সহ-পাঠক্রমি কার্যাবলি কী? সহ-পাঠক্রমি কার্যাবলি পরিচালনার মূলনীতিগুলি লেখ |

সহ-পাঠক্রমি কার্যাবলি
কী?

সহ-পাঠক্রমি কার্যাবলি
– যে সমস্ত কার্যাবলি শিক্ষার্থীর মানসিক শক্তি বিকাশের
সহায়ক এবং যেগুলি শিক্ষার্থীর সু-সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, পাঠক্রমের
সহযোগী সেইসব বিষয় বা কার্যাবলিকে বলা হয় সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি। মনোবিদ রিভলিন
(H. N. Rivlin) সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা হল- যে সব কার্যাবলি
শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার সামগ্রিক জীবন বিকাশের অন্যান্য দিকে
সহায়তা করে তাদেরই বলা হয় সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি।

 


সহ-পাঠক্রমি কার্যাবলি
পরিচালনার মূলনীতি (Principles of direction of Co-curricular Activities) :

বিভিন্ন ধরনের সহ-পাঠক্রমিক
কার্যাবলিকে যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য কতকগুলি নিয়ম মেনে চলতে হয়। সেগুলি হল—

(১) নির্বাচনের স্বাধীনতা : সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি
নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
মধ্যে গণতান্ত্রিক ভাবধারার আদর্শ গড়ে তোলে সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি। শিক্ষার্থীরা
যদি স্বতঃস্ফুর্তভাবে কোনো নির্দিষ্ট কাজ গ্রহণ করে এবং সেই কাজটি সম্পাদন করে, তবে
এর দ্বারাই তাদের গণতান্ত্রিক ভাবধারা গড়ে উঠবে।

(২) সময়সূচির অন্তর্ভুক্তি : সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি
যাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষণীয় কাজের সঙ্গে সমান গুরুত্ব পায় তাই, বিদ্যালয়ের সময়সূচিতে
ওই কাজগুলির জন্য সময় নির্দিষ্ট করতে হবে। এর ফলে সবসময় শিক্ষার্থী এই কাজে অংশ নিতে
পারবে।

(৩) শিক্ষকদের হাতে ন্যস্ত : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি
পরিচালনার ভার অভিজ্ঞ শিক্ষকদের হাতে ন্যস্ত হওয়া উচিত। কারণ, এই ধরনের কাজ প্রতিটি
বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে প্রবর্তন করা ও সার্থকভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন
শিক্ষকরাই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরও সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির বিষয়ে আগ্রহ থাকা
খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ, তিনি এই কার্যাবলি সুষ্ঠু পরিচালনার উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের
শিক্ষকদের যথাযথ পরামর্শ দান করবেন।

(৪) শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক : প্রত্যেক শিক্ষার্থী
যাতে সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দেয় সেদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রম বিদ্যালয়ের
পাঠক্রমের পরিপূরক। ফলে এইসব কাজে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীদের নিজেদের নানা
ধরনের বিকাশ (যেমন—দৈহিক, বৌদ্ধিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক, সামাজিক) সুষ্ঠুভাবে বিকশিত
হওয়ার সুযোগ পাবে।

(৫) নির্দিষ্ট কয়েকটি কাজ গ্রহণ : বাস্তব পরিস্থিতির
কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের সহ-পাঠক্রমিক কাজগুলির থেকে অল্প কয়েকটি কাজকে বিদ্যালয়গুলিতে
গ্রহণ করা হলে এই কাজগুলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যাবে। এতে শিক্ষকদের ওপরও বেশি চাপ
পড়বে না, আবার নির্দিষ্ট কয়েকটি কাজ নেওয়ার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক ভালো ফলও পাওয়া
যাবে।

(৬) সুষ্ঠু পরিকল্পনার ব্যবস্থা : এইসব কাজগুলি বিদ্যালয়ে
পরিচালনার সময় সুষ্ঠু পরিকল্পনার ব্যবস্থা থাকা জরুরী। কারণ এই কাজগুলি পরিচালনা করার
সময় অনেক উপকরণের প্রয়োজন। যদি দেখা যায় কাজ শুরু করার পর আর্থিক কারণে বা অন্য
কোনো কারণে মাঝপথে কাজগুলি বন্ধ হয়ে যায়, তবে শিক্ষার্থীরা এইসকল কাজের প্রতি আগ্রহ
হারিয়ে ফেলবে।

(৭) কাজের মূল্যায়ন : শিক্ষার্থীদের সহ-পাঠক্রমিক
কাজের মূল্যায়ন হওয়া দরকার। প্রত্যেক রকম সহ-পাঠক্রমিক কাজের জন্য আলাদা আলাদা রেকর্ড
কার্ড থাকবে, যার দ্বারা শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষার্থী
কতটা উন্নতি করল সেটা জানতে না পারলে এই ধরনের কাজের কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না।

(৮) অভিভাবকদের অবগতির জন্য ব্যবস্থা : বিদ্যালয়ে বিভিন্ন
ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে কোন কোন
ধরনের সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করছে এবং ওইসকল কাজে কী কী ধরনের পারদর্শিতা
দেখাচ্ছে, এ সম্পর্কে পিতামাতা ও অভিভাবকদের সবসময় অবগত করতে হবে, যা একান্তই জরুরী।
এর দ্বারা শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অভিভাবকদের মনে গড়ে উঠবে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top