প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের সাহিত্যিক উপাদানগুলির সম্পর্কে আলোচনা | The Literary Elements | PDF |



 The Literary Elements


প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের সাহিত্যিক উপাদানগুলির সম্পর্কে আলোচনা

 

   প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদানগুলিকে
মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—সাহিত্যিক উপাদান এবং প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান।

সাহিত্যিক উপাদানঃপ্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
। সাহিত্যিক উপাদানগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে । যেমন— (১) দেশীয় সাহিত্য এবং
(২) বৈদেশিক বিবরণী ।

(১)
দেশীয় সাহিত্য
:
 প্রাচীন
ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে দেশীয় সাহিত্যের ভান্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ ।
দেশীয় সাহিত্যগুলির মধ্যে বৈদিক যুগের সাহিত্য, মহাকাব্য, পুরাণ, স্মৃতিশাস্ত্র,
ষড়দর্শন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থ, সংস্কৃত সাহিত্য, জীবনচরিত, আঞ্চলিক ইতিহাস
গ্রন্থ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।

বৈদিক
সাহিত্য
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগের ভারতীয় ইতিহাস
রচনার ক্ষেত্রে বৈদিক সাহিত্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্বেদ অর্থাৎ ঋক, সম, যজুঃ
ও অথর্ব বেদ থেকে আর্যদের সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি নানা বিষয়
সম্পর্কে জানা যায় ।

মহাকাব্য—প্রাচীনকালের
বিভিন্ন রাজকাহিনী, আর্যদের সঙ্গে অনার্যদের সংঘর্ষের কাহিনী, দক্ষিণ ভারতে আর্য
সভ্যতার বিস্তার, সমকালীন সামাজিক অবস্থা প্রভৃতি জানার কাজে মহাকাব্যগুলি প্রাচীন
ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে খুবই সহায়তা করে থাকে ।

বৌদ্ধ
ও জৈন ধর্মগ্রন্থ
 
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থগুলি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপিটক, জাতক, দীপবংশ, মহাবংশ,
আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প, ললিতবিস্তার, বুদ্ধচরিত প্রভৃতি যথেষ্ট মূল্যবান গ্রন্থ ।
জৈন ধর্মগ্রন্থের মধ্যে দ্বাদশ অঙ্গ, জৈন কল্পসূত্র, জৈন ভগবতী সূত্র, আচারাঙ্গ
সূত্র, পরিশিষ্ট পার্বণ, প্রবন্ধচিন্তামণি, প্রবন্ধকোষ প্রভৃতি সমকালীন ভারতের
সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, অর্থনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে জানার উল্লেখযোগ্য উপাদান ।

আঞ্চলিক
ইতিহাস গ্রন্থ
  প্রাচীনকালে
আঞ্চলিকভাবে লিখিত কিছু ইতিহাস গ্রন্থও পাওয়া যায়, যেগুলি ইতিহাসের উপাদান
হিসেবে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — কলহনের
রাজতরঙ্গিনী। এতে কাশ্মীরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে । ভারতীয় সাহিত্যে এটিকেই প্রথম
ইতিহাসের মর্যাদা দেওয়া হয় ।

(২)
বৈদেশিক বিবরণী
 প্রাচীনকালে
বিভিন্ন সময় ধর্ম, বাণিজ্য, ভ্রমণ, রাজ্যজয় প্রভৃতি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন
পর্যটক ভারতে এসেছিলেন এবং তাঁরা অনেকেই তাঁদের ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখে গিয়েছেন যা
আজকের দিনে ইতিহাস রচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মধ্যে গ্রিক, রোমান,
চৈনিক, তিব্বতীয়, আরবি প্রমুখ পর্যটকদের বিবরণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।

গ্রিক
বিবরণ
— হেরোডোটাস কখনো ভারতে না এলেও তাঁর রচিত
গ্রন্থ ‘Persae’ বা ইতিহাসমালা থেকে আমরা পারসিকগণ কর্তৃক উত্তর-পশ্চিম ভারত
আক্রমণ ও অধিকারের কথা জানতে পারি। গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের
আমলে ভারতে এসেছিলেন । তাঁর লেখা ইন্ডিকা গ্রন্থটি সমকালীন ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ
দলিল । এ ছাড়া, জনৈক গ্রিক নাবিকের লেখা ‘পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রিয়ান সী’ বা ভারত
মহাসাগরে ভ্রমণ, এবং টলেমির ভূগোল থেকে তৎকালীন ভারতের ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে
মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় ।

রোমান
বিবরণ
  রোমান লেখক কুইন্টাস কার্টিয়াসের
রচনায় আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের বিবরণ পাওয়া যায় । প্লিনির ‘প্রাকৃতিক
ইতিহাস’ থেকে সমকালীন সমুদ্রপথ এবং ভারতের সঙ্গে রোম ও গ্রিসের ব্যবসাবাণজ্য
সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় l

চৈনিক
ও তিব্বতীয় বিবরণ
 প্রাচীন
ভারতের ইতিহাসের প্রথম দিকের জন্য গ্রীক গ্রন্থসমূহের মত, চীনের ইতিবৃত্ত শেষের
দিকের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ । চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েন রচিত ফো-কুয়ো-কি একটি
মূল্যবান গ্রন্থ ।
 


Download Pdf

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top