সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি বলতে কি বোঝ? বিভিন্ন ধরনের সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করো |

সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি
বলতে কি বোঝ? 

যে সমস্ত কার্যাবলি
শিক্ষার্থীর মানসিক শক্তি বিকাশের সহায়ক এবং যেগুলি শিক্ষার্থীর সু-সামঞ্জস্যপূর্ণ
ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, পাঠক্রমের সহযোগী সেইসব বিষয় বা কার্যাবলিকে বলা হয় সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলি। মনোবিদ রিভলিন (H. N. Rivlin) সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির যে সংজ্ঞা দিয়েছেন
তা হল- যে সব কার্যাবলি শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার সামগ্রিক জীবন
বিকাশের অন্যান্য দিকে সহায়তা করে তাদেরই বলা হয় সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি।

বিভিন্ন ধরনের সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করো |

বিভিন্ন ধরনের সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলি (Different types of Co-curriculat Activities) :

আধুনিক শিক্ষা পরিকল্পনায়
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম অনুসরণ করা হয়। বিদেশে অনুসরণ করা হয় এমন সামঞ্জস্যপূর্ণ
কর্মসূচীও আমাদের দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে। আধুনিক বিদ্যালয়গুলিতে যে সমস্ত সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলিকে গ্রহণ করা হয় তা হল-

(১) দৈহিক কার্যাবলি : দৈহিক কার্যাবলি
হল—সকল প্রকার খেলাধূলা, ব্যায়াম, শরীরচর্চা, সাঁতার কাটা, নৌচালনা, N.C.C, যোগব্যায়াম
ইত্যাদি। এই সব কাজের প্রধান উদ্দেশ্য হল শিশুর দৈহিক বিকাশে সহায়তা করা এবং দেহ সঞ্চালনের
ক্ষেত্রে সমন্বয় আনা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত বা যৌথ কাজের মানসিকতা গড়ে
তোলা এই সব কাজের অন্যতম লক্ষ্য।

(২) বৌদ্ধিক কার্যাবলি : বিদ্যালয়ে অনুশীলিত
পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বৌদ্ধিক কার্যাবলিতে
অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বৌদ্ধিক বিকাশ সম্পন্ন হয়। এই সমস্ত বৌদ্ধিক
কার্যাবলি হল—সাহিত্য সভা, বিতর্ক সভা, আলোচনা চক্র বা সেমিনার, পাঠচক্র, বক্তৃতা,
আবৃত্তি, গল্পবলা, গল্পলেখা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বিদ্যালয় পত্রিকা প্রকাশ, দেওয়াল
পত্রিকা প্রকাশ, বুলেটিন বোর্ডে চলতি সংবাদ সরবরাহ ইত্যাদি।

(৩) সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যাবলি : বিদ্যালয়ের সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলির মধ্যে নানাধরনের সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যাবলি থাকে। এগুলির মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হল—অভিনয়, নৃত্যানুষ্ঠান, সঙ্গীত, জাতীয় দিবস পালন, মনীষীদের জন্ম শতবার্ষিকী
পালন, শিক্ষকদিবস পালন, অভিভাবক দিবস, মাতৃদিবস, ছাত্রদিবস পালন, আন্তর্জাতিক বর্ষ
পালন, ছবি আঁকা, পুতুল তৈরি, ছবিসংগ্রহ, স্ট্যাম্প সংগ্রহ ইত্যাদি।

(৪) শুদ্ধ শরীরচর্চামূলক কার্যাবলি : বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে
নিয়মিত দেহ-সঞ্চালনের প্রক্রিয়াই হল ব্যায়াম। এই ধরনের কার্যাবলি শিক্ষার্থীর দৈহিক
ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।

(৫) বিশেষ শিক্ষামূলক সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি : কবিতা লেখা, সাহিত্য
সভা, ছবি আঁকা, বিতর্ক সভা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর শিক্ষামূলক
অভিজ্ঞতা অর্জনে ও তার সম্প্রসারণে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে।

(৬) সৃজনাত্মক কার্যাবলি : শিক্ষার সবচেয়ে
প্রধান লক্ষ্য শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলির পরিপূর্ণ প্রকাশে সহায়তা করা।
এই লক্ষ্য চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে গল্পবলা, কবিতা বা প্রবন্ধ রচনা করা,
তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, নৃত্য ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এই সকল সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি
শিক্ষার্থীর সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করে।

(৭) প্রশাসনমূলক কার্যাবলি : ছাত্র-সংসদের বিভিন্ন
দায়িত্ব পালন, শ্রেণির মনিটরের কাজ, বিভিন্ন

সভা-সমিতি-পরিচালনার
কাজ ইত্যাদি এই শ্রেণিভুক্ত সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে
প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে অনুপ্রাণিত করা যায়।

(৮) সমাজ সেবামূলক সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি : নার্সিং শিক্ষা,
পরিচ্ছন্নতা, সংরক্ষণ, মহামারি প্রতিরোধ, বন্যাত্রাণে অংশগ্রহণ, দুর্ভিক্ষদের জন্য
ত্রাণ সংগ্রহে অংশগ্রহণ, অগ্নি নির্বাপণ সমিতি পরিচালনা, স্কাউট, ব্রতচারী, গার্লস
গাইড, নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমাজ সেবামূলক
মনোভাবের বিকাশ ঘটে।

(৯) সামাজিক প্রশাসনমূলক কাজ : বিদ্যালয়ে স্বায়ত্বশাসনমূলক
কাজ, সংবাদসমিতি পরিচালন ব্যবস্থা, বিদ্যালয় সঞ্চয় প্রকল্প ইত্যাদি কাজে অংশগ্রহণ
শিক্ষার্থীদের সামাজিক কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে এবং সামাজিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়তা
করে।

(১০) অন্যান্য কার্যাবলি : সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে
আরও নানাবিধ কর্মসূচী থাকে। যেমন—শিক্ষামূলক ভ্রমণ, খেলা ও প্রদর্শনী সংগঠন, বনভোজন,
কোনো কারখানা পরিদর্শন, আঞ্চলিক ইতিহাস ও ভূগোলের তথ্য সংগ্রহ প্রভৃতি। এছাড়া নানাপ্রকার
সৃষ্টিধর্মী কর্ম যেমন—সাবান তৈরি, মোমবাতি তৈরি, দেশলাই তৈরি, পুতুল, পাখা, কাগজের
মালা ও ফুল তৈরি ইত্যাদি শিল্পকর্ম।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *