যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি (অবরোহ ও আরোহ) | Class XI Philosophy Notes | 2nd Semester

যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি (অবরোহ ও আরোহ)। একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টারের প্রথম অধ্যায়।

যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি (অবরোহ ও আরোহ)
যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি (অবরোহ ও আরোহ)

যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি (অবরোহ ও আরোহ)

১. যুক্তি বিজ্ঞানের জনক কাকে বলা হয়? 

উঃ- অ্যারিস্টটলকে। 

২. যুক্তিবিজ্ঞান এর বুৎপত্তিগত অর্থ কি? 

উঃ- যুক্তিবিজ্ঞানের  ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো logic। এটি গ্রিক শব্দ logike থেকে এসেছে। যা ল্যাটিন শব্দ logos থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো চিন্তা বা ভাষা। কেননা আমরা যা কিছু চিন্তা করি তা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করি, তাই চিন্তার সঙ্গে ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধের কথা ভেবে যুক্তি বিজ্ঞানীরা বলেছেন ভাষায় প্রকাশিত চিন্তাসম্বন্ধীয় বিজ্ঞানকে যুক্তিবিজ্ঞান বলে। 

২. যুক্তিবিজ্ঞান কি সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান?

উঃ- চিন্তা সম্বন্ধীয়‌।

৩. যুক্তি বিজ্ঞানে “চিন্তা” কথাটি কয়টি অর্থে ব্যবহৃত হয়? 

উঃ- দুটি অর্থে। যথা- ব্যাপক অর্থে ও সংকীর্ণ অর্থে।

৪.  ব্যাপক অর্থে চিন্তা বলতে কী বোঝো?

উঃ- ব্যাপক অর্থে চিন্তা বলতে সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, স্মৃতি, কল্পনা, অবধারণ, অনুমান ইত্যাদি চিন্তার বিভিন্ন মাধ্যমকে বোঝায়।

৫. সংকীর্ণ অর্থে চিন্তা কি?

উঃ- সংকীর্ণ অর্থে চিন্তা বলতে শুধুমাত্র অনুমানকেই বোঝায়। 

৬. যুক্তিবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় কি? 

উঃ- অনুমান।

৭. অনুমান কাকে বলে?

উঃ- অনু + মান = অনুমান। “অনু” কথার অর্থ হল পশ্চাৎ এবং “মান” কথার অর্থ জ্ঞান। এককথায় পশ্চাৎ জ্ঞান। অর্থাৎ যে জ্ঞান অন্য জ্ঞানকে অনুসরণ করে তাকে অনুমান বলে। সুতরাং বলা যায়, যে মানসিক প্রক্রিয়ায় জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অজানা বিষয়ের জ্ঞান লাভের চেষ্টা করা হয় তাকে অনুমান বলে। যেমন- আকাশে মেঘ দেখে বৃষ্টির অনুমান,দূরে পর্বতে ধোঁয়া দেখে আগুনের অনুমান। 

৮. যুক্তি কি?

উঃ- অনুমানের ভাষায় প্রকাশিত রূপকে যুক্তি বলে।ভাষা বলতে যেহেতু আমরা বচনকে বুঝি তাই এক বা একাধিক বচনের সমষ্টিকেই যুক্তি বলি।

যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

রাম হয় একজন মানুষ।

* রাম হয় মরণশীল। 

৯. যুক্তির অংশ কয়টি ও কি কি? 

উঃ- দুইটি। যথা- আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্ত। 

১০. আশ্রয় বাক্য কাকে বলে?

উঃ- যে বচন বা বচনগুলির উপর ভিত্তি করে একটি নতুন বচন পাওয়া যায় তাকে আশ্রয় বাক্য বলে।

যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

রাম হয় একজন মানুষ। 

উক্ত বচন দুটি হল আশ্রয় বাক্য।

১১. সিদ্ধান্ত কাকে বলে?

উঃ- আশ্রয় বাক্যের ওপর ভিত্তি করে যে বচনটি নিঃসৃত হয় তাকে সিদ্ধান্ত বলে।

যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

রাম হয় একজন মানুষ।

*রাম হয় মরণশীল।

উক্ত যুক্তিতে “রাম হয় মরণশীল” এটি হলো সিদ্ধান্ত। 

১২. যুক্তির বৈশিষ্ট্য লেখ। 

উঃ-  •যুক্তি হল এক বা একাধিক বচনের সমষ্টি।

* যুক্তি বৈধ বা অবৈধ হয়।

১৩. যুক্তি কয় প্রকার ও কি কি?

উঃ- দুই প্রকার। যথা- অবরোহ যুক্তি ও আরোহ যুক্তি। 

১৪. অবরোহ যুক্তি কাকে বলে? 

উঃ- অবরোহ কথার অর্থ হল “অবরোহন করা” অর্থাৎ উপর থেকে নিচে নামা‌ যুক্তিবিজ্ঞান মতে সামান্য থেকে বিশেষের দিকে যাওয়া। এখানে “সামান্য” কথার অর্থ হল সমগ্র বা জাতি। সুতরাং উক্ত বুৎপত্তিগত অর্থের ভিত্তিতে বলা যায়, যে যুক্তিতে এক বা একাধিক পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত আশ্রয় বাক্যের ওপর ভিত্তি করে অনিবার্যভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি আশ্রয় বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক বা সমব্যাপক হয় তাকে অবরোহ যুক্তি বলে।

যেমন- সকল কবি ভাবুক।

রাম হয় একজন কবি।

* রাম হয় ভাবুক। 

১৫. আরোহ যুক্তি কাকে বলে?

উঃ- “আরোহ” কথার অর্থ হল আরোহন করা অর্থাৎ নিচ থেকে উপরে ওঠা। যুক্তি বিজ্ঞানের মতে বিশেষ থেকে সামান্যের দিকে যাওয়া। তাই যে যুক্তিতে দুই বা ততোধিক আশ্রয় বাক্যের ওপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় তবে অনিবার্যভাবে নয় এবং সিদ্ধান্তটি আশ্রয় বাক্যের তুলনায় সর্বদা ব্যাপক হয় তাকে আরোহ যুক্তি বলে।

যেমন- প্রথম কাকটি হয় কালো।

দ্বিতীয় কাকটি হয় কালো।

তৃতীয় কাকটি হয় কালো।

*সকল কাক হয় কালো। 

জ্ঞানের স্বরূপ ও উৎস | পাশ্চাত্য দর্শন | একাদশ শ্রেণীর দর্শন নোটস | প্রথম সেমিস্টার

১৬. অবরোহ ও আরোহ যুক্তির পার্থক্য লেখ।

উঃ- অবরোহ যুক্তি: 

a. অবরোহ কথার অর্থ হল অবরোহন করা অর্থাৎ ওপর থেকে নিচে নামা।

b. এই যুক্তির লক্ষ্য হল বিশেষীকরণ অর্থাৎ এটি সামান্য থেকে বিশেষের দিকে যায়। 

c. এই যুক্তিতে এক বা একাধিক আশ্রয় বাক্য থাকে।

d. এর আশ্রয়বাক্য দুটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে।

e.  এর সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যের মধ্যে নিহিত থাকে।

f. এর আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত বাক্যের মধ্যে প্রশক্তি থাকে। 

g. এর সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে পাওয়া যায়।

h. এর সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক বা সমব্যাপক হয়। 

i. এই যুক্তি আকারগত সত্যতার ওপর গুরুত্ব দেয়।

j. এই যুক্তির সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্যকে অতিক্রম করে না।

k. এই যুক্তির আশ্রয়বাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্ত মিথ্যা হতে পারে না। 

l. এই যুক্তিতে বহু সংস্থান ও মূর্তির উল্লেখ আছে।

m. এই যুক্তিতে বৈধ বা অবৈধ বিশেষণ ব্যবহার করা হয়।

n. এই যুক্তির সিদ্ধান্ত সুনিশ্চিত হয়।

* আরোহ যুক্তি:

a. আরোহ কথার অর্থ হল আরোহন করা অর্থাৎ নিচ থেকে উপরে ওঠা।

b. এই যুক্তির লক্ষ্য হলো সামান্যীকরণ অর্থাৎ বিশেষ থেকে সামান্যের দিকে যাওয়া। 

c. এই যুক্তি দুই বা ততোধিক আশ্রয়ে বাক্য নিয়ে গঠিত হয়। 

d. এখানে আশ্রয় বাক্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে না।

e. এর সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্যের মধ্যে নিহিত থাকে না।

f. এর আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রশক্তি উদ্দেশ্য থাকে না। 

g. এর সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে পাওয়া যায় না।

h. এর সিদ্ধান্ত সর্বদা ব্যাপক হয়।

i. এই যুক্তির বস্তুগত সত্যতার ওপর গুরুত্ব দেয়।

j. এর সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্যকে অতিক্রম করে।

k. এর আশ্রয়বাক্য সত্য হলেও সিদ্ধান্ত মিথ্যা হতে পারে। 

l. এই যুক্তিতে মূর্তির উল্লেখ নেই।

m. এই যুক্তিতে ভালো বা মন্দ, সবল ও দুর্বল ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়।

n. এই যুক্তির সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।

১৭. যুক্তির আকার বলতে কী বোঝায়?

উঃ- যুক্তির কাঠামো বা গঠনকে বোঝায়। অর্থাৎ যার এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থাকে এবং তা থেকে একটি অনিবার্যভাবে সিদ্ধান্ত আসে।

১৮. যুক্তির উপাদান বলতে কী বোঝো?

উঃ- যুক্তির অন্তর্গত বচন গুলির অর্থ বা বিষয়কে বোঝায়। 

১৯. সত্য কয় প্রকার ও কি কি?

উঃ- সত্য দুই প্রকার।যথা- আকারগত সত্যতা ও বস্তুগত সত্যতা।

২০. আকারগত সত্যতা কাকে বলে?

উঃ- যখন কোনো যুক্তির এক বা একাধিক পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে একটি সিদ্ধান্ত  নিঃসৃত হয় তাকে যুক্তির আকারগত সত্যতা বলে।

যেমন- সকল বই হয় খাতা।

সকল কলম হয় বই।

* সকল কলম হয় খাতা।

২১. বস্তুগত সত্যতা কাকে বলে?

উঃ- যখন কোনো যুক্তির অন্তর্গত বচনগুলির সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে তখন তাকে বস্তুগত সত্যতা বলে।

যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল।

 রাম হয় একজন মানুষ।

* রাম হয় মরণশীল।

২২. যুক্তির ধর্ম কি?

 উঃ- বৈধতা বা অবৈধতা। 

২৩. কখন একটি যুক্তিকে বৈধ বা অবৈধ বলা যায়?

 উঃ- যখন কোনো যুক্তি তার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে গঠিত হয় তখন যুক্তিটি বৈধ হয় আর যখন কোনো যুক্তি তার নিয়ম লঙ্ঘন করে গঠিত হয় তখন তাকে যুক্তির অবৈধতা বলে।

২৪. অ্যারিস্টটলকে যুক্তিবিদ্যার জনক বলা হয় কেন? 

উঃ- খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে অ্যারিস্টটল যুক্তিবিজ্ঞান নামে দর্শনের একটি নতুন শাখার প্রবর্তন করেন বলে তাকে যুক্তিবিদ্যার জনক বলা হয়।

২৫.  মানুষের জীবনের তিনটি পরম আদর্শ কি কি?

উঃ- * সত্য: যা যুক্তিবিদ্যা আলোচনা করে।

* শিব: যা নীতিবিদ্যা আলোচনা করে।

* সুন্দর: যার আলোচনা করে সৌন্দর্যবিদ্যা বা নন্দনতত্ত্ব। 

২৬. যুক্তিবিজ্ঞানকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় কেন? 

উঃ- যুক্তিবিজ্ঞান আদর্শের মানদণ্ডে বিষয়বস্তুর মূল্য নির্ধারণ করে, যুক্তি বৈধ না অবৈধ তা আলোচনা করে বলে একে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে। 

২৭. কোপির মতে যুক্তিবিজ্ঞান কি?

উঃ- দর্শনের যে গুরুত্বপূর্ণ শাখা বৈধ চিন্তার নিয়মাবলী নিয়ে আলোচনা করে, অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তিকে পৃথক করার নিয়ম পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিজ্ঞান বলে।

২৮. অনুমান ও যুক্তি কি সমার্থক?

উঃ- মৌলিক অর্থে অনুমান ও যুক্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য না থাকলেও ব্যাপক অর্থে এদের পার্থক্য আছে।কেননা সংকীর্ণ অর্থে অনুমান ভাষায় প্রকাশ করলে তাকে যুক্তি বলে কিন্তু ব্যাপক অর্থে যুক্তির সিদ্ধান্ত পাওয়ার জন্য যেসব যুক্তিবাক্যের সাহায্য নেওয়া হয় তাকে যুক্তি বলে।

২৯. “যুক্তিবিদ্যা হল সকল বিজ্ঞানের প্রবেশদ্বার”- কথাটি কে বলেছেন?

উঃ- কান্ট।

 ৩০.আধুনিক যুক্তি বিজ্ঞানের জনক কে?

উঃ- জর্জ ভুল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top