ন্যায় মতে অনুমান কি? অনুমান কয় প্রকার ও কি কি? পরার্থানুমান বা পঞ্চাবয়বী ন্যায় এর প্রতিটি অবয়বের প্রয়োজন উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

ন্যায় দর্শন 


ন্যায় মতে অনুমান কি? অনুমান কয় প্রকার ও কি কি? পরার্থানুমান বা পঞ্চাবয়বী
ন্যায় এর প্রতিটি অবয়বের প্রয়োজন উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

 

ন্যায় মতে অনুমান

    ন্যায় দর্শনে যে কয়টি প্রমাণ স্কীকৃত
হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো অনুমান প্রমাণ। এই অনুমান বলতে বোঝায়- অনু+মান=অনুমান।
অনুমানের “অনু” কথার অর্থ পশ্চাৎ এবং “মান” শব্দের অর্থ জ্ঞান।
এক কথায় যাকে পশ্চাৎ জ্ঞান বোঝায়। তাই ন্যায় মতে যে মানসিক প্রক্রিয়ায় জানা বিষয়ের
ভিত্তিতে অজানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করা যায় তাকেই অনুমান বলে।

উদাহরণ- অতীতে ধোঁয়া এবং আগুনের পাশাপাশি অবস্থান দেখে তার ভিত্তিতে বর্তমানে
ধোঁয়া দেখে আগুনের জ্ঞান লাভের যে চেষ্টা করা হয় তাই অনুমান।

 


অনুমানের প্রকারভেদ:

 

        ন্যায় মতে অনুমান
দুই প্রকার- স্বার্থানুমান ও পরার্থানুমান।

স্বার্থানুমান- ন্যায় মতে স্বার্থ +অনুমান= স্বার্থানুমান।এর
“স্বার্থ” শব্দের অর্থ হল নিজ। তাই যে অনুমানে নিজের জ্ঞান লাভের চেষ্টা
করা হয় তাকেই স্বার্থানুমান বলে।

যেমন- দূরে পর্বতে ধোঁয়া উড়তে দেখে অনুমান করা যায় পর্বতটিতে আগুন আছে।

 

পরার্থানুমান- 

ন্যায় মতে পর+অর্থে= পরার্থে। তাই যে অনুমানে
নিজ জ্ঞান লাভের বিষয়টি অন্যকে বোঝানোর প্রয়োজনে অনুমান করা হয় তাকে পরার্থানুমান
বলে। এই পরার্থানুমানের জন্য পাঁচটি অবয়বের প্রয়োজন হয়। যেগুলি হল-

1. প্রতিজ্ঞা- পর্বতটি হয় বহ্ণিমান।

2. হেতু- পর্বতটি হয় ধুমবান।

3. উদাহরণ- যেখানে যেখানে ধুম সেখানে সেখানেই বহ্নি।যেমন- রান্নাঘর, যজ্ঞগৃহ
ইত্যাদি।

4. উপনয়- পর্বতটি হয় বহ্নি ব্যাপ্য ধুমবান।

5. নিগমন বা সিদ্ধান্ত-পর্বতটি হয় বহ্নিমান।

 

 

পঞ্চাবয়বী ন্যায় :

ন্যায় দর্শনে পরার্থানুমান যেহেতু পাঁচটি অবয়ব নিয়ে গঠিত সেজন্য ন্যায়
দার্শনিকগণ এই
  পরার্থানুমানকে
পঞ্চাবয়বী ন্যায় বলে থাকেন।

 

          এখন এই পঞ্চাবয়বী
ন্যায়ের প্রতিটি অবয়বের প্রয়োজন উদাহরণসহ নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. প্রতিজ্ঞা বাক্য – প্রখ্যাত নৈয়ায়িক অন্নংভট্ট তাঁর “তর্কসংগ্রহ”
গ্রন্থে বলেছেন-

“সাধ্য বওয়া পক্ষ বচনং প্রতিজ্ঞাঃ”- অর্থাৎ যে বাক্যের দ্বারা
পক্ষে সাধ্যের অস্তিত্ব প্রকাশ করা হয় তাকে প্রতিজ্ঞা বাক্য বলে।

যেমন- “পর্বতটি হয়  বহ্নিমান”-এখানে
পর্বত হল “পক্ষ পদ” এবং “বহ্নি” হল “সাধ্যপদ”। তাই পক্ষে
(পর্বতে) সাধ্যের(বহ্নির) অস্তিত্ব বোঝানোর জন্য এটি প্রতিজ্ঞা বাক্য বলা যায়।

 

2. হেতু বাক্য: ন্যায় মতে- “সাধ্য সাধনং হেতু”- অর্থাৎ যে বাক্যের
দ্বারা সাধ্যকে সাধন করা হয় তাকে হেতু বাক্য বলে।

যেমন-“পরবর্তী হয় ধুমবান”- এখানে ধোঁয়ার সাহায্যে পর্বতে আগুনের
অস্তিত্ব বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাই এটি হেতু বাক্য বলতে হয়।

 

3. উদাহরণ বাক্য : ন্যায় মতে- “দৃষ্টান্ত উদাহরণং”- অর্থাৎ যে
বাক্যের দ্বারা ধোঁয়া এবং আগুনের মধ্যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ দেখানো হয়েছে তাকে উদাহরণ
বাক্য বলে।

যেমন- যেখানে যেখানে ধুম সেখানে সেখানেই বহ্নি। (যেমন- রান্নাঘর, যজ্ঞগৃহ)।
এই বাক্যের দ্বারা ধোঁয়া (হেতু পদ) ও বহ্নি (সাধ্য পদ)-এই দুটি পদের মধ্যে ব্যাপ্তি
সম্বন্ধের জ্ঞান লাভ সম্ভব হয়েছে। সেজন্য একে উদাহরণ বাক্য বলা যায়।

 

4. উপনয় বাক্য: ন্যায় মতে-“সাধ্যসোপনয়ঃ”- অর্থাৎ যে বাক্যের
দ্বারা বহ্নি ব্যাপ্য ধুমের অস্তিত্ব প্রকাশ করা হয় তাকে উপনয় বাক্য বলে।

যেমন- “পর্বতটিতে বহ্নি ব্যাপ্য ধুম আছে”- এর অর্থ আগুনের দ্বারা
ধোঁয়ার বিস্তৃতির মাধ্যমে পর্বতে আগুনের অস্তিত্ব স্বীকার করার জন্য এটিকে যথার্থ
উপনয় বাক্য বলা যায়।

 

5. নিগমন বা সিদ্ধান্ত বাক্য: ন্যায় মতে “পূর্ণবচনম্ নিগমনং”-
অর্থাৎ যে বাক্যের দ্বারা প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ ও উপনয় এই চারটি বাক্যের সংযোগের
মাধ্যমে পক্ষে সাধ্যের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয় তাই নিগমন বা সিদ্ধান্ত বাক্য।

যেমন- “পর্বতটি হয় বহ্নিমান”

 

মন্তব্য : সুতরাং উক্ত আলোচনা থেকে আমরা মনে করতে পারি
পরার্থানুমানের এই পাঁচটি বাক্য এটাই প্রমাণ করে যে এই অনুমানে কোনো অপ্রাসঙ্গিক বাক্যের
স্থান নেই। এর প্রতিটি অবয়ব বাক্যের নিজ নিজ কাজ ও প্রয়োজনীয়তা আছে বলা যায়।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top