“কর্তার ভূত” কি নিছক ভূতের গল্প নাকি রাজনৈতিক রুপককাহিনী আলোচনা করো |

  

কর্তার ভূত কি নিছক ভূতের গল্প নাকি রাজনৈতিক রুপককাহিনী আলোচনা করো

কর্তার ভূত” কি নিছক ভূতের গল্প নাকি রাজনৈতিক রুপককাহিনী

 

       বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “লিপিকা” গ্রন্থের কর্তার ভূত রচনাটি পাঠ করলে
আপাতভাবে ভূতের গল্প বলে মনে হয়
, কিন্তু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলেই বোঝা যায় এর বাহ্যিক রূপ এর অন্তরালে
রয়েছে প্রাচীন ভারতের সমাজ ও মানুষের কথা। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে রচনাটি নিছক
ভূতের গল্প নাকি রাজনৈতিক রুপককাহিনী
? এখন যুক্তি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যাক।

 

         প্রথমেই দেখা যাক রচনাটিকে “ভূতের গল্প” বলা যায়
কিনা
?

১. সাধারনত
ভূতের গল্পে একটা ভয়ালো গা ছমছম করানো ভৌতিক পরিবেশ থাকে। ২. সেখানে বেশ কিছু
ভুতুড়ে বা অলৌকিক কান্ড কারখানা ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু এই রচনায় তেমন কোনো
অলৌকিক ঘটনা বা ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সুতরাং এটিকে যথার্থ ভূতের গল্প বলা
যায় না।

 

        তাহলে এটা কি রাজনৈতিক রূপক কাহিনী ? দেখা যাক-

রুপক রচনায়
থাকে দুটি ভিন্ন রূপ। একটি বাহ্যিক এবং অন্যটি তার অন্তর্নিহিত সত্য স্বরূপ।
এখানেও দুটি রূপের সন্ধান মেলে। ভূত
  অর্থে প্রেতাত্মাকে বোঝালেও এখানে ভূত বলতে বহু  প্রাচীনকাল
থেকে প্রচলিত ধর্মতন্ত্র
, যুক্তিহীন
সংস্কারের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং প্রথাচারের প্রতি
  বিশ্বাসকে বোঝানো
হয়েছে। যা মানুষের স্বাধীন চিন্তা ভাবনার ক্ষমতাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে।
যুক্তিগ্রাহ্য পথে চলার সাহসকে মেরে ফেলেছে
, কেড়ে নিয়েছে প্রতিবাদের ক্ষমতা।ফলে একদিকে যেমন ধর্মতন্ত্রের যাঁতাকলে
শিরোমণি চূড়ামণিদের দ্বারা মানুষকে পৃষ্ঠ হতে হয়েছে
, অন্যদিকে বর্গী বুলবুলি অর্থাৎ ইংরেজ সহ বিভিন্ন
সাম্রাজ্যবাদী ও দস্যুদের দ্বারা অত্যাচারিত ও লুণ্ঠিত হতে হয়েছে। ফলে উন্নতির
পরিবর্তে দেশে অধগতি ঘটেছে। এ তো
1919 সালে লেখা ইংরেজ শাসিত পরাধীন দেশে সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস- যা
“কর্তার ভূত”কথিকাটির রূপকের অন্তরালে প্রকাশ্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট
হয়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে ড. ক্ষেত্র গুপ্তের মন্তব্য এটি -“অতি তীক্ষ্ণ
সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যঙ্গ”। সুতরাং “কর্তার ভূত” রচনাটি ভূতের গল্প
নয়
,
আসলে রাজনৈতিক রুপককাহিনী।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *