ন্যায় দর্শন প্রশ্ন-উত্তর | ভারতীয় দর্শনের চতুর্থ অধ্যায় | একাদশ শ্রেণি |

 ন্যায় দর্শন



1. ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

মহর্ষি গৌতম।

2. ন্যায় দর্শনের আদি বা মূল গ্রন্থের নাম
কি?

“ন্যায় সূত্র”।

3. ন্যায় সূত্রের প্রথম ভাষ্য রচনা করেন
কে?

বাৎসায়ন।

4. ন্যায় মতে প্রমাণ কি?

প্রমাণ হল প্রমার কারণ।

5. ন্যায় দর্শনে কয়টি প্রমাণ স্বীকৃত হয়েছে?

চারটি। যথা-প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ।

6. ন্যায় মতে প্রমা বা যথার্থ জ্ঞান কয়
প্রকার ও কি কি?

চার প্রকার। যথা- স্মৃতি, সংশয়, ভ্রম ও তর্ক।

7. ন্যায় মতে অনুমানের ভিত্তি কি?

পক্ষ ধর্মতা ও ব্যাপ্তি জ্ঞান।

8. পরামর্শ কি?

ন্যায় মতে ব্যাপ্তি বিশিষ্ট পক্ষ ধর্মতা
জ্ঞানকেই পরামর্শ বলে।

9. অনুমিতি কি?

পরামর্শ থেকেই যে জ্ঞান পাওয়া যায় তাকেই
বলা হয় অনুমিতি।

10. মহর্ষি গৌতম এর অপর নাম কি?

অক্ষ পাদ।

11. হেতুর অপর নাম কি?

লিঙ্গ বা চিহ্ন।

12. নব্য ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে?

গঙ্গেশ উপাধ্যায়।

13. “তত্ত্বচিন্তামণি”- গ্রন্থটি
কার লেখা?

গঙ্গেশ উপাধ্যায়ের।

14. “ন্যায় মঞ্জুরি”- গ্রন্থটি
কার লেখা?

জয়ন্ত ভট্ট।

15. ন্যায় মতে প্রত্যক্ষ কি?

ন্যায় মতে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সন্নিকর্ষের  ফলে যে জ্ঞান উৎপন্ন হয় তাকেই প্রত্যক্ষ
বলে।

16. মহর্ষি গৌতমের মতে প্রত্যক্ষের সংজ্ঞা
দাও।

মহর্ষি গৌতম তার “ন্যায় সূত্র”
গ্রন্থে প্রত্যক্ষের লক্ষণ বর্ণনায় বলেছেন- “ইন্দ্রিয়ার্থ সন্নিকর্ষোৎ
 পন্নং জ্ঞানং অব্যাপ্যদেশম্ অব্যভিচারী  ব্যবসায়ত্মকং  প্রত্যক্ষম্”।
অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের
  সঙ্গে বিষয়ের সংযোগে
সৃষ্ট যে জ্ঞান অন্যের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়, যা ব্যতিক্রমহীন এবং সুনিশ্চিত তাই
প্রত্যক্ষ।

 

17. ন্যায় দর্শনকে আস্তিক দর্শন বলে কেন?

ন্যায় দর্শন বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে
বলে একে আস্তিক দর্শন বলে।

18. ন্যায় মতে প্রত্যক্ষ কয় প্রকার ও কি
কি?

প্রত্যক্ষ দুই প্রকার। যথা- লৌকিক প্রত্যক্ষ
ও অলৌকিক প্রত্যক্ষ।

লৌকিক প্রত্যক্ষ-
যে প্রত্যক্ষে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের লৌকিক সন্নিকর্ষ ঘটে তাকে লৌকিক প্রত্যক্ষ
বলে।

যেমন- চক্ষু ইন্দ্রিয় দ্বারা বস্তুর রূপ
প্রত্যক্ষ করা।

19. লৌকিক প্রত্যক্ষ কয় প্রকার ও কি কি?

তিন প্রকার। যথা- নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ,
সবিকল্পক প্রত্যক্ষ, প্রত্যাভিজ্ঞা।

নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ-
“বিকল্প” শব্দের অর্থ হলো বিশেষণ। তাই অন্নংভট্ট “তর্কসংগ্রহ”
গ্রন্থে বলেছেন- “নিস্প্রকারকং জ্ঞানং নির্বিকল্পকম্”-

অর্থাৎ যে প্রত্যক্ষে কেবল বস্তুর অস্তিত্ব
জানা যায়, বস্তুর নাম, জাতি, গুণ ইত্যাদি বিশেষণহীন রূপে বস্তু প্রত্যক্ষ হয় তাকে
নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ বলে।

যেমন- দূরে একটি ফুল পড়ে থাকতে দেখা।

সবিকল্প প্রত্যক্ষ-
প্রখ্যাত নৈয়ায়িক অন্নংভট্ট তাঁর “তর্কসংগ্রহ” গ্রন্থে বলেছেন-“সম্প্রকারকং
   জ্ঞানং সবিকল্পকম্”- অর্থাৎ যে প্রত্যক্ষে
নাম, জাতি, গুণ ইত্যাদি বিশেষণ রূপে বস্তুর স্বরূপের জ্ঞান লাভ হয়, তাকে সবিকল্পক
প্রত্যক্ষ বলে।

যেমন- আমি জানছি টেবিলের উপর একটি ফুলদানি
আছে।

প্রত্যাভিজ্ঞা প্রত্যক্ষ-
কোনো বস্তু বা ব্যক্তি প্রত্যক্ষ করা মাত্রই তাকে পূর্ব জ্ঞাত বলে জানতে পারাই হল প্রত্যাভিজ্ঞা।

যেমন – সামনে কাউকে দেখে তাকে আমার বন্ধু
বলে চিনতে পারা।

20. অলৌকিক প্রত্যক্ষ কাকে বলে?

যে প্রত্যক্ষে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের
অলৌকিক সন্নিকর্ষ ঘটে তাকে অলৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। যেমন- মানুষ দেখামাত্রই “মনুষ্যত্ব”
জাতির যে প্রত্যক্ষণ হয় তা হলো অলৌকিক প্রত্যক্ষ।

21. অলৌকিক প্রত্যক্ষ কয় প্রকার ও কি কি?

তিন প্রকার।যথা-সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ,
জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ, যোগজ প্রত্যক্ষ।

সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ
– যে প্রত্যক্ষে ব্যক্তি বা বস্তুর জাতির প্রত্যক্ষণ হয় তাকে সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ
বলে।

যেমন – টেবিল দেখামাত্রই “টেবিলত্বের”
জ্ঞান লাভ।

জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ-
যে প্রত্যক্ষে কোনো ইন্দ্রিয় নিজস্ব বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও অন্য ইন্দ্রিয়ের

বিষয়ীভূত গুণ প্রত্যক্ষ করা
যায়, তাকে জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ বলে। যেমন- “সুরভি চন্দনম্”- অর্থাৎ দূরে
চন্দন কাঠ দেখে তার সুগন্ধের যে জ্ঞান লাভ তাই জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ।

যোগজ প্রত্যক্ষ-
যে প্রত্যক্ষে যোগাভ্যাসের দ্বারা ভূত ভবিষ্যতের বিষয়কে প্রত্যক্ষ করা যায়, তাকে
যোগজ প্রত্যক্ষ বলে।

যেমন- কর্মফল, জন্মান্তর, পাপ-পুণ্য ইত্যাদি
বিষয়ে মুনি-ঋষিদের বচন /কথা। অনু -পরমাণু বিষয়ে বৈজ্ঞানিকদের মত।

22. “সর্ব শাস্ত্রের প্রদীপ”- বলা
হয় কোন দর্শন কে?

ন্যায় দর্শনকে।

23. সন্নিকর্ষ কী?

ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগ বা সম্বন্ধকে
সন্নিকর্ষ বলে।

24. কোন প্রত্যক্ষে কোন সন্নিকর্ষ হয়?

a. বস্তু প্রত্যক্ষে – সংযোগ সন্নিকর্ষ 

b. রুপ প্রত্যক্ষে – সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ

c. রূপের জাতি (রূপত্ব) – সংযুক্ত সমবেত সমবায়
সন্নিকর্ষ

d. শব্দ প্রত্যক্ষে – সমবায় সন্নিকর্ষ

e. শব্দত্ব প্রত্যক্ষে – সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ

f. অভাব প্রত্যক্ষে – বিশেষ্য বিশেষণাভাব
সন্নিকর্ষ


1 thought on “ন্যায় দর্শন প্রশ্ন-উত্তর | ভারতীয় দর্শনের চতুর্থ অধ্যায় | একাদশ শ্রেণি |”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top