পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি গুরুপ্তপূর্ণ তা আলোচনা করো |

পাঠক্রম প্রণয়নের
ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি গুরুপ্তপূর্ণ তা আলোচনা করো।

 

পাঠক্রম প্রণয়নের
ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এর দ্বারা শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি পূরণ হবে তা দেখা।
আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর সুসংহত এবং সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন ও সামাজিক
কল্যাণ। অর্থাৎ প্রতিটি শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক, সামাজিক ও
কৃষ্টিমূলক বিকাশ পাঠক্রম অনুশীলনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হবে। তা ছাড়া শিক্ষার্থী
যাতে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারে এবং ভবিষ্যৎ জীবনে জীবিকা
অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পাঠক্রম প্রণয়ন করা প্রয়োজন।



নীচে পাঠক্রম প্রণয়নে
শিক্ষার উদ্দেশ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল :

(১) শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশ : শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ
উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশে সহায়তা করা। এজন্য পাঠক্রমে দৈহিক বিকাশে সহায়ক
বিষয় এবং স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

(২) শিক্ষার্থীর
মানসিক বিকাশ
: শিক্ষার আর-একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর
মানসিক বিকাশে সহায়তা করা। আমরা জানি মানুষের দেহের সঙ্গে মনের যোগ নিবিড়। অর্থাৎ
একটি সুস্থ দেহেই থাকে একটি সুস্থ মন। সুস্থ মন শিক্ষার্থীকে সুপথে পরিচালিত করে, তাই
মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহকে পাঠক্রমে স্থান দিতে হয়।

(৩) শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক বিকাশ : শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক
বিকাশ ঘটানো শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই পাঠক্রম প্রণয়নের সময় শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক
বিকাশের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য পাঠক্রমে বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের
ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।

(৪) শিক্ষার্থীর নৈতিক বিকাশ : মানবজীবনের নৈতিক
মান উন্নয়নের দ্বারা আদর্শ চরিত্র গঠিত হয়, যা শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
তাই শিক্ষার্থীর মধ্যে যাতে নৈতিক মূল্যবোধ ও উন্নতমানের জীবনাদর্শ গড়ে উঠতে পারে,
সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখে পাঠক্রমের মধ্যে নানা প্রকারের অভিজ্ঞতা ও কার্যাবলিকে
স্থান দিতে হবে।

(৫) শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশ : শিক্ষার্থীর সামাজিক
চেতনার বিকাশ আধুনিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। তাই পাঠক্রম নির্ধারণের সময়
অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি সামাজিক চেতনার বিকাশে সহায়ক বিষয়গুলিকে পাঠক্রম স্থান
দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য সমাজবিদ্যা, রাষ্ট্রনীতি, সমাজসেবা প্রভৃতি বিষয়কে
অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(৬) শিক্ষার্থীর কৃষ্টিমূলক বিকাশ : পাঠক্রম প্রণয়নের
সময় কৃষ্টিমূলক বিকাশের প্রতি নজর রাখা প্রয়োজন। তাই নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, বিভিন্ন
শিল্পকলা ইত্যাদি বিষয়কে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কৃতিচর্চা করতে হবে।

(৭) সংগতিবিধান: শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে
বিভিন্ন পরিবেশের সাথে সহজে মানিয়ে নিতে শেখানো। তাই পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে বিচিত্র
অভিজ্ঞতা যা শিক্ষার্থীকে সঙ্গতিবিধানে আরও দক্ষ করে তুলবে।

(৮) বৃত্তিমূলক উদ্দেশ্য : প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে
ভবিষ্যৎ জীবনে কোনো না কোনো পেশা গ্রহণ করতে হয়। তাই বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি
বৃত্তিশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা প্রভৃতি পেশাসহায়ক শিক্ষাও পাঠক্রমে স্থান পেয়েছে।

(৯) শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা: পাঠক্রম শিক্ষার্থীর
সক্রিয়তাকে কেন্দ্র করে রচিত হওয়া উচিত। নানা প্রকারের সমাজকল্যাণমূলক কাজ, সৃজনশীল
কাজ, উৎপাদনশীল ক্রিয়া, খেলাধুলো, নানান উৎসব-অনুষ্ঠান প্রভৃতিকে পাঠব্র অন্তর্ভুক্ত
করলে শিক্ষার্থীরা তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তাই বিভিন্ন সক্রিয়তাভিত্তিক
কার্যাবলিকেও পাঠক্রমে স্থান দিতে হবে।

(10) গণতান্ত্রিক আদর্শ : গণতান্ত্রিক দেশের
পাঠক্রম অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব বিকাশের উপযোগী হবে। তাই গণতান্ত্রিক
চেতনা সমৃদ্ধ হয় এমন সব কার্যাবলি পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ওপরের আলোচনার
ভিত্তিতে বলা যায়, পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই পাঠক্রম প্রণয়নের সময় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।


 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *