গুরু নাটকে গুরুর স্বরূপ বিশ্লেষণ কর | গুরু নাটক একাদশ শ্রেণি বাংলা নোটস |

গুরু নাটকে
গুরুর স্বরূপ:

 

       রবীন্দ্রনাথ চিরকালের মতো
মুক্ত মানসিকতা ও মুক্ত মানবতার প্রতীক। প্রচলিত সংস্কার আর ধ্যান ধারণাকে ভেঙে
দিয়ে নতুনের প্রাণ প্রতিষ্ঠায় ব্রতী। তার “গুরু” নাটকে
“গুরুর” স্বরূপ বিশ্লেষনেও সেই মানসিকতা স্পষ্ট প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
নিয়মতান্ত্রিক গুরু বা প্রচলিত বংশানুক্রমিক গুরুর স্বরূপে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন
না। তার মতে গুরু হলেন সর্বসংস্কারমুক্ত মানবতার বিগ্রহ। তিনি সকল জ্ঞানের আধার।
রবীন্দ্র ভাবনায় যিনি শিব্যকে অসভ্য থেকে সভ্যের পথে
, অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে আলোর জগতে নিয়ে আসেন তিনিই গুরু।
যিনি মনের সকল অন্ধত্ব
, জড়ত্ব দূর করে
প্রতিটি ক্ষুদ্র প্রাণকে বিশ্ব প্রাণের সাথে মিলিত করেন তিনি গুরু। যিনি সকল
কুসংস্কার আর ভিত্তিহীন নিয়ম শাসনকে ভেঙে দিয়ে জগতে ছড়িয়ে দেন নব প্রাণোন্মদনা
তিনিই
গুরু। তিনি এক হলেও বিভিন্ন জনের
কাছে বিভিন্ন। নব নব রূপে বিচিত্র তার প্রকাশ। তাই নাটকে আমরা দেখি পঞ্চকের কাছে
তিনি মুক্ত পৃথিবীর আহ্বান। তাই আচারসর্বস্ব সব পুঁথিকে দূরে সরিয়ে সে প্রস্তুত
হয় গুরুর সান্নিধ্য লাভে। আচার্য অদীনপুন্যের কাছে গুরু হলেন শান্তি এবং পুণ্যের
প্রতীক। তাঁর মতে অপরাধের মাত্রা পূর্ণ হলেই গুরুর আগমন ঘটে। নিয়মনিষ্ঠদের
ভ্রান্ত ধারণায় গুরু নিয়মতন্ত্রের শীর্ষ ব্যক্তি হলেও তিনি আসলে সর্ব জাতি
সম্প্রদায়ের মহামিলন। যজ্ঞের হোতা। দর্ভকদের কাছে তিনি গোঁসাই ঠাকুর। যূনকদের
কাছে তিনি দাদা ঠাকুর। আচার্যদের কাছে তিনি গুরু। আসলে অভ্যাসের চক্র থেকে বের করে
সোজা রাস্তায় বিশ্বের সঙ্গে অচলায়তনের অধিবাসীদের দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্যই
তার আগমন। তাই যূনকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ভেঙে ফেলেন অচলায়তনের প্রাচীর।

       অর্থাৎ রবীন্দ্রভাবনায়
গুরুর কোনো জাত নেই
, নেই কোনো
সাম্প্রদায়িক ভেদ বিচার। নেই বর্ণ কৌলিন্য।
বরং আছে জ্ঞান, আছে সত্য, আছে মুক্তি। আর তার মধ্যে আছে প্রাণে
প্রাণ মিল করে দেবার প্রবল সচেতনা। জড়ত্ব
, অন্ধত্ব আর অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে সত্য ও আলোর জগতে উত্তরণের পথ প্রদর্শকই
প্রকৃত অর্থে গুরু। কবির ভাষায়-

তিমির বিদার উদার অভ্যুদয় তোমারি হউক জয়”।

 

ষষ্ঠ গানটি
দর্ভকদের গাওয়া-

ও অকূলের কূল ও অগতির গতি”।

গানটির গঠন
বিন্যাস ও ভাবগত সুষমা ততটা না থাকলেও গানটির মধ্যে দিয়ে প্রাণের ভাষায় উচ্চারিত
হয়েছে অকৃত্রিম ঈশ্বর ভক্তি।

 

        গুরু” নাটকের নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে সপ্তম এবং শেষ
গান-

ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়”।

 

    অচলায়তনে
সুদীর্ঘ লালিত কুসংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ তো ভেঙে পড়েছে। সেই প্রসঙ্গে গানটির
প্রয়োগ ঘটেছে। যূনক ও দর্ভকদের গুরু বন্দনার এই গানটির মধ্যে দিয়ে নাট্যকার তুলে
ধরেছেন গরুর আদর্শকে। গুরুর আগমনে নিয়ন্ত্রণ তো বন্ধন আর জড়ত্বের অবসান। মুক্তি
আর মিলনের মধ্যে দিয়েই গুরুর জয়ের বার্তা উচ্চারিত হয়েছে।

 

       এভাবেই গান গুলির মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ঘটনার আবহাওয়া, কখনো বা চরিত্র হয়েছে তাৎপর্যমণ্ডিত। আবার এই গানগুলিই
নাট্যব্যাঞ্জনাকে পৌঁছে দিয়েছে সার্থকতায়। গানগুলি রচনা ও প্রয়োগ নৈপুণ্য
সত্যিই অসাধারণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top