সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি
বলতে কি বোঝ?
যে সমস্ত কার্যাবলি
শিক্ষার্থীর মানসিক শক্তি বিকাশের সহায়ক এবং যেগুলি শিক্ষার্থীর সু-সামঞ্জস্যপূর্ণ
ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, পাঠক্রমের সহযোগী সেইসব বিষয় বা কার্যাবলিকে বলা হয় সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলি। মনোবিদ রিভলিন (H. N. Rivlin) সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির যে সংজ্ঞা দিয়েছেন
তা হল- যে সব কার্যাবলি শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার সামগ্রিক জীবন
বিকাশের অন্যান্য দিকে সহায়তা করে তাদেরই বলা হয় সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি।
সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির
উদ্দেশ্য (Objective of Co-curricular Activities) :
সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির ধারণা
ও বিবর্তনের ধারা আলোচনার প্রসঙ্গে এই মতামত স্পষ্ট যে, সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার
উদ্দেশ্য পূরণের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর জীবন বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলির শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যগুলি হল—
(১) স্বাভাবিক প্রবণতার বিকাশ : প্রত্যেক শিশুই
জন্মসূত্রে কিছু অন্তনির্হিত প্রবণতার অধিকারী। শিক্ষকের কাজ হল শিক্ষার্থীর ওই সমস্ত
সম্ভাবনাগুলির বিকাশে সহায়তা করা। আর এ কাজে শিক্ষককে সহায়তা দান করে সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলি। মহাত্মা গান্ধি বলেছিলেন যে, শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর দেহ, মন ও
আত্মার বিকাশ ঘটে। সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্য হল এই সকল সম্ভাবনাগুলির বিকাশ
সাধন।
(২) গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ : সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির
অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সমাজজীবনের উপযোগী গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ।
মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন না করে পারস্পরিক সহবাসের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক
চেতনা গড়ে ওঠে। N.C.C, Boys scouts, N.S.S ইত্যাদির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে
সহযোগিতা, দলগত মনোভাব ও সমবেদনামূলক মনোভাব জাগ্রত করা সম্ভব।
(৩) আত্মনির্ভরশীলতার বিকাশ : সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির
উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরশীলতার বিকাশ ঘটানো। বিদ্যালয়ে
শিক্ষার্থীরা যে যে কাজে পারদর্শিতা দেখাবে সে সকল কাজ সম্পাদনের মধ্য দিয়েই তাদের
আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হবে এবং এর মধ্য দিয়েই শিশুরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।
(৪) সহযোগিতার মনোভাব গঠন : শিক্ষার্থীদের মধ্যে
সহযোগিতামূলক মনোভাব, সমবেদনামূলক মনোভাব ইত্যাদির বিকাশ ঘটানো সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির
উদ্দেশ্য। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় পরিবারগুলি ছোটো হওয়ার কারণ পরিবারের সন্তান সংখ্যা
কম বা একটি। তারা পরিবারে সকল সুযোগ-সুবিধা নিজেই উপভোগ করার কারণে সহযোগিতার মনোভাব
গড়ে ওঠে না। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের
সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে।
(৫) একঘেয়েমি দূর করা : বিদ্যালয়ে প্রচলিত
শিক্ষা হল পুঁথিকেন্দ্রিক। প্রচলিত পুস্তককেন্দ্রিক পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে শিশুদের
শিক্ষার প্রতি একঘেয়েমি মনোভাব গড়ে ওঠে। সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্য বিদ্যালয়ের
প্রচলিত পুস্তক কেন্দ্রিক পঠন-পাঠনের একঘেয়েমি থেকে শিক্ষার্থীদের কিছুটা মুক্তি দেওয়া।
(৬) শারীরিক ও মানসিক বিকাশ : সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলির অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশে সহায়তা করা এবং আগ্রহ,
সম্ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন করা। খেলাধূলার মাধ্যমে যেমন শারীরিক বিকাশ হয় তেমনি
গানবাজনা, আবৃত্তি, কবিতাপাঠের মাধ্যমে মানসিক বিকাশ ঘটে।
(৭) শৃঙ্খলাবোধ গঠন : মানবজীবনের প্রতি
পদক্ষেপেই শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। শৃঙ্খলা হল ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত নিয়ন্ত্রণের
প্রবৃত্তি। তাই শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণবোধের বিকাশ ঘটানো সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলির উদ্দেশ্য। বিদ্যালয়ের খেলাধূলায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীদের
স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলার ভাব জেগে ওঠে।
(৮) চরিত্রগঠন : চরিত্রগঠন শিক্ষার একটি অন্যতম
লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের অবদমিত কামনা-বাসনাগুলির পরিতৃপ্তি
ঘটানো। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা স্কাউট, সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্স কোর ইত্যাদি কাজে অংশগ্রহণের
মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে সেবামূলক মনোভাবের বিকাশ হয়, যা শিক্ষার্থীদের সচ্চরিত্রের
অধিকারী করে গড়ে তোলে।
- সহ-পাঠক্রমি কার্যাবলি কী? সহ-পাঠক্রমি কার্যাবলি পরিচালনার মূলনীতিগুলি লেখ |
- শিল্পকেন্দ্রিক বুনিয়াদি পাঠক্রম কী? কেন্দ্রীয় বা মূল পাঠক্রম বলতে কী বোঝো?
- সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি বলতে কি বোঝ? বিভিন্ন ধরনের সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করো
- পাঠক্রমের সাংগঠনিক উপাদানগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও
- পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারনার সঙ্গে আধুনিক ধারণা পার্থক্য লেখ |
- পাঠক্রম বলতে কী বোঝ? আধুনিক পাঠক্রমে বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ
- পাঠক্রমের উপাদানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো (Factors of Curriculum)
- পাঠক্রম রচনা নীতিগুলি আলোচনা কর |
- পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি গুরুপ্তপূর্ণ তা আলোচনা করো।
- পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?
- পাঠক্রম কী? পাঠক্রম নির্ধারণে শিশুর কোন কোন চাহিদা ও ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া?
- পাঠক্রম কয় প্রকার ও কি কি? জীবন কেন্দ্রিক পাঠক্রমের সম্পর্কে আলোচনা কর |
- গতানুগতিক পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? গতানুগতিক পাঠক্রমের উপযোগিতা লেখো। গতানুগতিক পাঠক্রমে ত্রুটি গুলি আলোচনা কর।
- পাঠক্রম কি? গতানুগতিক পাঠক্রম ও আধুনিক পাঠক্রমের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযোগিতা গুলি লেখ। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের ত্রুটিগুলি আলোচনা কর।
- অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমের উপযোগিতাগুলি লেখ। অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমে ত্রুটিগুলি লেখ।
- অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রমের উপযোগিতা এবং ত্রুটি আলোচনা কর।
- সুশিক্ষকের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Competent Teacher)
- শিক্ষার্থীর উপর বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব |
- শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের গুরুত্ব (Importance of Heridity and Environment in Education)