 

প্রসাধন ও পোশাক: অবস্থাপন্ন গৃহস্থ বধূদের প্রসাধন ও পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল
জৌলুসপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে সোনা, হিরে, মণিমাণিক্য, মুক্তা, গজমতি-ইত্যাদির উল্লেখ
সমকালীন আর্থিক স্বচ্ছলতার সংকেতবাহী।

 

হাট ও বিক্রয় পদ্ধতি: হাটে পণ্য বিক্রেতাকে শুল্ক দিতে হতো এবং সাধারণ
কেনাবেচা ও লেনদেন বাড়ির মাধ্যমেই সম্পন্ন হত- এর প্রমাণ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে মেলে।

 

নৌপথে যোগাযোগ: নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তৎকালে প্রচলিত ছিল। তবে মাঝিকে
পারাপারের জন্য শুল্ক দিতে হত। রাজার কাছে গিয়ে ঘাট ইজারা দেবার ও ব্যবস্থা ছিল।

 

দস্যুভয়: তখনকার পথে-ঘাটে দস্যুর ভয় ছিল। মানুষজন পথে নিরাপত্তার অভাব
বোধ করত।

 

বর্ণ ও জাতিভেদ: সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র ছাড়াও বৈদ্য, বণিক,
সাপুড়ে, নাপিত, কুম্ভকার, তেলি, মাঝি প্রভৃতি বর্ণ ও জাতিভেদ লক্ষ্য করা যেত।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top