মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি আলোচনা করো | কে বাঁচায় কে বাঁচে | Class XII Bengali Note PDF|

 মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি আলোচনা করো | কে বাঁচায় কে বাঁচে |

 মৃত্যুঞ্জয় চরিত্র

     

         সাহিত্য
বিচিত্র চরিত্র চিত্রশালা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যের আঙিনায় ও বিচরণ করেছে
কত বৈচিত্র্যময় চরিত্র- মৃত্যুঞ্জয় তাদেরই একজন। তবে আমাদের প্রতি দিনকার চোখে দেখা
আর পাঁচটা চরিত্রের থেকে সে আলাদা। এ স্বাতন্ত্র তার ব্যক্তিত্বে, তার মানস গঠনে।

        মৃত্যুঞ্জয় মধ্যবিত্ত অফিস চাকুরে। শিক্ষিত
সমাজের সেই বিশেষ শ্রেণীর মানুষ যারা খবরের কাগজ পড়ে অথবা লোকমুখে শুনে অভিজ্ঞতা অর্জন
করে, বাস্তবের সঙ্গে যাদের প্রত্যক্ষ যোগসুত্র থাকেনা।

           তবে মধ্যবিত্ত বলয়ের মধ্যে লালিত ও স্থিত হলেও
মৃত্যুঞ্জয় মধ্যবিত্ত মানসিকতাসম্পন্ন নয়। তাই ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা যখন
অন্য কাউকে তেমন করে ভাবায় না তখন সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা মৃত্যুঞ্জয়কে শারীরিক ও
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। এক অসাধারণ মানবতাবোধ রয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রে। নিখিলের
প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়- “ভাবছি আমি বেঁচে থাকতে যে লোকটা না খেয়ে মরে গেল,
এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কি”? এর জন্য সে নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছে মাইনের পুরো
টাকাটা দিয়েছে রিলিফ ফান্ডে।

        মানুষের জন্য মানুষের দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবোধ
উজ্জ্বল মৃত্যুঞ্জয় চরিত্র টি। ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর স্মৃতি তার চোখকে
  অশ্রুসিক্ত করে। তার নিজস্ব অভিব্যক্তিই
সে দায়বদ্ধতার প্রমাণ দেয় -“আমায় কিছু একটা করতে হবে ভাই। রাতে ঘুম হয় না।
খেতে বসলে খেতে পারি না। এক বেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আমার আর টুনুর মার একবেলা ভাত
বিলিয়ে দি”।

     মৃত্যুঞ্জয় আত্মসর্বস্ব স্বার্থপর নয়, বরং
অপরিমেয় মানবিক গুণে সমৃদ্ধ। সে শান্ত, নিরীহ, সহানুভূতিশীল,                 সৎ ও সহজ-সরল। লেখকের  বর্ণনা তেও উঠে আসে এই সত্য। তবে মৃত্যুঞ্জয় প্রাচীন
ঐতিহ্য ও আদর্শবাদের কল্পনা তাপস, সেকারণেই সে কিছুটা আবেগপ্রবণ। যে আবেগপ্রবণতা তার
ট্র্যাজিক পরিণতির মূল কারণ।

         আবেগপ্রবণ
হলেও মৃত্যুঞ্জয় দুর্বলচিত্ত নয়। তার মানসিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শ্লথ, নিজস্ব নয়।
অফুরন্ত শক্তির উৎস সে- যা নিখিলের ঈর্ষার কারণ। গল্পকারের ভাষায়-“ মৃত্যুঞ্জয়ের
মানসিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শ্লথ, নিজস্ব নয়। শক্তির একটা উৎস আছে তার মধ্যে”।

       মৃত্যুঞ্জয়ের সহমর্মিতা সাধারণ মধ্যবিত্তর
মতো লোক দেখানো, প্রচার সর্বস্ব নয়- তা অকৃত্তিম। তাই শেষ পর্যন্ত শ্রেণি মর্যাদা, আভিজাত্য, আত্মসম্মান বিসর্জন
দিয়ে সে মিশে যায়
বুভুক্ষু মানুষের মাঝে। তাদেরেই মতো করে বলতে পারে-“গা থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও”!

        মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রটি গতিশীল এবং
গল্পে ট্র্যাজিক নায়ক চরিত্র হিসাবে পাঠকের নজর কাড়ে।

 

Download Pdf

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *