সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠনের সীমাবদ্ধতা | সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি কার্যকর করার পথে বাধা |

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠনের সীমাবদ্ধতা

 

বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষাবিজ্ঞানীরা সহপাঠক্রমিক
কার্যাবলির গুরুত্ব স্বীকার করে নিলেও, এগুলির বাস্তব রূপায়ণের ক্ষেত্রে তথা বিদ্যালয়ে
এইসব কার্যাবলি সংগঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়। নীচে
কয়েকটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হল-

 



(1)
গতানুগতিক মনোভাব
: আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে বা
শিক্ষালয়ে আসে ডিগ্রি লাভের আশায়। কারণ জীবিকা অর্জনের জন্য চাকরির ক্ষেত্রে ডিগ্রি
অপরিহার্য। তাই শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে অবহেলা করে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ডিগ্রি লাভের সঙ্গে সম্পর্কযুক্তও নয়। বরং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে
অধিক সময় ব্যয় করলে ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হয়।

(2)
পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা
: আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত পুথিকেন্দ্রিক
এবং পরীক্ষানির্ভর। পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত পরীক্ষা বা মূল্যায়নের ব্যবস্থা
থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে পরীক্ষা নেওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা
থাকে না। তাই শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলিকে তেমনভাবে গুরুত্ব দিতে চায় না।

(3)
অর্থাভাব:
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে গেলে যে পরিমাণ
অর্থের প্রয়োজন হয়, বহু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবক-অভিভাবিকা ওই অর্থ ব্যয়
করতে রাজি হন না। ফলে অর্থের অভাবেও বহু বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা
করা যায় না।

(4)
উপযুক্ত শিক্ষকশিক্ষিকার অভাব
: শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার সহপাঠক্রমিক
কার্যাবলি সংগঠন করতে গেলে, সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং উৎসাহী শিক্ষকশিক্ষিকার প্রয়োজন
হয়। আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলিতে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অভিজ্ঞ শিক্ষকশিক্ষিকার
যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

(5)
অভিভাবক-অভিভাবিকাদের উদাসীনতা :
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে আজও
এই ধারণা রয়েছে বিদ্যালয় বা শিক্ষালয় হল শুধুমাত্র পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয়ের চর্চার
স্থান। তাঁদের মতে সহপাঠক্রমিক বিষয়ে বিদ্যালয়ে চর্চার প্রয়োজন নেই। এগুলি শিক্ষার্থীদের
পঠনপাঠন তথা পাঠক্রমের বিষয় চর্চাকে ব্যাহত করে। তাই বহু অভিভাবক-অভিভাবিকা এ বিষয়ে
উদাসীন থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির চর্চা অনেকাংশে অসম্পূর্ণ
রয়ে যায়।

 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি কার্যকর করার পথে বাধা

 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির গুরুত্ব সম্পর্কে
সমস্ত চিন্তাবিদ এবং শিক্ষাবিদ একই মত প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে,
বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সার্থক করে তোলায় এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করায় এর
প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে আমাদের দেশের সমস্ত বিদ্যালয়ে এর সামঞ্জস্যপূর্ণ অনুশীলনের
ব্যবস্থা আজও সম্ভব হয়নি। উপযুক্ত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে এবং বিদ্যালয়গুলির
আর্থিক সংগতির উপযুক্ত বন্দোবস্ত না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি
সংগঠিত করতে গিয়ে অসুবিধা হচ্ছে।

 

(1)
পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা :
পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এর জন্য
অনেকাংশে দায়ী।

(2)
শিক্ষামূলক পরিকল্পনাকারীদের উদাসীনতা:
শিক্ষামূলক পরিকল্পনা যাঁরা রচনা করেন, তাঁদের
উদাসীনতাও অনেক ক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার পথে বাধার সৃষ্টি করে।

(3)
উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব :
উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি বাস্তবায়নের
ক্ষেত্রে আর-একটি বিশেষ বাধা।

(4)
অতিরিক্ত বিষয় :
1964-66 সালের কোঠারি কমিশনের রিপোর্টে কর্ম-অভিজ্ঞতা, সমাজসেবা
এবং শারীরশিক্ষা বিষয়কে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গ
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এটিকে কয়েক বছর মাধ্যমিক পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা
করলেও বর্তমানে তা মাধ্যমিক পরীক্ষায় অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। মোট কথা
শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষা, সমাজসেবা ও বিদ্যালয় কৃত্যালি-বিষয়গুলি বর্তমানে জনপ্রিয়তা
হারিয়েছে। বর্তমানে বহু বিদ্যালয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস,
প্রজাতন্ত্র দিবস পালন হয় না। শিক্ষক-শিক্ষিকা ওই দিনগুলিতে ছুটি উপভোগ করে। শিক্ষার্থীরা
এর পূরোপুরি সুযোগ গ্রহণ করে।


 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top