পাঠক্রম কী? পাঠক্রম নির্ধারণে শিশুর কোন কোন চাহিদা ও ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া?

পাঠক্রম- পাঠক্রম শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ “শিক্ষার্থীকে
শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার পথ বা মাধ্যম”।

পাঠক্রম বলতে বোঝায়-
শিক্ষার্থীদের সমস্ত রকমের অভিজ্ঞতা যা দ্বারা শ্রেণীকক্ষে, কর্মশালায়, খেলার মাঠে
এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে লাভ করে। এই অর্থে বিদ্যালয়ের সমগ্র জীবনই
পাঠক্রম যা শিক্ষার্থী জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রেই স্পর্শ করে এবং সুসংহত ব্যক্তিত্ব গড়ে
তোলে।

‘কারিকুলাম’ শব্দের উৎস : বাংলা ‘পাঠক্রম’
শব্দটি ইংরেজি ‘কারিকুলাম’ (Curriculum)-এর প্রতিশব্দ। আর ইংরেজি ‘কারিকুলাম’ শব্দটি
মূল লাতিন শব্দ ‘কুরিয়ার’ (Currere) থেকে এসেছে।

‘কারিকুলাম’ শব্দের অর্থ : লাতিন শব্দ ‘কুরিয়ার’-এর
অর্থ হল ‘Race Course’ বা ‘দৌড়ের পথ’। দৌড়ের মাঠে যেমন একটি পথ ধরে নিজের সামর্থ্য
অনুযায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গন্তব্যস্থলে বা লক্ষ্যে পৌঁছোতে হয়, তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রে
শিক্ষার্থীও কারিকুলামের সাহায্যে তার চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার পূর্বনির্দিষ্ট
লক্ষ্যে পৌঁছোতে চেষ্টা করে।

 


 


» পাঠক্রম নির্ধারণে শিশুর চাহিদা : পাঠক্রম নির্ধারণের
ক্ষেত্রে শিশুর জৈবিক, মানসিক, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক চাহিদার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া
উচিত। কেননা প্রতিটি শিশুর মধ্যে কিছু মৌলিক এবং অর্জিত চাহিদা লক্ষ করা যায়। এই চাহিদাগুলিই
শিশুকে নির্দিষ্ট কাজে উদ্বুদ্ধ করে। সেই কারণে শিশুদের মধ্যে সক্রিয়তা অধিক মাত্রায়
জাগাতে হলে শিক্ষাকে করতে হবে চাহিদাভিত্তিক। শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতাগুলি এমন হওয়া উচিত
যাতে তা শিশু বা শিক্ষার্থীর কোনো না কোনো চাহিদা পূরণে সমর্থ হয়।

(1) জৈবিক চাহিদা : পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে
এমন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করাতে হবে, যাতে তার বিভিন্ন ধরনের জৈবিক চাহিদাগুলি তৃপ্ত
হয়। এই উদ্দেশ্যে পাঠক্রমে স্বাস্থ্যশিক্ষা, কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা, জীবনবিজ্ঞান
প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

(2) মানসিক চাহিদা : পাঠক্রমের মধ্যে এমন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত
করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীর মানসিক চাহিদা পরিতৃপ্ত হয়। পাঠক্রমে ভাষাসাহিত্য, গণিত,
ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করলে এই চাহিদা অনেকাংশে পরিতৃপ্ত
হয়।

(3) সামাজিক চাহিদা : পাঠক্রমের মধ্যে
এমন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীর সামাজিক চাহিদা পূরণ হয়। এর জন্য
ইতিহাস, ভূগোল, শারীরশিক্ষা, সমাজসেবা প্রভৃতি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষার্থীরা
উপকৃত হয়।

(4) প্রাক্ষোভিক চাহিদা : পাঠক্রমে সাহিত্য,
অঙ্কন, নৃত্য, সঙ্গীত, হাতের কাজ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাক্ষোভিক চাহিদা
পূরণ হয়। তাই পাঠক্রমে এই সব কাজ অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

 

পাঠক্রম নির্ধারণে শিশুর ক্ষমতা : শিশু স্বাভাবিকভাবে
কয়েকটি ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেয়। স্পিয়ারম্যানের মতে, শিশুর মানসিক ক্ষমতা
দু-ধরনের। একটি হল সাধারণ উপাদান যা বুদ্ধির সমতুল্য এবং অপরটি হল বিশেষ উপাদান যা
বিশেষ বিশেষ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ ক্ষমতাগুলি সংখ্যায় অনেক। প্রত্যেক শিশুর
মধ্যে একাধিক বিশেষ ক্ষমতা থাকতে পারে। এইসব ক্ষমতার অনুশীলন হওয়া প্রয়োজন। পাঠক্রমে
সবরকম ক্ষমতার অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। প্রত্যেক
শিক্ষার্থী যাতে নিজের বিশেষ ক্ষমতা এবং সাধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে, তার
ব্যবস্থা পাঠক্রমে থাকা উচিত। 


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top