পাঠক্রম বলতে কী বোঝো? পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারনার সঙ্গে আধুনিক ধারণা পার্থক্য লেখ |

পাঠক্রম বলতে কী
বোঝো?


পাঠক্রম- পাঠক্রম শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ “শিক্ষার্থীকে
শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার পথ বা মাধ্যম”।

পাঠক্রম বলতে বোঝায়-
শিক্ষার্থীদের সমস্ত রকমের অভিজ্ঞতা যা দ্বারা শ্রেণীকক্ষে, কর্মশালায়, খেলার মাঠে
এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে লাভ করে। এই অর্থে বিদ্যালয়ের সমগ্র জীবনই
পাঠক্রম যা শিক্ষার্থী জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রেই স্পর্শ করে এবং সুসংহত ব্যক্তিত্ব গড়ে
তোলে।

 



পাঠক্রমের গতানুগতিক
ধারণার সঙ্গে আধুনিক ধারণার পার্থক্য :

 

গতানুগতিক পাঠক্রম
সংক্রান্ত ধারণায় মানুষের মন কতকগুলি পরস্পর নিরপেক্ষ মানসিক ক্ষমতা বা শক্তির দ্বারা
গঠিত। পাঠক্রমের সাহায্যে মানুষের ক্ষমতা ও প্রবণতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। মানসিক শৃঙ্খল-বোধনীতি
(theory of formal discipline)-তে বলা হয়েছে, পাঠক্রম হল জ্ঞানমূলক পাঠ্যবিষয়ের সমাহার।
আর আধুনিক পাঠক্রমের ধারণায় পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য ও ব্যাখ্যা অনেক বাস্তব, আধুনিক ও
বৈজ্ঞানিক। পাঠক্রম ব্যক্তিসত্ত্বা ও মানসিক বিকাশে সহায়ক, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপাদান
ও অভিজ্ঞতাপুঞ্জের সমন্বয়। এই দুটি ধারণার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্থক্য পরিলক্ষিত
হয়।

(১) সংজ্ঞার পার্থক্য : পাঠক্রমের গতানুগতিক
বা traditional ধারণায় শিক্ষার উদ্দেশ্য যেমন সংকীর্ণ ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত তেমনি
পাঠক্রমের ধারণাও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র বিষয়বস্তু
বা জ্ঞান সংগ্রহ করা যায় এমন বিষয়ের সমাহারকে পাঠক্রম বলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে আধুনিক
বা Modern ধারণায় পাঠক্রম শিক্ষার ব্যাপক অর্থ ও সংবত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে
গড়ে উঠেছে। আধুনিক ধারণায় শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য সর্বাত্মক কর্ম ও
অভিজ্ঞতার সমষ্টিগত রূপকেই পাঠক্রম বলে মনে করা হয়।

(২) বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য : গতানুগতিক পাঠক্রম
ও তার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যায় এখানে কেবলমাত্র শিক্ষার্থীর মানসিক ও বৌদ্ধিক
বিকাশের উপযোগী অভিজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক পাঠক্রমে বিকাশের
উপযোগী সমস্তরকম অভিজ্ঞতাকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

(৩) পরিধি : গতানুগতিক পাঠক্রমে যেহেতু শুধুমাত্র বৌদ্ধিক
বিকাশ অন্তর্ভুক্ত, তাই অন্য ধরনের বিকাশমূলক কার্যকলাপকে বহি: পাঠক্রমিক কার্যাবলি
হিসেবে গণ্য করা হত এবং ওই সকল জ্ঞানমূলক কার্যাবলিকে মূলত শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধভাবে
অনুশীলন বা চর্চা করা হত। কিন্তু আধুনিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর সমস্ত প্রকার বিকাশমূলক
কার্যাবলিকেই, তা শ্রেণিকক্ষের অভ্যন্তরে অনুশীলন করাই হোক বা বাইরে অনুশীলন করা হোক,
বিদ্যালয়ে অনুশীলিত সকল কার্যাবলিকেই পাঠক্রমিক কার্যাবলি হিসেবে গণ্য করা হয়।

(৪) পরিবর্তনশীলতা : গতানুগতিক পাঠক্রম
অনড়, অচল, অপরিবর্তনশীল। কিন্তু আধুনিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যই হল এটি পরিবর্তনশীল ও
গতিধর্মী।

(৫) জীবন কেন্দ্রিকতা : গতানুগতিক পাঠক্রম
প্রায়শই পূর্ব নির্ধারিত ও অপরিবর্তনশীল। ফলতই পাঠক্রম অবাস্তব ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে
পড়ত। কিন্তু আধুনিক পাঠক্রম পরিবর্তনশীল ও গতিশীল। স্বভাবিকভাবেই পাঠক্রম জীবনকেন্দ্রিক
ও প্রয়োজনভিত্তিক।

(৬) ব্যাপকতা : আধুনিক ধারণায় শিক্ষার্থীর সমস্তরকম অভিজ্ঞতা
ও কার্যের সুসংহত রূপ হল পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত। তাই কেবলমাত্র পুঁথিগতই নয়, শিক্ষার্থীর
জীবনে বৈচিত্র্য, অভিজ্ঞতা ও কাজ সবকিছুই পাঠক্রমের অধীন।

(৭) কর্মকেন্দ্রিকতা : গতানুগতিক পাঠক্রমে
কর্মকে অবহেলা করা হয়েছে। কারণ সেখানে জ্ঞান আহরণ ও মানসিক শৃঙ্খলা সৃষ্টিকে প্রাধান্য
দেওয়া হয়েছে। ফলে পাঠক্রম হয়েছে পুঁথিগত। কিন্তু আধুনিক পাঠক্রম শুধুমাত্র পুঁথিকেন্দ্রিক
নয়, তা কর্ম ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক। নানারকম কর্মকে ভিত্তি করে এই পাঠক্রম গড়ে উঠেছে।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top