আরোহ যুক্তি। আরোহের স্বরূপ। সমস্ত
প্রশ্ন-উত্তর। দ্বাদশ শ্রেণি। দর্শন।
1. আরোহ অনুমান
কি?
➧ যে অনুমানে একজাতীয়
কয়েকটি বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃতির একরূপতা ও কার্যকারণ নীতির
উপর ভিত্তি করে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে বলে আরোহ অনুমান।
2. আরোহ অনুমানের
ভিত্তি কয় প্রকার ও কি কি?
➧ দুই প্রকার। যথা-
ক. আকারগত ভিত্তি। যেমন- প্রকৃতির একরূপতা ও কার্যকারণ নীতি।
খ. বস্তুগত ভিত্তি । যথা-পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ।
3. প্রকৃতির এক
রূপতা নীতি কি?
➧ যে নীতি অনুসারে
প্রকৃতি অবস্থায় সম অবস্থায় সম আচরণ করে তাকে প্রকৃতির এক রূপকথা নীতি বলে।
4. আরোহ অনুমানের
সমস্যা কি?
➧ আরোহ অনুমানে কীভাবে
এক জাতীয় বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা
হয় -এটাই আরোহের সমস্যা।
5. আরোহ সংক্রান্ত
লাফ কী?
➧ আরোহ অনুমানে বিশেষ
জ্ঞাত সত্য থেকে সামান্য সত্যে উপনীত হওয়ার মাঝে যে দূরত্ব বা ব্যবধান থাকে তাকে আরোহমূলক
লাফ বলে।
6. আরোহ অনুমানের
দুটি বৈশিষ্ট্য কি?
ক. আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি সর্বদা একাধিক আশ্রয় বাক্য থেকে নিঃসৃত হয়।
খ. এর সিদ্ধান্ত সর্বদা সামান্য বচন হয়।
7. আরোহ অনুমান
কয় প্রকার ও কি কি?
➧ আরোহ অনুমান দুই
প্রকার। যথা- তথাকথিত আরোহ অনুমান ও প্রকৃত আরোহ অনুমান।
তথাকথিত আরোহ অনুমান 3 প্রকার। যথা –
পূর্ণ গণনামূলক
আরোহ অনুমান, যুক্তি সাদৃশ্য মূলক আরোহ অনুমান, ঘটনা সংযোজক মূলক আরোহ অনুমান।
➧ প্রকৃত আরোহ অনুমান
3 প্রকার। যথা- বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান, অবৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান ও উপমা যুক্তি বা সাদৃশ্য
মূলক আরোহ অনুমান।
8. বৈজ্ঞানিক আরোহ
অনুমান কি?
➧ যে আরোহ অনুমানেএকজাতীয়
বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ করে প্রকৃতির একরূপতা ও কার্যকারণ নিয়মের
ভিত্তিতে একটি সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান
বলে।যেমন – রাম, শ্যাম যদু, মধু প্রমূখ ব্যক্তির মৃত্যু দেখে মনুষ্যত্ব ও মরনশীলতার
মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হলো “সকল মানুষ হয় মরণশীল”।
9. অবৈজ্ঞানিক
আরোহ অনুমান কি?
➧ যে আরোহ অনুমানে
কার্যকারণ সম্পর্কের উপর নির্ভর না করে প্রকৃতির একরূপতা নীতির ভিত্তিতে একজাতীয় বিশেষ
বিশেষ দৃষ্টান্ত দেখে অবাধ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা
করা হয় ,তাকে বলে অবৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান। যেমন- আমি আজ পর্যন্ত যতগুলো কাক দেখেছি সব কালো। সুতরাং সব কাক কালো।
10. বৈজ্ঞানিক
ও অবৈজ্ঞানিক আরোহের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
➧ বৈজ্ঞানিক আরোহের
সিদ্ধান্ত কার্যকারণ নিয়ম এর উপর প্রতিষ্ঠিত কিন্তু অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত অবাধ অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত।
11. বৈজ্ঞানিক
আরোহ অনুমান এর প্রধান লক্ষণ কি?
➧ আরোহ অনুমান সংক্রান্ত
লাফ।
12. লৌকিক আরোহকে
অবৈজ্ঞানিক বলে কেন?
➧ লৌকিক আরোহ অনুমানে
কার্যকারণ সম্পর্কের উপর নির্ভর না করে কেবল অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশেষ সত্য থেকে
সামান্য সত্যে যাওয়া হয় বলে একে অবৈজ্ঞানিক বলে।
13. লৌকিক আরোহের
ভিত্তি কি?
➧ অবাধ অভিজ্ঞতা।
14. উপমা যুক্তি
কি?
➧ যে যুক্তিতে দুই
বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে কতকগুলি বিষয়ের সাদৃশ্যের বৃদ্ধিতে যখন তাদের মধ্যে
কোন নতুন সাদৃশ্যের অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তাকেই উপমা যুক্তি বা সাদৃশ্য সূচক যুক্তি
বলে। যেমন রাম ও শ্যাম দুজনের ম্যালেরিয়া হয়েছে এখন রামের কুইনাইন খেয়ে সেরে গেছে
দেখে যদি সিদ্ধান্ত করি শ্যামও কুইনাইন খেলে ভালো হবে। এটি হলো উপমা যুক্তি দৃষ্টান্ত।
15. উপমা যুক্তির
ভিত্তি কী?
➧ সাদৃশ্য।
16. উপমা যুক্তি
কয় প্রকার ও কি কি?
➧ দুই প্রকার। যথা- ভালো/উত্তম/সবল উপমা যুক্তি। মন্দ বা দুষ্ট উপমা যুক্তি।
17. ভালো উপমা
যুক্তি কি?
➧ যে উপমা যুক্তিতে
দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে কতগুলি বিষয় এর সাদৃশ্য লক্ষ্য করে যখন তাদের
মধ্যে কোন প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তাকে ভালো
উপমা যুক্তি বলে। যেমন- রাম ও শ্যাম দুই বন্ধু। তারা দুজনেই সমবয়সি, একই সঙ্গে লেখাপড়া,
খেলাধুলা ইত্যাদি করে। দেখা গেল রামের ও শ্যামের ম্যালেরিয়া হয়েছে। এখন রামের কুইনাইন
খেয়ে সেরে গেছে আর এর থেকেই অনুমান করা হলো শ্যামও কুইনাইন খেলে ভালো হবে।
18. মন্দ উপমা
যুক্তি কি?
➧ যে উপমা যুক্তি
তে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে কতকগুলি বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ্য করে তার ভিত্তিতে
কোনো অপ্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বহীন সাদৃশ্যের অস্তিত্ব অনুমান করলে তাকে মন্দ উপমা যুক্তি
বলে। যেমন- মানুষের জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে। গাছের জন্ম, বৃদ্ধি ও বিনাশ আছে।
মানুষের চিন্তা
শক্তি আছে।
∴ গাছেরও চিন্তাশক্তি আছে।
19. আরোহ যুক্তিকে
কি বৈধ বা অবৈধ বলা যায়?
➧ না । এই যুক্তিকে
বৈধ বা অবৈধ বলা যায় না। একে ভালো বা মন্দ,
দোষ বা নির্দোষ ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়।
20. উপমা যুক্তি
কীরূপ বচন প্রতিষ্ঠা করে?
➧ বিশেষ বচন।
21. উপমা যুক্তির
মূল্য কিসের উপর নির্ভর করে?
➧ সাদৃশ্যের প্রাসঙ্গিকতার
উপর।
22. উপমা যুক্তিতে
মন্দ উপমা দোষ কখন হয়?
➧ সাদৃশ্যের প্রাসঙ্গিকতা
না থাকলে।
23. আরোহ অনুমানের
সিদ্ধান্তটি হল- সামান্য সংশ্লেষক বচন।
24. আরোহ অনুমানের
সমস্যাটি হল- সামান্যীকরণ।
25. আরোহ অনুমানের
সিদ্ধান্ত সর্বদা- সম্ভাব্য।
26. লৌকিক আরোহের
আকারগত ভিত্তি- দৃষ্টান্তের সংখ্যা।
27. লৌকিক আরোহ
কে শিশুসুলভ অনুমান বলেছেন- বেকন।
28. অবৈজ্ঞানিক
আরোহ অনুমানের অপর নাম- অপূর্ণ গণনামূলক আরোহ।
29. অবৈজ্ঞানিক
আরোহে শুধুমাত্র- সদর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়।
30. আরোহ অনুমান
সংক্রান্ত লাফ কথাটি বলেন- মিল।
31. উপমা যুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো- সাদৃশ্যের
প্রাসঙ্গিকতা।
32. উপমা যুক্তির
সিদ্ধান্তটি হবে- সম্ভাব্য।
33. যে যুক্তিতে
কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয় না তা হলো- উপমা যুক্তি।
34. প্রসক্তি সম্বন্ধ
থাকেনা যে যুক্তিতে তা হলো- আরোহ যুক্তি।
35. যে যুক্তির
গতি বিশেষ থেকে সার্বিকের দিকে হয় তা হলো- আরোহ যুক্তি
36. যে যুক্তির
সিদ্ধান্ত হেতু বাক্যকে অতিক্রম করে যায় তা হল- আরোহ যুক্তি।
37. উপমা যুক্তি-
বিশেষ সত্য থেকে বিশেষ সত্যে উপনীত হয়।
38. উপমা যুক্তির
মানদণ্ড কি?
a. সাদৃশ্যের প্রাসঙ্গিকতা
b. সাদৃশ্যের সংখ্যা যত বেশি হবে সিদ্ধান্ত ততবেশি সম্ভাব্য হবে।
39. বৈজ্ঞানিক
আরোহের লক্ষ্য হলো- কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয়।
40. সামান্যীকরণ
কি?
➧ বিশেষ সত্য থেকে
সামান্য সত্যে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে সামান্যীকরণ।