“এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে”
বাংলা নাট্য আন্দোলনের অগ্রগামী সৈনিক শম্ভু মিত্রের
বিভাব নাটকে উদ্ধৃত অংশটি শম্ভু মিত্রের উক্তি। যুদ্ধ, দাঙ্গা, মন্বন্তর আর উদ্বাস্তু
সমস্যায় জর্জরিত বাংলার বুকে যখন মানুষের হাসি পরিণত হয়েছিল অশ্রুতে। আর একশ্রেণীর
আত্মকেন্দ্রিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি যখন এই পরিস্থিতিতে বাঙালিকে “কাঁদুনে জাত”
অপবাদ দিয়ে দায় এড়িয়ে চলতে চেয়ে ছিলেন,তখন সেই অপবাদ দূর করতে নাট্যকার সঙ্গী-সাথীদের
নিয়ে হাসির নাটকের উপকরণ খুঁজতে এক সময়ে পথে নেমে পড়েন এবং বুভুক্ষু মানুষের মিছিলে
পুলিশের গুলি চালানোর মর্মান্তিক দৃশ্য দেখান। গুলিতে মিছিলের পুরোভাগে থাকা একটি ছেলে
ও একটি মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।পুলিশ চলে গেলে নাট্যকারের সঙ্গী অমর আহত মেয়েটির
মাথায় হাত দিয়ে দেখতে থাকে। এই মর্মন্তুদ ঘটনা প্রসঙ্গে অভিনেতা শম্ভু মিত্র অমর
গাঙ্গুলীর উদ্দেশ্যে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যটি করেন।
আধুনিক নাটক বাস্তব
জীবন কেন্দ্রিক। সেই বাস্তব জীবনই রচনা করে নাটকের প্রেক্ষাপট। যুদ্ধ, দাঙ্গা, মন্বন্তরের
পটভূমিতে এই নাটকটি রচিত। নাটকের চরম মুহূর্তে শম্ভু মিত্র মন্তব্য করেন- “এবার
নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে”? সমাজ তথা দেশের যারা নেতৃস্থানীয়, সামাজিক মানুষের
সুখ-দুঃখের ভাগ্য নির্ধারণ যাদের হাতে, তারা যখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে কর্তব্য ও সামাজিক
দায় বদ্ধতা ভুলে মানুষের অন্ন,বস্ত্রের চাহিদাটুকু পরিতৃপ্ত না করে সুখ ও হাসির অন্বেষণে নির্ভার লঘু জীবন-যাপনে মুগ্ধ হয়ে পড়েন, তখন ঘনীভূত হয় সামাজিক সংকট। চরম দুর্গতি
নামে মানুষের জীবনে। মানুষের চোখের জলের উৎস তারা খোঁজেননা।অন্তর মন্থন জাত অশ্রুকে
তারা বিদ্রুপের বস্তু করে তোলেন। জীবনের কোথাও যখন বিন্দুমাত্র হাসির উপকরণ নেই, সব
হাসি যখন অশ্রু রূপে গলে ঝরে পড়ে। তখন অশ্রু মুছে দেওয়ার দায় এড়াতে তারা “কাঁদুনে
জাত” অপবাদ দিয়ে দোষের বোঝা চাপিয়ে দেন বঞ্চিত বাঙালির বিক্ষত বুকে। উক্তিটির
মধ্য দিয়ে জীবনের গভীরতাকে না ছুয়ে যারা সস্তা আনন্দ অন্বেষী তাদের আত্মকেন্দ্রিক
মানসিকতা তথা বাস্তব সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে উদাসীনতাকে বিদ্রুপ করা হয়েছে।মানবতাবাদি
নাট্যকারের এ এক অভিনব প্রশ্ন – প্রতিবাদ।