নিখিলের চরিত্রটি আলোচনা করো
রাতের অন্ধকার যেমন আকাশের তারা কে আরো উজ্জ্বল
কোরে তোলে তেমনি লেখকেরা মাঝে মাঝে এমন কিছু বিপরীতমুখী চরিত্র সৃষ্টি করেন নায়ক চরিত্র
কে উজ্জ্বল করে তোলার জন্য। নিখিল তেমনই একটি চরিত্র।
নিখিল গল্পের নায়ক, মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী
ও বন্ধু। সেও প্রায় সমপদস্থ মধ্যবিত্ত চাকুরে। দুই সন্তানের পিতা সে। অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার
অধিকারী- তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন।
নিখিল একটু অলস প্রকৃতির মানুষ। গল্পে দেখি
মৃত্যুঞ্জয় নিজ দায়িত্বের সঙ্গে একটি বাড়তি দায়িত্ব বহন করত কিন্তু নিখিলের এমন
কোন বাড়তি দায়িত্ব পালন করতেনা।
আট বছর বিবাহিত জীবন যাপন এবং দুই সন্তানের
জনক হলেও নিখিলের নাকি সংসারে মন নেই। তাই অবসর জীবনটা বই পড়ে স্বসৃষ্ট চিন্তার জগতে অন্তর্লীন থাকতে চায় সে। লেখকের বর্ণনায়
-“অবসর জীবনটা সে বই পড়ে আরেকটা চিন্তার জগৎ গড়ে তুলে কাটিয়ে দিতে চায়”।এটি
উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। তাই চরিত্রটা কিছুটা অন্তর্মুখী।
নিখিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন হলেও মৃত্যুঞ্জয়ের
অপরাজেয় শক্তির প্রতি ঈর্ষান্বিত। মাঝে মাঝে মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে কাবু হয়ে-“মৃদু ঈর্ষার সঙ্গেই সে তখন
ভাবে যে নিখিল না হয়ে মৃত্যুঞ্জয় হলে মন্দ ছিল না”।
কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক হলেও মৃত্যুঞ্জয় স্বার্থপর
নয়। তাই তাকে আমরা তিন জায়গায় নিয়মিত অর্থ সাহায্য করতে দেখি।
বন্ধু প্রীতি নিখিল চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ
বৈশিষ্ট্য। দুঃসময়ে নিখিল বারবার মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়েছে। খোঁজখবর নিয়েছে।
চেষ্টা করে অফিসে মৃত্যুঞ্জয়ের ছুটির ব্যবস্থা করেছে। অফিস ছুটির পর মৃত্যুঞ্জয়ের
সঙ্গে দেখা করে তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছে।
তবে আবেগপ্রবণ মৃত্যুঞ্জয় এর বিপরীতে নিখিল
কিন্তু বাস্তববাদী। দুর্ভিক্ষের দিনে ফুটপাতে মৃত্যু তার কাছে সহজ ও সাধারণ ঘটনা। এই
দুর্দিনে বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অর্থসাহায্য কমানোর কথা সে ভাবে।
নিখিল যুক্তিবাদী। সে বিশ্বাস করে অর্থ সাহায্য
করা একার পক্ষে দুর্ভিক্ষ এবং অনাহারে মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায় না। তার যুক্তি
“নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ”।
নিখিল চরিত্রে বেশ কিছু মানবিক গুণ এর সমন্বয়
ঘটলেও সে মধ্যবিত্ত মানসিকতার
পোষক। নিরন্ন মানুষের মৃত্যু তাকে ভাবায় না। সে মনোবিলাসি এবং নিজেকে বাঁচানোর জন্য
সে অমানবিক। আসলে নিখিল চরিত্রটি মৃত্যুঞ্জয়ের সকল Contrast।