রাষ্ট্র
ও সামাজিক সংগঠন:
ও সামাজিক সংগঠন:
আধুনিক
রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সংগঠনের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য
ও বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। নীচে এগুলি আলোচনা করা হল।
সাদৃশ্য
1. সমাজবোধ: রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন—উভয়েরই
সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সমাজবোধ থেকে।
2. সদস্যসংখ্যা: রাষ্ট্রের জনসমষ্টির মতো অন্য সামাজিক সংগঠনগুলিরও নির্দিষ্ট
সদস্য রয়েছে।
3. পরিচালন: সরকার যেভাবে রাষ্ট্রের পরিচালনা করে থাকে ঠিক তেমনিভাবে
সামাজিক সংগঠনগুলির পরিচালনা করে পরিচালকমণ্ডলী।
4. শৃঙ্খলা: রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় আইনকানুন
মেনে চলতে বাধ্য হয়। একইভাবে সংগঠনের সদস্যরাও সংগঠন-প্রণীত নিয়মকানুন মেনে চলে।
5. কর্তব্য: নাগরিকরা যেভাবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগসুবিধা ও
অধিকার ভোগের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করে, তেমনি সংগঠনের সদস্যরাও সংগঠনের
সুযোগসুবিধা ভোগের বিনিময়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন
6. বিবর্তন: সামাজিক বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব
হয়। একইভাবে অন্য সামাজিক সংগঠনগুলিও সমাজবিবর্তনের ধারায় জন্ম লাভ করে।
বৈসাদৃশ্য
1. উৎপত্তি: উৎপত্তিগত দিক থেকে বলা যায়, মানবসমাজের ঐতিহাসিক
বিবর্তনের এক বিশেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে সামাজিক সংঘগুলির
উৎপত্তি নেহাতই স্বেচ্ছামূলক।
2. সদস্যপদ: রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী প্রায় সব মানুষই রাষ্ট্রের
সদস্য। কিন্তু সামাজিক সংগঠনের সদস্যসংখ্যা রাষ্ট্রের সদস্যসংখ্যার এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ।
রাষ্ট্রের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক, কিন্তু সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন।
কোনো ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারেন না, কিন্তু কোনো ব্যক্তি
একই সঙ্গে একাধিক সংগঠনের সদস্য হতে পারেন।
3. উদ্দেশ্য: সাধারণত দেখা যায়, সামাজিক সংগঠনগুলি একটি নির্দিষ্ট
উদ্দেশ্যসাধনের জন্য গঠিত হয়। যেমন, কোনো ক্রীড়া সংগঠনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র খেলাধুলার
বিকাশ ঘটানো। অন্যদিকে, সর্বাঙ্গীণ জনকল্যাণের জন্য রাষ্ট্রকে বহুমুখী উদ্দেশ্য পূরণ
করতে হয়।
4. আকুতি: আকৃতির বিচারে রাষ্ট্র বিশাল, তুলনায় সামাজিক সংগঠন
ক্ষুদ্র।
5. ভূখণ্ড: প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ভৌগােলিক সীমানা
থাকে, রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মপরিধি সেই সীমানার মধ্যে আবদ্ধ। অন্যদিকে, কোনো কোনো সামাজিক
সংগঠনের কর্মপরিধি পৃথিবীর এক দেশ থেকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ
রামকৃয় মিশন, রেড ক্রস প্রভৃতি সংগঠনের কথা বলা যায়।
6. স্থায়িত্ব: রাষ্ট্র চিরস্থায়ী প্রতিষ্ঠান, এর একটা সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা
আছে। কিন্তু সামাজিক সংগঠনগুলি ক্ষণস্থায়ী।
7. সার্বভৌম ক্ষমতা: সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, সার্বভৌম
ক্ষমতার অধিকারী না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বলা যায় না। অন্যদিকে সামাজিক সংঘগুলির
ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রশ্ন অবাস্তব।
8. অধীনতা: সামাজিক সংগঠনগুলি রাষ্ট্রের অধীন। অন্যদিকে রাষ্ট্র
কোনো সংগঠনের অধীনে থাকে না। যে-কোনো সংগঠনকে রাষ্ট্রের নিয়মকানুনের প্রতি অনুগত থাকতে
হয়।
9. অনুমোদন: রাষ্ট্রের অনুমোদন ও উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক সংগঠনগুলির
জন্ম হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের সৃষ্টি কোনো সামাজিক সংগঠনের অনুমোদন বা উদ্যোগের ওপর নির্ভর
করে না।
10. মানবজীবনে প্রভাব: রাষ্ট্র প্রধানত মানবজীবনের বাহ্যিক দিকটিকে নিয়ন্ত্রণ
করে, মানুষের অন্তৰ্জীবনের বিকাশে সামাজিক সংঘের প্রভাব অনেক বেশি গভীর। ম্যাকাইভার
বলেছেন, পেনসিল কাটার জন্য কুঠার যেমন অনুপযুক্ত, ঠিক তেমনি মানুষের অন্তৰ্জীবনের সূক্ষ্ম
অনুভূতিগুলির বিকাশে রাষ্ট্রও অনুপযুক্ত।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্র ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে
মৌলিক প্রভেদ থাকলেও মানবজীবনের বিকাশে উভয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বার্কারের মতে,
রাষ্ট্রীয় জীবন ও সামাজিক জীবন পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত, এরা একে অপরের
পরিপূরক।
- রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো
- রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও | রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করো
- রাষ্ট্র | সব উত্তরের PDF একত্রে